নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার আগে জরুরি ভিত্তিতে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫২ লাখ ১০ হাজার শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে ১০ লাখ ১ হাজার জনকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সে হিসাবে ৪২ লাখ ভ্যাকসিন কাভারেজের বাইরে থাকছেন বলে জানা গেছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, গত এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর আগামী ৩০ মার্চ সশরীরে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ক্লাস শুরুর আগে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীকে টিকা দেয়ার কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫ হাজার ৫২৪ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ হাজার শিক্ষকসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে। অনাবাসিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এ সুবিধার আওতায় আনা হয়নি।
অন্যদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩ লাখ ৫৪ হাজার শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ শিক্ষকের টিকাদান কার্যক্রম শেষ হয়েছে। এ মন্ত্রণালয়ের আওতায় দেশে বিদ্যমান অর্ধ লাখ কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকলেও এসব স্কুলের শিক্ষকরা টিকাদানের বিশেষ অগ্রাধিকার সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকছেন বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে, দেশে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫২ লাখ ১০ হাজারের বেশি হলেও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করোনার টিকাদান কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়েছে মাত্র চার ভাগের এক ভাগ।
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ লাখ শিক্ষার্থী, ৬০ হাজার শিক্ষক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ লাখ শিক্ষক, কিন্ডারগার্টেনের লক্ষাধিক শিক্ষক এবং কওমি মাদরাসার শিক্ষক ও কর্মচারীসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক শিক্ষার্থী মিলে শিক্ষা খাতের প্রায় ৪২ লাখ মানুষ এ সুবিধার বাইরে রয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মশিউর রহমান বলেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় শিক্ষক ও ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদানে এখনো বিশেষ অগ্রাধিকারের আওতায় আনা হয়নি। ৪০ ঊর্ধ্বে শিক্ষকরা নানাভাবে টিকা নিচ্ছেন। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার আগে সবাইকে টিকা দেয়া প্রয়োজন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। বর্তমান সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গাজীপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সবাইকে টিকা প্রদানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষক, কর্মচারী এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন কাভারেজের বাইরে রাখার ফলে শিক্ষাব্যবস্থার জন্য এক বছরেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হলে বর্তমান মহামারি আরও প্রকট আকার ধারণ করতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু হওয়ার আগে ১৮ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেককে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর প্রত্যেককে অবশ্যই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ব্যবহারে বাধ্য করতে হবে।’
এদিকে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুনরায় চালু করার ঘোষণায় বলেন, আমরা দেশের সব পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকা শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান করবো। আগামী ১৭ মে আবাসিক হল খোলার আগে এ কার্যক্রম শেষ করা হবে বলে তিনি ঘোষণা দেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় দুই লাখ শিক্ষককে টিকা প্রদান করা হয়েছে। বাকিদের ৩০ মার্চের আগে টিকা প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, যেসব কিন্ডারগার্টেন, বেসরকারি প্রাথমিক ও ইংরেজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের টিকা দেয়ার আওতায় আনতে সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তাদের নির্ধারিত সংখ্যা জানা না থাকায় এ বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি বলে তারা এ সুবিধা পাচ্ছেন না।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, শিক্ষাখাতে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে সবাইকে টিকাদানের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। আমাদের কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকায় একসঙ্গে সবাইকে এ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। ধাপে ধাপে সবাইকে টিকাদান করা হবে।
Discussion about this post