শফিকুল ইসলাম
করোনায় কর্মসংস্থানকে অগ্রাধিকার দেওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে সর্বোচ্চ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে কৃষিতে। একইসঙ্গে গুরুত্ব দিয়ে সরকারের চলমান ১০টি মেগাপ্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এরইমধ্যে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপরদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বরাদ্দের ক্ষেত্রে তিনটি খাতকে গুরুত্ব দিয়ে তৈরি হচ্ছে নতুন বাজেট। এগুলো হচ্ছে- স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অপরদিকে কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ ও পাটখাতকে সর্বনিম্ন ভর্তুকি দিয়ে মোট বাজেটের সম্ভাব্য ৮ শতাংশ (প্রায় ৪৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা) ভর্তুকি ও প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এর মোট আর্থিক পরিমাণ ১ লাখ ২৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। এই ২৩ প্যাকেজের আকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এসব প্রণোদনা ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ। সুদ ৯ শতাংশের মধ্যে গ্রাহক দেয় ৪ থেকে সাড়ে ৪ শতাংশ, এবং বাকি সুদ সরকার পরিশোধ করছে। যার পুরোটাই ভর্তুকি। এর ফলে আগামী বছর সুদ পরিশোধে ভর্তুকি বাবদ সরকার বরাদ্দ রাখছে ২ হাজার কোটি টাকা।
মেগা প্রকল্পের বরাদ্দ
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নতুন ২০২১-২২ অর্থবছরের এডিপিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়ার শীর্ষে আছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প। এ প্রকল্পের জন্য আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
প্রায় ৬ হাজার ১৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্প রয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪) প্রকল্প। এ প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দা প্রায় ৫ হাজার ৫৩ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।
চতুর্থ অবস্থানে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে (লাইন-৬)। এতে বরাদ্দ প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ (প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৮২৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ৩ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধন) প্রকল্প পেয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পে ৩ হাজার ২২৭ কোটি ২০ লাখ টাকা, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্পে ৩ হাজার ৫১ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ (প্রথম পর্যায় ও প্রথম সংশোধিত) প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮২৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
ভর্তুকিতে কৃষি প্রথম, বিদ্যুৎ দ্বিতীয়
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আসন্ন বাজেটে (২০২১-২২) কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। ভর্তুকিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে বিদ্যুৎ খাত। এ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ৯ হাজার কোটি টাকা।
প্রাকৃতিক তরল গ্যাসে (এলএনজি) ভর্তুকি ৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। রফতানি খাতে আগামী বছর ভর্তুকি বাবদ সরকার বরাদ্দ দিচ্ছে ৭ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। এ ছাড়া খাদ্যে ৬ হাজার কোটি, রেমিট্যান্সে ৪ হাজার কোটি, প্রণোদনা প্যাকেজ ঋণের সুদ পরিশোধে ২ হাজার কোটি টাকা এবং সর্বনিম্ন ৫০০ কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ দিচ্ছে পাটখাতকে। এর বাইরে অন্যান্য সব খাত মিলিয়ে ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে ভর্তুকি ও প্রণোদনা বাবদ।
উল্লেখ্য, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকিতে ৩৮ হাজার ৬৪৮ কোটি এবং প্রণোদনায় ১০ হাজার ৩৮৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী আহম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, করোনা মোকাবিলাই সরকারের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার এসব খাতকে গুরুত্ব দিয়ে ভর্তুকি দিচ্ছে। courtesy- BANGLA TRIBUNE
Discussion about this post