শিক্ষার আলো ডেস্ক
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী (জন্ম ২৩ জুন, ১৯৩৬) একজন বাংলাদেশি লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষক। দীর্ঘকাল তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি মার্কসবাদী চিন্তা–চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং নতুন দিগন্ত পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ১৯৮০–এর দশকে “গাছপাথর” ছদ্মনামে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সাপ্তাহিক প্রতিবেদন লিখে খ্যাতি অর্জন করেন।শিক্ষায় অবদানের জন্য তিনি ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩৬ সালের ২৩ জুন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বাড়ৈখালী গ্রামে। তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল, নটরডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ইংরেজি সাহিত্যে উচ্চতর গবেষণা করেছেন যুক্তরাজ্যের লিডস ও লেস্টার ইউনিভার্সিটিতে। পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন ১৯৫৭ সালে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখিতে সমান সক্রিয় ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রবন্ধ, অনুবাদ ও কথাসাহিত্য মিলিয়ে তার রচিত বই প্রায় ১১০টি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ শিক্ষকতা করার সময় তিনি মাসিক পরিক্রমা (১৯৬০-৬২), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পত্রিকা (১৯৭২), ত্রৈমাসিক সাহিত্যপত্র (১৯৮৪) ইত্যাদি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ‘নতুন দিগন্ত’ নামে সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করছেন এখনও।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী সাহিত্যকর্মে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলা একাডেমি স্বর্ণপদক’, ‘বিচারপতি ইব্রাহিম পুরস্কার’, ‘অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার’, ‘বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবুল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার’ সহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে বেশকিছু পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন। ১৯৯৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি।
শিক্ষকতার পাশাপাশি লেখালেখিতে সমান সক্রিয় ছিলেন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। প্রবন্ধ, অনুবাদ ও কথাসাহিত্য মিলিয়ে তার রচিত বই প্রায় ১১০টি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিকবার ‘উপাচার্য’ হওয়ার সুযোগ প্রত্যাখ্যান করা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কোনো হিসাব মেলাতে চান না, বরং যতটুকু অর্জন, তাতেই আছে তার সন্তুষ্টি। আর তার ভাবনায় এখনও রাষ্ট্র-সমাজ।
তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিজীবন নিয়ে আর দূরের কথা ভাবি না। আমি এখন হিসাব করি, প্রতিদিনের হিসাবই।
ব্যক্তি জীবনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে প্রশ্নে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি যে কাজগুলো করেছি, এগুলোই আমার করার কথা। কিন্তু এই কাজগুলোতে আরও মনোযোগ ও শ্রম দিতে পারলে হয়তো গুণগতভাবে আরও ভালো কিছু করতে পারতাম। লেখালেখি করা, সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ভাবা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক আন্দোলনে যোগদান করতে পেরেছি, এটাই আমার বড় অর্জন। জীবনের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে আমার কোনো আফসোস নেই।তবে সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো আমাকে এখনও ভাবায়।
“আমাদের রাষ্ট্রে যে পরিবর্তন হওয়ার কথা ছিল, সেই পরিবর্তন আসেনি। ব্রিটিশ আমল ও পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্র যেভাবে আমলাতান্ত্রিক ছিল এবং অর্থনৈতিকভাবে পুঁজিবাদমুখী ছিল, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পরও সেই ধারাই চলমান।”
মহামারীকাল শিক্ষা ব্যবস্থায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত এই অধ্যাপক।
“শিক্ষার্থীদের মনোজগতে, মানসিক স্বাস্থ্যে একটা বড় রকমের আঘাত এসেছে। সেটা কতটা দৃশ্যমান হবে, জানি না। তবে রাষ্ট্রের উচিৎ বিষয়টাতে গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষাকে যে গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ ছিল, সেটা দেওয়া হয়নি। বাজেটে শিল্প কারখানাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, এরকম শিক্ষাকেও গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ।”
আরও পড়ুন-বহুমাত্রিক বুদ্ধিবৃত্তির সাধক ‘ জ্ঞানের বাতিঘর’ শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবী ড. অনুপম সেন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ৮৬ বছরে পা দিয়েছেন। জীবনসায়াহ্নে এসে এক বৈশ্বিক মহামারীতে এখন ‘ঘরবন্দী’ অবস্থায় পড়াশোনা আর লেখালেখি করেই সময় কাটছে প্রবীণ এই শিক্ষকের। ৮৫তম জন্মবার্ষিকীতে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কেমন বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল সেই অনুভূতিও ব্যক্ত করেন তিনি। এ ছাড়া করোনাকালীন বাংলাদেশের নানা সংকট নিয়েও কথা বলেন বাম আদর্শে বিশ্বাসী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, যে বাংলাদেশের প্রত্যাশা ছিল সেটা ভিন্ন রকমের। আমরা যে বাংলাদেশের জন্য এত আন্দোলন সংগ্রাম করেছি, এমন একটা রাষ্ট্র চেয়েছিলাম, যা হবে গণতান্ত্রিক। মানুষের অধিকারের সঙ্গে থাকবে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ। সর্বস্তরে জনপ্রতিনিধিদের একটি কর্তৃত্ব থাকবে। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ছবি, সেটা পাওয়া গেল না। ব্রিটিশ আমল থেকে শুরু করে পাকিস্তান আমল থেকে এখন পর্যন্ত সেই আমলাতান্ত্রিকতা আর গেল না। পুরনো আমলাতান্ত্রিকতা আরও বেড়েছে বহুগুণে।
প্রবন্ধ-গবেষণা
- অন্বেষা(১৯৬৪) . * Introducing Nazrul Islam(১৯৬৫) *দ্বিতীয় ভুবন(১৯৭৩) *নিরাশ্রয় গৃহী(১৯৭৩)
- আরণ্যক দৃশ্যাবলী(১৯৭৪)*অনতিক্রান্ত বৃত্ত(১৯৭৪) *The Moral Imagination of Joseph Conrad(১৯৭৪)
- প্রতিক্রিয়াশীলতা, আধুনিক ইংরেজি সাহিত্যে(১৯৭৫) *শরৎপন্দ্র ও সামন্তবাদ(১৯৭৫) *The Enemy Territory(১৯৭৬) *আমার পিতার মুখ (১৯৭৬) *বঙ্কিমচন্দ্রের জমিদার ও কৃষক(১৯৭৬) *কুমুর বন্ধন(১৯৭৭) *উপরকাঠামোর ভেতরই(১৯৭৭) *বেকনের মৌমাছিরা(১৯৭৮) *স্বাধীনতা ও সংস্কৃতি(১৯৭৯)
- একই সমতলে(১৯৮০) *ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলা গদ্যের সামাজিক ব্যাকরণ(১৯৮০) *লেনিন কেন জরুরী (১৯৯২) *আপনজন (১৯৯৪) *অপরিচিত নেতা, পরিচিত দুর্বৃত্ত (১৯৯৪) *বাঙালীর জয়–পরাজয় (১৯৯৪) *লিঙ্কনের বিষণ্ণ মুখ (১৯৯৪) *এর পথ ওর প্রাচীর (১৯৯৫) *ভয় পেয়ো না, বেঁচে আছি (১৯৯৫) *মাঝখানের মানুষেরা (১৯৯৫) *দুই বাঙালীর লাহোর যাত্রা (১৯৯৬) *পতঙ্গ, ভৃত্য ও দৈত্য (১৯৯৬) *রাষ্ট্রের মালিকানা (১৯৯৭) *উপনিবেশের সংস্কৃতি (১৯৯৮) *শেক্সপীয়রের মেয়েরা (১৯৯৯)*বাঙালীর জাতীয়তাবাদ (২০০০) *বাঙালীর সময়–অসময় (২০০০) *ধ্রুপদী নায়িকাদের কয়েকজন (২০০০)*পুঁজিবাদের দুঃশাসন (২০০১) *আত্মপ্রতিকৃতি নয় (২০০২) *Middle Class and the Social Revolution in Bengal (২০০০)*An Unfimished Agenda; ইংরেজি সাহিত্যে ন্যায়–অন্যায় (২০০২)*ভূতের নয়, ভবিষ্যতের (২০০২)*বন্ধ করো না পাখা (২০০৪) *প্রভুর যত ইচ্ছা (২০০৫) *ভরসার জায়গাজমি (২০০৫) *বিচ্ছিন্নতার সত্য–মিথ্যা (২০০৬)
- গণতন্ত্রের অমসৃণ পথ (২০০৬) *দ্বন্দ্বের মেরুকরণ (২০০৬) *গণতন্ত্রের সন্ধানে (২০০৬) *বিরূপ বিশ্বে সাহসী মানুষ *জাতীয়তাবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও জনগণের মুক্তি
-
অনুবাদ
- এ্যারিস্টটলের কাব্যতত্ত্ব(১৯৭২)
- ইবসেনের বুনো হাঁস(১৯৬৫)
- হাউসম্যানের কাব্যের স্বভাব(১৯৬৫)
- হোমারের ওডেসি(১৯৯০)।
Discussion about this post