অনলাইন ডেস্ক
নতুন নতুন আরও কি পণ্য দেশে উৎপাদন এবং বিদেশে রফতানি করতে পারি, সেটা গবেষণা করে বের করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘কোন দেশে কি পণ্যের চাহিদা রয়েছে, সেটা অনুধাবন করে, সেই পণ্য আমরা বাংলাদেশ উৎপাদন করতে পারি কিনা সেটা আমাদের বিবেচনা করতে হবে। সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
মঙ্গলবার (২৬ অক্টোবর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট’ উদ্বোধনের সময় প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বিশ্বের ৩৮টি দেশের ৫৫২টি উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করেছে।
মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে উদযাপনের অংশ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথ উদ্যোগে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এই সামিট অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক পণ্য রয়েছে। আমরা পণ্য রফতানিও করছি, তবে ৭ দিনব্যাপী এই সম্মেলন আমাদের দেশের জন্য সম্ভাবনাময় ৯টি খাত যেমন- অবকাঠামো, তথ্য-প্রযুক্তি ও ফিনটেক, চামড়া, ওষুধ, স্বয়ংক্রিয় ও ক্ষুদ্র প্রকৌশল, কৃষিপণ্য ও খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, পাট-বস্ত্র শিল্পসহ অতি চাহিদা সম্পন্ন ভোগ্যপণ্য উৎপাদন এবং ক্ষুদ্রব্যবসাকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করেছে যা সময়োপযোগী। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে আগামী প্রজন্ম পাবে জাতির পিতার স্বপ্নের আত্মমর্যাদাশীল উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ।’
বেসরকারি উদ্যোক্তাদের এ ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের রফতানি পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়ানো প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। কারণ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকমের চাহিদা থাকে। আর বাংলাদেশে এমন একটা দেশ আমরা ইচ্ছা করলে সবকিছুই করতে পারি। এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। এটা জাতির পিতা বলে গেছেন।’
বিশ্ব ব্যাংকের ইনডেক্সে বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যেও পরিবেশগত অবস্থানের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোন দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ কতটা উন্নত তা বোঝাতে বিশ্ব ব্যাংকের Ease of Doing Business Index ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ২০১৯ সালে উক্ত ইনডেক্স-এ বাংলাদেশের অবস্থান আগের বছরের ১৭৬ হতে ১৬৮ তে উন্নীত হয়েছে, এবং ব্যবসার বিভিন্ন সূচক উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ ২০টি সংস্কারকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এই ইনডেক্সে বাংলাদেশের অবস্থান দুই অংকে অর্থাৎ ১০০ এর নিচে নামিয়ে আনার জন্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে বিশেষায়িত দল গঠন করে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম জোরদার করেছি।’
তরুণ সমাজকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বেসরকারি খাত ও বৈদেশিক বিনিয়োগ খাতে যাতে আরও বেশি করে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় সে লক্ষে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সারাদেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। আমাদের খাদ্য উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে, বৃদ্ধি করতে হবে।’
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করার লক্ষ্য অর্থনৈতিক অঞ্চল সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল অনুমোদন ইতিমধ্যেই আমরা দিয়েছি। তার মধ্যে নয়টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং আটাশটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ৪০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং আরো ৮ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ২০১ জন বিনিয়োগকারীর নিকট হতে ২৭.০৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ১.৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।’
বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সারাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা বিনিয়োগ করতে আসবেন তারা শুধু বাংলাদেশ পাবেন না আমি বলব দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোও তাদের একটা সুযোগ থাকবে এই বাজারগুলি ধরার এবং রফতানি করার। বাংলাদেশ প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যোগাযোগের একটা ব্রিজ হিসেবে গড়ে উঠবে ভবিষ্যতে, যেটা আমাদের দেশে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে সহায়তা করবে।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র থেকে ভিডিও কনফারেন্স গণভবনের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ, এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন, ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি রিজওয়ান রাহমানসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
Discussion about this post