অনলাইন ডেস্ক
করোনাকালে প্রকৃতির কদর বেড়েছে অনেকাংশেই। তবে পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে যুগ যুগ ধরে। প্রতিবছর ৫ জুন পালিত হয় বিশ্ব পরিবেশ দিবস। পরিবেশ রক্ষার সচেতনতা এবং নতুন পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে জাতিসংঘ যথাযথ গুরুত্ব সহকারে পরিবেশ দিবস পালন করে।
‘প্রতিবেশ পুনরুদ্ধার, হোক সবার অঙ্গীকার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ৫ জুন শনিবার বিশ্বব্যাপী পালিত হবে এ দিবস। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে করোনাভাইরাসের এই মহামারীর মধ্যে সবুজ পৃথিবী গড়ার ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭৪ সালে প্রথম এই দিবসটি অনুষ্ঠিত হয়। সামুদ্রিক দূষণ, মানব জনসংখ্যা, গ্লোবাল ওয়ার্নিং, বন্যপ্রাণের মতো পরিবেশগত বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির স্বার্থে দিবসটি পালন করা শুরু হয়।
বিশ্ব পরিবেশ দিবস জনসাধারণের কাছে পৌঁছানোর জন্য একটি বিশ্বজনীন প্ল্যাটফর্ম, যেখানে প্রতিবছর ১৪৩টিরও বেশি দেশ অংশ নেয়। প্রতিবছর পরিবেশের সুরক্ষায় একটি থিম এবং ফোরাম সরবরাহ করা হয়।
১৯৬৮ সালের ২০মে জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক পরিষদের কাছে একটি চিঠি পাঠায় সুইডেন সরকার। চিঠির বিষয়বস্তু ছিল প্রকৃতি ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে তাদের গভীর উদ্বেগের কথা। সে বছরই জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
পরের বছর জাতিসংঘের পক্ষ থেকে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা এবং সমাধানের উপায় খুঁজতে সদস্যরাষ্ট্রগুলোর সম্মতিতে সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১৯৭২ সালের ৫-১৬জুন জাতিসংঘ মানব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনটি ইতিহাসের প্রথম পরিবেশ-বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের স্বীকৃতি পায়।
১৯৭৩ সালে সম্মেলনের প্রথম দিন ৫জুনকে জাতিসংঘ ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। এর পরের বছর আমেরিকায় ১৯৭৪ সালে ‘অনলি ওয়ান আর্থ’ বা ‘একমাত্র পৃথিবী’ এই থিম নিয়ে প্রথম বিশ্ব পরিবেশ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
যদিও ১৯৭৪ সাল থেকেই পরিবেশ দিবস ধরাবাহিকভাবে পালিত হয়ে আসছে। তবে ১৯৮৭ সালে বিভিন্ন আয়োজক দেশ নির্বাচনের মাধ্যমে এই ক্রিয়াকলাপের কেন্দ্র ঘোরানোর ধারণাটি শুরু হয়।
পরিবেশ দিবস ২০২১ এর থিম
এ বছর পরিবেশ দিবসের থিম ‘বাস্ততন্ত্রের পুনরুদ্ধার করা’। এবার এই গুরুত্বপূর্ণ দিবস পালনের জন্য এবার আয়োজক দেশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে পাকিস্তানকে। ২০২০ সালে বিশ্ব পরিবেশ দিবসের থিম ছিল ‘সেলিব্রিটি বায়োডাইভারসিটি’।
বর্তমান অন্ধকারময় পরিস্থিতিতে অতীতকে ফেরানো সম্ভব নয় ঠিকই। তবে আমরা গাছ লাগাতে পারি, আমাদের আশেপাশের শহরকে আরও সবুজ রাখতে পারি। সবাই উদ্বিগ্ন না হয়ে পরিবেশের সচেতনতার বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠা উচিত।
পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব
বিশ্বের বুকে প্রকৃতির অবদান বোঝাতেই এই দিন পালন করা হয়। ইউনাইটেড নেশনস বা রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে প্রকৃতির অবদান সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে শুরু হয় এই উদযাপন। প্রকৃতিকে রক্ষা করতে পরিবেশবিদ ও বিভিন্ন সম্প্রদায়কে সচেতন করার চেষ্টা চালানো হয় এই নির্দিষ্ট দিনে।
প্রকৃতি কীভাবে আমাদের রক্ষা করছে তা বিশ্ববাসীকে বোঝানো হয় এই পরিবেশ দিবসে। পরিবর্তে প্রকৃতিকে রক্ষা করাও যে আমাদের কর্তব্য, সেই সম্পর্কে সচেতন করা হয় জনসাধারণকে। এই নির্দিষ্ট দিনে সরকারের পক্ষ থেকেও চলে পরিবেশ নিয়ে জনসচেতনার উদ্যোগ।
পরিবেশের উপর কতটুকু প্রভাব ফেলছে করোনা?
করোনাভাইরাসের প্রভাবে গোটা বিশ্ব এখন এক আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। তবে তা প্রকৃতির উপর ভালো প্রভাব ফেলেছে। লকডাউনের ফলে পানি ও বাতাসের দূষণ কমেছে। গাছপালাও সেজে উঠছে রঙিন ফলে-ফুলে।
গবেষকরা বলছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ বিগত দুই বছরে লকডাউনের মধ্যে বেশি গাড়ি চালাননি। ফলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ কমেছে। বায়ু দূষণের মাত্রা খানিকটা হলেও কমেছে। তবে মাস্ক, গ্লাভসসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক বর্জ্য সঠিক স্থানে না ফেলার কারণে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও এবারের ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবসে’ জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদফতর ও বন অধিদফতরের মাধ্যমে নানা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থান, স্থাপনা ও সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন স্থাপন করে পরিবেশ সংরক্ষণে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
Discussion about this post