শিক্ষার আলো ডেস্ক
২০১২ সালে ১১ ডিসেম্বর (৯২ বছর) স্যান দিয়েগো, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পণ্ডিত রবি শংকর মৃত্যু বরণ করেন।
১৯৭১ সাল। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এ দেশের মানুষের ওপর চালিয়ে যাচ্ছিল জঘন্য অত্যাচার। লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে আশ্রয় নিচ্ছে সীমান্তের ওপারে ভারতে। বিপুলসংখ্যক শরণার্থীর ভরণপোষণ করতে গিয়ে ত্রাণসামগ্রীর অভাব দেখা দেয়। এ ছাড়াও ১৯৭০ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অধিকাংশ বাঙালিই ছিল অসহায়। সব মিলিয়ে বাঙালিরা ছিল এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্যে। যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বিশ্ববিবেক কেঁপে ওঠে তখন। তেমনি একজন ভারতের বিখ্যাত পণ্ডিত রবি শংকর।
পণ্ডিত রবি শংকর মুক্তিযুদ্ধের প্রতি বিশ্বজনমত গড়ে তোলা এবং শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা দেয়ার জন্য তার শিষ্য-বন্ধু বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড বিটলস-এর শিল্পী জর্জ হ্যারিসনকে নিয়ে একটা কনসার্টের আগ্রহ দেখান। বিটলস ভেঙে যাওয়ার পর যখন জর্জ হ্যারিসন একক ক্যারিয়ারের কথা ভাবছেন, তখনই বাংলাদেশের সঙ্গে গড়লেন নতুন এক আত্মিক সম্পর্ক। একাত্তরের উত্তাল দিনগুলোতে রবি শংকরের যন্ত্রণার সঙ্গী হয়ে কনসার্টের দায়িত্ব কাঁধে নেন। বাংলাদেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আর গণহত্যা তার হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে। বন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে জর্জ হ্যারিসন জোগাড় করেছিলেন বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের। নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেন ভাড়া নিয়ে নিজের ম্যানেজার এলন ক্লাইনকে পুরো অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেন। বাংলাদেশের যুদ্ধাবস্থা ও উদ্বাস্তুদের দুর্ভোগ সবাইকে উপলব্ধি করানোর জন্যই হ্যারিসন একাট গান লেখেন। তিনবার খসড়া শেষে তৈরি হয় সে গান : প্রগাঢ় বেদনা চোখে নিয়ে/ বন্ধু এসে বলে আজ তার/ সাহায্য যে কত দরকার/ যখন মৃত্যুপুরী তারই দেশ।
১৯৭১ সালের ১ আগস্ট ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে আয়োজন করেন ইতিহাস সৃষ্টিকারী কনসার্ট ফর বাংলাদেশ। এ অবিস্মরণীয় কনসার্টটি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে কালের সাক্ষী হয়ে আছে। কনসার্ট ফর বাংলাদেশ-এ হাজির হয়েছিলেন বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল ও রিঙ্গো স্টারের মতো শিল্পীরা। সুরের ঝঙ্কারে মাতিয়ে দিয়েছিলেন উপস্থিত শ্রোতাদের। রবি শঙ্কর ও জর্জ হ্যারিসনের প্রত্যাশা ছিল বাংলাদেশের উদ্বাস্তুদের জন্য কনসার্ট থেকে ২৫ হাজার ডলার তোলা যাবে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কনসার্ট ও অন্যান্য বিষয় থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১৮.৫১ মার্কিন ডলার, যা ইউনিসেফের মাধ্যমে শরণার্থীদের সাহায্যার্থে দেয়া হয়।
গানের একটি সংকলন কনসার্টের কিছুদিন পরই বের হয় এবং ১৯৭২ সালে এ অনুষ্ঠানের একটি চলচ্চিত্র প্রকাশিত হয়। এর থেকে আরো কিছু অর্থ আয় হয়।
বাংলাদেশের মানবতার কল্যাণে কত বড় কনসার্ট হলো পৃথিবীজুড়ে; কিন্তু সে সবেরই পথিকৃৎ হয়ে আছে ’৭১ সালের সেই “দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ”।
Discussion about this post