শিক্ষার আলো ডেস্ক
প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বছরে প্রায় ৩৮ লক্ষ টাকা। এমন চাকরি কে না চায়। তবে চাকরিটা কিন্তু আমাদের দেশের নয় উন্নত দেশসমূহে। আর সেটি পেতে হলে আপনাকে একাধিক বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে যেতে হবে। উন্নত দেশসমূহে স্কুল শিক্ষকরা হচ্ছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাবান ব্যক্তি।
সেখানে সুযোগ-সুবিধা ও মর্যাদা পাওয়ার জন্য শিক্ষকদের রাস্তার মধ্যে অনশন করতে হয় না। বরং সেখানকার সবচেয়ে বেশি বেতনের চাকরি গুলো মধ্যে স্কুল শিক্ষকতা পেশা অন্যতম।
ফিনল্যান্ডের একজন প্রাথমিক শিক্ষককে প্রতি বছরে বেতন দেয়া হয় প্রায় ৪৫হাজার ১৫৭ ডলার বাংলাদেশি টাকায় যা প্রায় ৩৭ লক্ষ ৯২ হাজার টাকার সমান।সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে আপনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ১০জন গ্রাজুয়েট এর মধ্যে একজন হতে হবে। তা না হলে আবেদন করার সুযোগ থাকবে না।
আবেদন করার পর প্রত্যেক প্রার্থীকে ১ বছর সময় ধরে কোন না-কোন স্কুলের সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে। এ সময় চলে তাদের নানা ধরনের প্রশিক্ষণ। সেইসাথে স্কুলে ভালো শিক্ষকদের সাথে থেকে ক্লাস নেয়ার পদ্ধতি স্বচক্ষে দেখতে হয়। কিছুদিন নিজেও ক্লাস নিতে হয়। ক্লাস নেওয়ার সময় স্কুলের শিক্ষকরা আপনার ক্লাস পর্যবেক্ষণ করবেন।
আবার অনেক সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রতিনিধিরাও এসে ক্লাসগুলো মূল্যায়ন করেন।মূল্যায়নের সময় দেখা হয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস গুলো কে কতটা আনন্দের সাথে নিচ্ছেন,গ্রুপ ওয়ার্ক গুলো কেমন হচ্ছে? শিক্ষার্থীরা ক্লাসে কতটুকু মনোযোগী ইত্যাদি ইত্যাদি।
এক বছর পর ঐ ১০% শিক্ষার্থীকে ভাইবা, লিখিত ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয় ।পরীক্ষায় পাশ করার পর বাছাই করে ১% শিক্ষার্থীকে প্রাথমিক শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী প্রজন্মের সেরা প্রশিক্ষণার্থী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ পান। সর্বশেষে যারা থাকেন তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন । তারমানে সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়া থেকে অনেক সহজ।
জাপানে শিক্ষক নিয়োগে প্রদানে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতার উপরও জোর দেওয়া হয়। সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের ভোটে।নতুন আগ্রহী শিক্ষক ক্লাশে এসে কতটা চিত্তাকর্ষকভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াতে পারছেন সেটাই ছাত্র-ছাত্রীদের বিবেচ্য বিষয়। আবার সিনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে বসে আগ্রহী শিক্ষকদের ক্লাস করে থাকেন । তারপর সিনিয়র শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেন।
চীনে শিক্ষকদের নিয়োগে কয়েক ধাপ পরীক্ষা দিতে হয়। পর্যায়ক্রমে সকল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীরা চূড়ান্ত নিয়োগ পান। আর এখানেও একজন অভিজ্ঞ ও প্রবীণ স্কুল শিক্ষককে ডক্টর উপাধিতে ভূষিত করা হয় তা তিনি প্রাথমিক শিক্ষকই হোন বা মাধ্যমিক শিক্ষক হোন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হোন না কেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার এক্ষেত্রে টু বৈচিত্র্যপূর্ণ। বিভিন্ন অঙ্গ রাজ্যে ভিন্ন ভিন্ন নিয়োগ। যোগ্যতার ভিত্তিতে সেখানে ভিন্ন ভিন্ন ক্যাটাগরিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে মজার বিষয় হচ্ছে যেখানে যেই শিক্ষকই হোক না কেন বেতনে খুব একটা পার্থক্য নেই। তবে যোগ্যতার মানদণ্ডে বেতন দেওয়া হয় সেখানে।
লুক্সেমবার্গ শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্বে সবচেয়ে প্রশংসনীয় ও সেরা। শিক্ষকদের সেরা সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় হচ্ছে সুইজারল্যান্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরাদের সেরা শিক্ষার্থীরা সেখানে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করার সুযোগ পান। নানা পরীক্ষা প্রশিক্ষণ ও মৌখিক সাক্ষাৎকার দিয়ে পেতে হয় চাকরি।
সিঙ্গাপুর শিক্ষক নিয়োগ পেতে হলে আপনাকে ৪ বারের বেশি পরীক্ষা দিতে হবে। সিঙ্গাপুরের একজন প্রাথমিক শিক্ষার্থীর অভিভাবক তার সন্তানের পিছনে প্রতি বছরই ৭১ হাজার ডলার খরচ করেন।
মূলত সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীনের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া পশ্চিমাদের থেকে অনেক উন্নত। শিক্ষকদের সম্মান দেয়ার ক্ষেত্রেও তারা অনেক উঁচুতে অবস্থান করছেন।
Discussion about this post