নিউজ ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় যাওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বই কেনা ও বই পড়ার পাশাপাশি সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার দিকে নজর দিতে বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেকে সুরক্ষিত রাখার মানে হলো অন্যদের স্বাস্থ্যকেও সুরক্ষিত রাখা।’
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা সবাইকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে এবং পরবর্তী প্রজন্মকে পড়ার বিষয়ে উৎসাহিত করার আহ্বান জানান, কেননা সাহিত্যের মাধ্যমে মানুষ সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং আরও অনেক কিছু জানতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী অনুবাদ সাহিত্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, নিজের মায়ের ভাষাকে জানা যেমন দরকার তেমনি অন্য ভাষা জানাটাও দরকার; সেজন্য অনুবাদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য বাংলা একাডেমিকে সবময়ই আমি অনুরোধ করেছি- অন্যান্য দেশের সাহিত্য যেন আমরা জানতে পারি। কারণ, সহিত্যের মধ্য দিয়েই মানুষের জীবনচর্চা জানা যায়, সংস্কৃতি ও ইতিহাস জানা যায়।
রাজনীতিকরা দিনভর বক্তৃতা করার পর সেখানে কিছুটা মন ছুঁয়ে গেলেও সাহিত্য মানুষের মধ্যে গভীর রেখাপাত করতে পারে। কাজেই, সাহিত্যের মাধ্যমে কোনো বার্তা দেওয়া গেলে সেটা মানুষের মনে দীর্ঘ স্থায়িত্ব লাভ করে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী, সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফিন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু লেখা ‘আমার দেখা নয়া চীন’ গ্রন্থের ইংরেজি ভার্ষণ (নিউ চায়না ১৯৫২)-এর মোড়ক উন্মোচন করেন।
বাংলা একাডেমির পরিচালক ও একুশে বইমেলা কমিটির পরিচালক ড. জালাল আহমেদ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রতি বছর ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের স্মরণে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে মাসব্যাপী বইমেলা শুরু হলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে এবার বিলম্ব হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ২৮ দিনব্যাপী বইমেলা ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত চলার কথা থাকলেও, করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে মেলাটি যে কোনো সময় বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২১-এর মূল প্রতিপাদ্য ‘বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও স্বাধীনতার সুবর্ণ-জয়ন্তী’।
এই প্রথমবারের মতো মেলায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে একটি প্রবেশ পয়েন্ট থাকবে এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের তিনটি প্রবেশ পয়েন্টের সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ (আইইবি)-র পাশে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে এর সংক্রমণ ঠেকাতে বইমেলায় নেওয়া হয়েছে তিন স্তরের নিরাপত্তা। প্রবেশ পথে থাকবে ‘নো মাস্ক-নো এন্টি’ সম্বলিত লোগো।
সব মিলিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তিনটি প্রবেশ পথ ও তিনটি বাহির পথ থাকবে। প্রত্যেক প্রবেশ পথে সুরক্ষিত ছাউনি থাকবে, যাতে বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যে মানুষ আশ্রয় নিতে পারেন। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে।
বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহীদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১৯ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল ২০২১ পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
দর্শনার্থীদের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সেখানে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা, হাত ধোয়া ও স্যানিটাইজিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে।
বইমেলা সবার জন্য কার্যদিবসগুলোতে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত এবং সরকারি ছুটির দিনগুলোতে সকাল ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। দুপুরের খাবার ও নামাজের জন্য এক ঘণ্টা বিরতি থাকবে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিষয়কেন্দ্রিক আলোচনার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উদ্যাপন এবং গত এক বছরে প্রয়াত বিশিষ্টজনদের জীবন ও কৃতি নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি ও পাঠ।
২০২০ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার’ এবং এ বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে ‘কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ প্রদান করা হবে।
মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফএম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।
Discussion about this post