নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন কারিকুলামে পাঠদান আগামী বছর থেকে শুরু হতে যাচ্ছে । প্রথমে দেশের বিভিন্ন স্থানের ২০০ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন কারিকুলামে পরীক্ষামূলকভাবে (পাইলটিং) পাঠদান শুরু হবে। এ জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এক হাজার ৬০০ জন শিক্ষককে।
জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পাঠদান আনন্দদায়ক ও চাপ কমাতে পাঠ্যবইয়ের কারিকুলামে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এ জন্য শুরুতে ১০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১০০ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে আগামী বছর থেকে নতুন শিক্ষাক্রমের পাইলটিং শুরু হবে। ২০২৩ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন শুরু হবে এ শিক্ষাক্রম। এরপর ২০২৪ সালে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণি এই শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে। ২০২৫ সালে যুক্ত হবে পঞ্চম ও দশম শ্রেণি। ২০২৬ সালে একাদশ ও ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণি যুক্ত হবে।
রূপরেখায় বলা হয়, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায় থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ে ৬০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৪০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন।
এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন থাকবে। অর্থাৎ পাঁচটি বিষয়ে ৪০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। আর বাকি সব নম্বরই থাকবে শিক্ষকদের হাতে।
নবম ও দশম শ্রেণিতে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিকবিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশ শিখনকালীন মূল্যায়ন ও ৫০ শতাংশ সামষ্টিক মূল্যায়ন থাকবে। এছাড়া জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য এবং সুরক্ষা, ধর্ম শিক্ষা এবং শিল্প সংস্কৃতি বিষয়ে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়ন হবে। ফলে এসব শ্রেণিতেও পাঁচটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বাকি সব মূল্যায়নই করবেন শিক্ষকরা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণিতে আবশ্যিক বিষয়ে ৭০ শতাংশ সামষ্টিক অর্থাৎ পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শ্রেণিকক্ষের মূল্যায়নে বার্ষিক পরীক্ষার চেয়েও বেশি নম্বর রাখা হয়েছে। আর দশম শ্রেণিতেও ৫০ শতাংশ। কিন্তু শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ বড় একটি চ্যালেঞ্জ মনে করছেন কেউ কেউ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (মাধ্যমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান সোমবার (২৫ অক্টোবর) বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে বই ও পরীক্ষা পদ্ধতি বদলে যাবে। শিখন কৌশলেও আসবে নানা পরিবর্তন। এখন যেভাবে মুখস্থ বিদ্যা চলছে, নতুন শিক্ষাক্রমে সেটি একেবারেই অনুপস্থিত থাকবে। অভিজ্ঞতাভিত্তিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে প্রণয়ন করা হয়েছে শিক্ষাক্রম।
তিনি বলেন, আগামী বছর পাইলটিং হিসেবে ১০০টি প্রাথমিক ও ১০০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন কারিকুলামে পড়ানো হবে। এর মধ্যে নতুন কারিকুলাম তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বর্তমানে মাধ্যমিকে এক হাজার ১০০ জন ও প্রাথমিকে ৫০০ জন শিক্ষককে মাস্টার ট্রেনিং দেওয়া হবে। সপ্তাহব্যাপী এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে ডিসেম্বরে। এসব শিক্ষকরা পরে নিজ নিজ জেলার শিক্ষকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেবেন।
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, পাইলটিং হিসেবে প্রথমে শহরের বড় বড় বিদ্যালয় নির্বাচন করা হবে না। শহর-গ্রাম ও হাওড়-চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার স্কুল নির্বাচন করা হবে। সেখানে প্রথম ও ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন কারিকুলামে করা হবে পাইলটিং। সেটি সফল হলে ধাপে ধাপে অন্য স্তরে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়ন করা হবে।
Discussion about this post