আন্তর্জাতিক ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্তের পর দেশজুড়ে বেশ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে ভাইরাসের নতুন এই ধরনটি। এখন পর্যন্ত দেশটির ৫টি অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়েছে ওমিক্রন। এমনকি মিলছে সামাজিক সংক্রমণের ইঙ্গিতও। শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স এবং সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আলজাজিরার জানিয়েছে, শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়েছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। গত বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথমবারের মতো ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আক্রান্ত ওই ব্যক্তি দেশটির ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা এবং কিছুদিন আগে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছিলেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার পর একে একে কলোরাডো, মিনেসোটা এবং নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। আর পঞ্চম অঙ্গরাজ্য হিসেবে সর্বশেষ হাওয়াই-তেও ভাইরাসের এই নতুন ধরনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে।
ক্যালিফোর্নিয়া, কলোরাডো ও মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা একজন করে। তবে আলজাজিরা বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় আরও এক ব্যক্তির শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের সবাই করোনা টিকার ডোজ সম্পন্ন করেছেন এবং তাদের শরীরে মৃদু উপসর্গ রয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ায় প্রথম শনাক্ত রোগীর মতো কলোরাডো অঙ্গরাজ্যে শনাক্ত রোগী সম্প্রতি আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছিলেন এবং এখনও করোনার বুস্টার ডোজ নেননি।
অন্যদিকে মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী সামাজিক ভাবে সংক্রমিত যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রোগী বলে মনে করা হচ্ছে। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভ্রমণ করেননি। তবে সম্প্রতি তিনি একটি সম্মেলনে অংশ নিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। সেখানেই হয়তো কারও মাধ্যমে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন।
এদিকে হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে আক্রান্ত ব্যক্তিও সামাজিকভাবে ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ তিনিও দেশের বাইরে কোথাও ভ্রমণে যাননি। ওমিক্রনে আক্রান্ত হলেও তার শরীরে মৃদু উপসর্গ রয়েছে। অতীতে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, তবে এখনও টিকা নেননি।
এছাড়া নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যে পাঁচজনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার গভর্নর। তাদের মধ্যে লং আইল্যান্ডের বাসিন্দা একজন ৬৭ বছর বয়সী নারী এবং সম্প্রতি তিনি দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিরেছেন। কাশি ও মাথাব্যথার মতো হালকা উপসর্গ রয়েছে তার। এছাড়া বাকি চারজন নিউইয়র্ক শহরের বাসিন্দা। সর্বশেষ এই তথ্যসহ যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত ১০ জনের শরীরে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলো।
গত ২৪ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপরই তা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন বিশেষজ্ঞ দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত করোনার বি.১.১.৫২৯ নামক এই ভ্যারিয়েন্টকে ‘এ যাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
সারা বিশ্ব এখন কার্যত ওমিক্রন আতঙ্কে ভুগছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্তের পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ভাইরাসের এই ধরনটি বিশ্বের প্রায় ৩০ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ওমিক্রন নিয়ে সৃষ্ট আতঙ্কে আফ্রিকার দেশগুলোর বিরুদ্ধে একে একে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যাচ্ছে বিশ্বের বহু দেশ।
এদিকে আফ্রিকার দেশগুলোতে সম্প্রতি ভ্রমণ করেছেন এমন ব্যক্তিদের পাশাপাশি দেশের ভেতরে অবস্থান করেই ওমিক্রনে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য কঠোরভাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের এক দিনের মাথায় কোভিড পরীক্ষায় নেগেটিভ হতে হবে। বর্তমানে তিন দিনের মধ্যে এই পরীক্ষা করানোর নিয়ম চালু আছে। নতুন নিয়মটিও মার্কিন এবং বিদেশি নাগরিক উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
Discussion about this post