অনলাইন ডেস্ক
যশোর রোড। শুধু কোনও রাস্তার নাম নয়। ইতিহাসের অম্লান সাক্ষী। একাত্তরে দেশের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী। সেই যশোর রোডকে যেন মানুষের মনে থেকে মুছে না যায়, সেজন্য দুই দিনের এই পদযাত্রা শুরু করেছে সুবাতাস নামে একটি সংগঠন।
সোমবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে যশোর শহরের মুজিব সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু করেছেন সুবাতাস (সুন্দর বাংলাদেশ ও তারুণ্যের সমন্বয়) সংগঠনের সাত সদস্য। ঐতিহাসিক যশোর রোডের বাংলাদেশ অংশের ৩৮ কিলোমিটার পথ হেঁটে যাবেন তারা।
বহু বছরের পুরনো গাছের সারিময় এক সড়ক যশোর রোড। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের এক নীরব সাক্ষী হয়ে আছে যেন এই যশোর রোড ও দুই পাশের গাছগুলো। যখন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থীরা এই রাস্তা ধরে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছিল, তখন এই রাস্তাটিই ছিল তাদের শুধুমাত্র বেঁচে থাকার স্বপ্ন পূরণের পথ।
তাদের অনেকেই পথ চলার ক্লান্তি সহ্য করতে না পেরে ঢলে পড়েছিলেন মৃত্যুর কোলে। রাস্তার প্রতিটি ধূলিকণাও সেই হাজারো শরণার্থীদের ক্লান্তি, দুর্ভোগ ও বয়ে বেড়ানো স্বপ্নের সাক্ষী।
কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ যখন ভারতে এসেছিলেন, সেই যশোর রোডের শরণার্থীদের চোখের পানি নাড়া দিয়েছিল তাকেও। পশ্চিম বাংলার একটি শরণার্থী শিবির দেখতে গিয়েছিলেন তিনি, আর তারপরই রচনা করেন ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’ নামের ১৫২ লাইনের হৃদয়স্পর্শী কবিতা।
গিন্সবার্গের সেই কবিতায় সুর দিয়ে সেই গানকে বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে দেন বব ডিলান। একাত্তরের আগস্টে সাড়া জাগানো ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ গানটি প্রথম গাওয়া হয়।
শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, শের শাহ সূরির আমলে গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড বা জিটি রোডের মতোই যশোর রোড আরো অনেক ইতিহাসের অম্লান সাক্ষী। ভারতের কলকাতার শ্যামবাজার থেকে শুরু করে বারাসত, বনগাঁ, পেট্রাপোল, বেনাপোল হয়ে বাংলাদেশের খুলনা জেলার যশোরে শেষ হয়েছে রাস্তাটি।
ইতিহাস বলেছে, যশোরের তৎকালীন জমিদার কালী পোদ্দার ১৮৪০ সালে যশোর থেকে শ্যামবাজার পর্যন্ত এই রাস্তা তৈরি করেছিলেন। রাস্তার দু’পাশে কড়ই গাছ লাগিয়েছিলেন।
তাঁর উদ্দেশ্য ছিলো, তাঁর মা এবং অন্য পুণ্যার্থীরা শক্তিপীঠ কালীঘাটে তীর্থস্নানে যাওয়ার সময়, যেন দীর্ঘ পথশ্রমের ক্লান্তি কেটে যায় গাছের শীতল ছায়ায়।
মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর সড়কে মুক্তিকামী বাঙালির সেই বেদনাদায়ক পদযাত্রাকে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মনে করাতেই পদযাত্রা শুরু করেছে সুবাতাসের সদস্যরা।
পদযাত্রার আগে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির আহ্বায়ক হাসান আহমেদ বলেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে যশোর রোডের একটা ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। এই যাত্রার প্রধান উদ্দেশ্য, মুক্তিযুদ্ধে কোটি বাঙালির বেদনাদায়ক সেই পদযাত্রাকে স্মরণ।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচতে যুদ্ধের শুরু থেকে সেপ্টেম্বর মাসেও যশোর রোড ধরে কোটি মানুষ শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন ভারতে। তাদের সেই যাত্রাকে স্মরণ করতেই তাদের এই কর্মসূচি।
হাসান আহমেদ জানান, এই পদযাত্রা মঙ্গলবার শেষ হবে। প্রথমদিন যশোরের ঝিকরগাছা পর্যন্ত হাঁটবেন তারা। পরদিন সকালে আবার শুরু হয়ে বেনাপোলে গিয়ে শেষ হবে।
চলার পথে তারা ১১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবেন। সেখানে করোনা ও ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতার বিষয়ে কথা বলবেন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে মহান মুক্তিযুদ্ধে এই সড়কের গুরুত্ব বিষয়ে আলোচনা এবং মাস্কও স্যানিটাইজার সামগ্রী সরবরাহ করবেন।
পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন সুবাতাসের আহ্বায়ক সাংবাদিক ও সংস্কৃতিকর্মী হাসান আহমেদসহ ঢাকা থেকে আগত চলচ্চিত্রনির্মাতা শাহীনুর আক্তার শাহীন, সাংবাদিক মাহমুদ এইচ খান, কলেজছাত্রী মারজানা আক্তার, যশোরের সাংবাদিক নিশাত বিজয়, শিক্ষার্থী শাখাওয়াত খান ও মিঠুন চক্রবর্তী মাহি। যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ সুবাতাসের পদযাত্রার পৃষ্ঠপোষকতা করছেন।
Discussion about this post