বন্ধুত্ব মানে ভরসা, ভালোবাসা, আর নির্ভরতা। বন্ধুত্বের কোনো বয়সসীমা নেই। সমবয়সীরা যেমন বন্ধু হতে পারেন, তেমনি পারেন বয়সে ছোট-বড়রাও। মনের মিল হলেই বন্ধু হওয়া যায়। বাবা-মা, ভাইবোন এমনকি সন্তানও খুব কাছের প্রিয় বন্ধু হয়ে উঠতে পারে। তাই তো বছরের একটি বিশেষ দিন নির্মল বন্ধুত্বের জন্য উৎসর্গ করা। আজ সেই দিন, বিশ্ব বন্ধু দিবস। প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বিশ্বজুড়ে এ দিবসটি পালন করা হয়।
ইতিহাস ঘেঁটে বন্ধু দিবসের সূচনার দুটি ঘটনা জানা যায়। প্রথম মত হলো, বন্ধু দিবস প্রথম উদযাপিত হয় যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে ১৯১৯ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববার ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তারা নিজেদের মধ্যে কার্ড ও উপহার বিনিময় করত। এভাবেই বন্ধু দিবসের উৎপত্তি।
আরেকটি মত হলো, ১৯৩৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে পরদিন তার এক বন্ধু আত্মহত্যা করেন। সেই দিনটি ছিল আগস্টের প্রথম রোববার। তখন থেকেই তার আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস ১৯৩৫ সালের আগস্ট মাসের প্রথম রোববারকে ‘বন্ধু দিবস’ হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বেশকিছু দেশ বন্ধু দিবস পালনের সংস্কৃতিকে সাদরে গ্রহণ করে। এভাবেই এ দিবস পালনের পরিসর বাড়তে থাকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে।
এই দিবসে বন্ধুরা পরস্পরের খোঁজ নেয়, শুভেচ্ছা বিনিময় করে ও উপহার দেয়। তবে মহামারির কারণে এখন কার্যত ঘরবন্দি মানুষ। প্রিয় বন্ধুর সঙ্গে সরাসরি দেখা না হলেও হয়তো ফোনে খোঁজ নেবেন অনেকে। স্মরণ করবেন প্রবাসী বন্ধুদেরও।
সরকারি এক কলেজের অধ্যাপক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আবাসিক হলে প্রতি রাতে এক বন্ধু খিচুড়ি রান্না করত। আমরা অনেকে হৈচৈ করে তা খেতাম। সেই নির্মল আনন্দের দিনগুলো সত্যিই ভুলে থাকা যায় না! তিনি বলেন, আজ বহুদিন পার হয়েছে। কিন্তু বন্ধুত্বের সেই সুতার টান এখনও অটুট। এখনও নিজের কোনো প্রয়োজনে, বিপদে সবার আগে বন্ধুদের কথাই মনে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অতিরিক্ত পরিচালক জেসমিন পারভীন বলেন, জীবনের অনেক দুঃসময় তিনি পার করেছেন প্রিয় বন্ধুদের হাত ধরে। যখন পুরো দুনিয়া ছিল তার বিপক্ষে, তখন কেবল বন্ধুরাই ছিল পাশে। খারাপ সময় চলে গেছে, কিন্তু সেই সময়ে পাশে থাকা প্রিয় বন্ধুদের ভোলেননি তিনি। ভুলবেন না কখনও। ইতালি প্রবাসী ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী বলেন, এই প্রবাস জীবনেও দেশে ফেলে আসা প্রিয় বন্ধুদের কথা কখনও ভুলি না। শত ব্যস্ততার মাঝেও ঠিকই তাদের খোঁজ-খবর নিই। তারাও নিয়মিত খবর নেয়। ফোনেই মাঝেমধ্যে আড্ডা আর খুনসুটিতে মেতে উঠি।
আসুন, আজকের দিনে সব বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানাই, তাদের খবর নিই। সবাই মিলে প্রত্যাশা করি- পৃথিবীর সব মানুষের বন্ধুত্ব অটুট থাকুক। সবার বন্ধুরা ভালো থাকুক এই মহামারীর সময়ে।
Discussion about this post