অনলাইন ডেস্ক
দেশে কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের প্রকোপ। প্রতিদিনই বাড়ছে নতুন সংক্রমণ আর বাড়ছে মৃত্যু। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন জেলায় চলছে বিধিনিষেধ বা লকডাউন, ক্ষেত্রবিশেষ কঠোর লকডাউন। তারপরও নমুনা পরীক্ষার তুলনায় দেশে গড় শনাক্তের হার (বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ) ১৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। রোগীর চাপ বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। সবচেয়ে বেশি চাপ রয়েছে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিটে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ বিভাগের একটি বেডও খালি নেই। মা ও শিশু হাসপাতালের চিত্রও একই। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটের আইসিইউ বেড খালি আছে মাত্র তিনটি। তবে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি আছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বী।
তিনি বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউ থেকে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা বেশি ব্যবহার হয়। হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতালের (জেনারেল হাসপাতালের ইউনিট ২) ১০টি আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত আছে। প্রয়োজনে এগুলো চালু করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, করোনা মোকাবিলায় সিভিল সার্জন কার্যালয় প্রস্তুত আছে। কিন্তু মানুষ সচেতন না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কষ্টকর হবে। চট্টগ্রামে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোট ১০৭টি আইসিইউ বেড আছে। এগুলোর অর্ধেকে রোগী ভর্তি আছে, বাকিগুলো খালি। সরকারি হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা আছে।
স্বাস্থ্যবিধি না মানায় করোনা বাড়ছে দাবি করে সিভিল সার্জন বলেন, স্বাস্থ্যবিধির কোনো নির্দেশনাই মানুষ মানতে চায় না। ফলে সংক্রমণের হার আবারও আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বিশেষ করে এবার গ্রামাঞ্চলে আক্রান্তের হার তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, চট্টগ্রামে গত ১৪ জুন পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪২৭ জন। পরবর্তী ১০ দিনে আরও ৯৪৮ জন করোনায় আক্রান্ত হন। গত মে মাসে জেলাজুড়ে ৩ হাজার ৫১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, জেলায় শনাক্তের হার ২৮.০৭ শতাংশ। সে হিসেবে চলতি মাসের বাকি ছয় দিনে করোনা আক্রান্তের হার আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৫ দিনে হাসপাতালে করোনা রোগীর ভর্তির সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের বেশির ভাগেরই আইসিইউ দরকার পড়ছে। তাই এই বিভাগটিতে তুলনামূলক বেশি চাপ দেখা যাচ্ছে।
আইসিইউ প্রসঙ্গে কথা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের প্রধান ডা. আব্দুর রব মাসুমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাসপাতালে রোগী ভর্তির চাপ অনেক বেড়েছে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালের করোনা ইউনিটে মোট ৮২ জন নতুন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড আছে। বর্তমানে সবগুলোতেই রোগী ভর্তি। তাই নতুন করে অনেক রোগীর জন্য আইসিইউ সাপোর্ট জরুরি হলেও আমরা দিতে পারছি না।
তিনি আরও বলেন, ১৫ দিন আগেও রোগী ভর্তির চাপ কম ছিল। তখন ৩-৪টি আইসিইউ বেড খালি থাকত। বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) পর্যন্ত আইসোলেশন ইউনিটে ৬৪ জন রোগী ভর্তি আছেন। যেখানে ১০ দিন আগেও রোগী ছিল ৪০ জনের মতো।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭১ জন। হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ১০টি। এর মধ্যে রোগী ভর্তি আছে ৭টি বেডে।
ফৌজদারহাট বিআইটিআইডি হাসপাতালের ফোকাল পারসন ডা. মামুনুর রশীদ বলেন, কোভিড ইউনিটের ৩২টি শয্যার মধ্যে ২৮টিতে রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সরকারি এই হাসপাতালটিতে আইসিইউ শয্যা চালুর কথা রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে আইসিইউ শয্যা চালু হবে বলে আশা করছি। এখানে ৫ বেডের আইসিইউ ইউনিট চালু করা হবে।
বেসরকারি মা ও শিশু হাসপাতালের পরিচালক ডা. নুরুল হক বলেন, হাসপাতালটিতে বর্তমানে ৭৩ জন রোগী ভর্তি আছেন। আইসিইউ বেড আছে ১৬টি, সবগুলোতে রোগী ভর্তি। কখন একটি আইসিইউ বেড ফাঁকা হবে তার অপেক্ষায় থাকেন অনেক রোগী।
এদিকে সিএমপি বিদ্যানন্দ ফিল্ড হাসপাতালে করোনা ইউনিটের সবগুলো বেডে রোগী আছে বলে জানা গেছে। বেসরকারি হাসপাতাল চট্টগ্রাম পার্কভিউয়ের আইসিইউ ইউনিটেও বেড খালি নেই।
Discussion about this post