অনলাইন ডেস্ক
বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামালের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৯৪৭ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভোলার দৌলতখান উপজেলার হাজিপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে তার অসামান্য বীরত্বের জন্য ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন তিনি। দিবসটি পালনে কেক কাটা, দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।
মোস্তফা কামালের বাবা হাবিলদার মো. হাবিবুর রহমান ও মা মালেকা বেগম। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। তার স্ত্রীর নাম পিয়ারা বেগম। ছোট বেলা থেকেই স্কুলের পড়াশোনার চেয়ে ভালো লাগত সৈনিকদের কুচকাওয়াজ ও মার্চ করা। নিজেও স্বপ্ন দেখেন সৈনিক হওয়ার। ১৯৬৭ সালে কাউকে কিছু না বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন তিনি।
১৯৭১ সালে মোস্তফা কামাল ২৪ বছরের যুবক। ৭ মার্চ জাতির পিতার ঐতিহাসিক ভাষণ শুনে আন্দোলিত হন তিনি। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা যুদ্ধের ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েন বীরদর্পে।
১৯৭১ সালের ১৬ এপ্রিল সিপাহি মোস্তফা কামালের নেতৃত্বে একটি মুক্তিযোদ্ধাদের দল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে এগিয়ে আসা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে ঠেকানোর জন্য আখাউড়ার দরুইন গ্রামে অবস্থান নেয়। সংখ্যায় বেশি ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত পাকবাহিনীর সাথে মোকাবিলায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছিল অদম্য মনোবল। ১৮ এপ্রিল সকাল থেকেই আকাশে মেঘ ছেয়ে ছিল। বেলা ১১টার দিকে শুরু হলো প্রচন্ড বৃষ্টি। একইসাথে শত্রুর গোলাবর্ষণ। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলি ছুড়তে শুরু করলেন। শুরু হলো সম্মুখযুদ্ধ। মেশিনগান চালানো অবস্থায় এক মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি লাগে। মুহূর্তের মধ্যে মোস্তফা কামাল এগিয়ে এসে চালাতে লাগলেন স্টেনগান।
মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আধুনিক অস্ত্র ছিল না। সংখ্যায়ও অনেক কম তারা। পাকিস্তানি সৈন্যরা সংখ্যায় ছিল বেশি। ভারি অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত তারা। হয় সামনা-সামনি যুদ্ধ করে মরতে হবে, নয়ত পিছু হটতে হবে। কিন্তু পিছু হটতে হলেও সময় দরকার। ততক্ষণ অবিরাম গুলি চালিয়ে শত্রুদের আটকিয়ে রাখতে হবে। কে নেবে এ দায়িত্ব? এমন সময় আরও একজন মুক্তিযোদ্ধার বুকে গুলি বিঁধল। ততক্ষণে মোস্তফা কামাল সহযোদ্ধাদের সরে যেতে বললেন। পরিখার মধ্যে সোজা হয়ে চালাতে লাগলেন স্টেনগান। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ছেড়ে যেতে না চাইলে তিনি আবারও সবাইকে নিরাপদে যেতে বলেন। অবিরাম গুলি চালাতে থাকেন তিনি। তার গোলাবর্ষণে শত্রুদের থামকে যেতে হয়েছে। মারা পড়েছে বেশ কয়েকজন পাক সৈন্য। ততক্ষণে দলের অন্য সদস্যরা সাবধানে পিছু হটে যান।
Discussion about this post