শিক্ষার আলো ডেস্ক
আজ শনিবার (২৬ জুন) ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান উপলক্ষ্যে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের একইঞ্চিও জমি অনাবাদী রাখা যাবে না। সে লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মানুষের পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতকরণেও কাজ করে যাচ্ছি। পাশাপাশি, আমি কৃষিজমি রক্ষা এবং পরিবেশ-সংরক্ষণের প্রতি মনোযোগী হওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাই। আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে টেকসই কৃষির উন্নয়নে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ১৪২৪’ প্রদান উপলক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। যাঁরা এ পুরস্কার পাচ্ছেন তাদেরও আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তির মধ্যে হওয়ায় অনুষ্ঠানটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীনের পর কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছিলেন। জাতির পিতা ২৫ বিঘা পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর মওকুফসহ উন্নত কৃষি উপকরণ সরবরাহের মাধ্যমে কৃষিবিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। ফলে কৃষিপণ্য উৎপাদনে অভূতপূর্ব সাফল্য আসে। জাতির পিতার নির্দেশে ১৯৭৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার’ প্রবর্তন করা হয়। পরবর্তীতে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন, ২০১৬’ প্রবর্তনের মাধ্যমে ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার’-কে আইনগত ভিত্তি প্রদান করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সবসময়ই কৃষিখাতকে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে আসছে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার-গঠনের পর কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ধারাবাহিকতাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সর্বপ্রথম ‘নতুন জাতীয় কৃষি সম্প্রসারণ নীতি, ১৯৯৬’ প্রণয়ন করে। এ নীতির ভিত্তিতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণের ফলে কৃষিতে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হয় এবং অতীতের খাদ্যঘাটতি মোকাবিলা করে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের কৃষিবান্ধব নীতির কারণে কৃষিতে অর্জিত সাফল্য বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল-মডেলে উন্নীত করেছে। বিগত ১২ বছরে দানাদার খাদ্যশস্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩১%, যার পরিমাণ ১০২ লাখ মে.টন। এছাড়া সবজি, ডাল, পেঁয়াজ, আলু এবং তৈলবীজের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৫৩৪%, ৪৪৩%, ২৪৮%, ৯৬% ও ৭৫%। এ সময়ে বিভিন্ন ফসলের ৬৫৬টি উন্নত/উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। সারের মূল্য কমিয়ে ডিএপি প্রতিকেজি ৯০ টাকা হতে ১৬ টাকা, টিএসপি ৮০ টাকা থেকে ২২ টাকা, এমওপি ৭০ টাকা থেকে ১৫ টাকা এবং ইউরিয়া ২০ টাকা হতে ১৬ টাকায় নির্ধারণ করা হয়েছে। বিভিন্ন ফসলের বীজ সরবরাহ করা হয়েছে ১৪ লাখ ১ হাজার ৫৮২ মে. টন। বিভিন্নখাতে উন্নয়ন-সহায়তা প্রদান করা হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির মাধ্যমে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন-প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রায় ৭০ হাজার কৃষিযন্ত্রপাতি কৃষকপর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে। কৃষিপুনর্বাসন/প্রণোদনা বাবদ ৯৩ লাখ ৬৫ হাজার কৃষকের মাঝে প্রায় ১ হাজার ৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিশেষ সুবিধার আওতায় ১০ টাকায় ৯৫ লাখ ৮১ হাজার ৬৪ কৃষকের ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে ৪% সুদে ১৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কৃষিঋণ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেচসুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে ১১.১২ লাখ হেক্টর, খালপুনঃখনন ১০ হাজার ৭৩৬ কি: মি:, সেচনালা-স্থাপন ২৬ হাজার ১১৪ কিলোমিটার, রাবার-ড্যাম নির্মাণ ১১টি, সেচ অবকাঠামোনির্মাণ ৯ হাজার ১৫টি, শক্তিচালিত পাম্পস্থাপন ৭ হাজার ৪৩৪টি, গভীর নলকূপস্থাপন ও পুনর্বাসন ১৯ হাজার ১০৮টি এবং জলাবদ্ধতা দূরীকরণ করা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫২৫ হেক্টর।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার গৃহীত কৃষি বান্ধব নীতি এবং কার্যক্রমের কারণে দানাদার খাদ্য-উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে পাট ও কাঁঠাল উৎপাদনে দ্বিতীয়, ধান ও সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে তৃতীয় এবং বদ্ধ-জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে। সকল কৃষিপণ্য উৎপাদনের হার দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি আশা করি, সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমরা অপুষ্টি-ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ-আধুনিক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
Discussion about this post