নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার হাত থেকে সুরক্ষা দিতে রাজধানী ঢাকায় গত রোববার থেকে ১২ থেকে ১৭ বছরের স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকা প্রয়োগ শুরু হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ১২ থেকে ১৭ বছরের স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদানে জোর প্রস্তুতি চলছে চট্টগ্রামেও। ইতোমধ্যে জেলার সবকয়টি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৬ষ্ঠ থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার্থী পর্যন্ত (শ্রেণি ভিত্তিক) শিক্ষার্থীর মোট সংখ্যা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা শিক্ষা অফিসার মো. জিয়াউল হায়দার হেনরী।
তিনি বলেন, মাউশির নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা শিক্ষার্থীদের সংখ্যাটা চূড়ান্ত করে পাঠিয়েছি। এখন টিকার জন্য শিক্ষার্থীদের অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্ম নিবন্ধন সনদের মাধ্যমে এ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে।
এদিকে, স্কুল শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম সম্পর্কে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী জানান, টিকা প্রয়োগে শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে আনা হবে না। হাসপাতালের পরিবর্তে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ভিন্ন কোন কেন্দ্র নির্ধারণের নির্দেশনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া হবে জানিয়ে এর জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্র লাগবে বলেও জানিয়েছিলেন সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী।
এর প্রেক্ষিতে টিকাদান কেন্দ্র হিসেবে প্রাথমিকভাবে মহানগরের ৫টি স্কুল নির্বাচন করেছে জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়। স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে, আইস ফ্যাক্টরি রোডের চট্টগ্রাম কলজিয়েট স্কুল, একে খান মোড়ের মির্জা আহমেদ ইস্পাহানী উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টেশ্বরী সড়কের চট্টগ্রাম গ্রামার স্কুল, লালখান বাজার ইস্পাহানি মোড়ের স্যার মরিস ব্রাউন ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং বাংলাদেশ এলিমেন্টারি স্কুলের এমএম আলী রোড ও মেহেদিবাগের ক্যাম্পাস (দুটি ভেন্যু)। প্রাথমিকভাবে এই ৫টি স্কুলে ৬টি টিকাদান কেন্দ্র করার প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী বলেন, বাছাই করা ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সবকয়টিতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (এসি) সুবিধা রয়েছে। আর মির্জা আহমেদ ইস্পাহানী স্কুলেও এ সুবিধা রয়েছে।
কেবল কলজিয়েট স্কুলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ সুবিধা ছিল না। তবে এরই মাঝে চারটি এসির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এসি লাগানোর মাধ্যমে কলজিয়েট স্কুলও টিকাদানের জন্য প্রস্তুত করে তোলা হচ্ছে। সবকয়টি কেন্দ্রে এসি সুবিধা থাকা অন্তত দুটি কক্ষে টিকা প্রয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের টিকাদানে কেন্দ্র হিসেবে ৫টি স্কুল বাছাই করে তা প্রস্তাবনা আকারে জেলা প্রশাসক ও সিভিল সার্জন বরাবর পাঠানো হয়েছে বলেও জানান জেলা শিক্ষা অফিসার জিয়াউল হায়দার হেনরী।
জানতে চাইলে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী। গতকাল রাতে তিনি আজাদীকে বলেন, প্রস্তাবনা পেয়ে ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছি। কেন্দ্র হিসেবে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই চলছে। শুধু এসি সুবিধা থাকলেই হবেনা। জেনারেটর সুবিধাও অপরিহার্য। যাচাই-বাছাই শেষে জেলা প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে কেন্দ্র চূড়ান্ত করা হবে বলেও জানান সিভিল সার্জন ।
অন্যদিকে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরুর আভাস পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা অফিসার বলেন, ঢাকায় শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়েছে। এর মাঝে সপ্তাহ থেকে ১০ দিনের মধ্যে চট্টগ্রামেও শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হতে পারে বলে আমাদের জানানো হয়েছে। আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছি।
জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৩০টি। এর মাঝে স্কুলের সংখ্যা ৬৮২টি। আর স্কুল এন্ড কলেজের সংখ্যা ৪৮টি। মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে ১০৪টি কলেজ এবং ৩১৪টি মাদ্রাসা রয়েছে চট্টগ্রাম জেলায়।
Discussion about this post