শিক্ষার আলো ডেস্ক
কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের ৮৭তম জন্মদিন আজ। ১৯৩৫ সালের এই দিনে রাজধানী ঢাকার বিক্রমপুরে মামার বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর গ্রামে। কথাসাহিত্যিক হিসেবে সমধিক পরিচিত হলেও রাবেয়া খাতুন এক সময় শিক্ষকতাও করেছেন।
সাংবাদিকতার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন দীর্ঘদিন। ইত্তেফাক, সিনেমা পত্রিকা ছাড়াও তার নিজস্ব সম্পাদনায় পঞ্চাশ দশকে বের হতো ‘অঙ্গনা’ নামের একটি মহিলা মাসিক পত্রিকা।
তিনি একশ’রও বেশি বই প্রকাশ করেন। তার প্রথম উপন্যাস ‘মধুমতী’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। এরপর একে একে প্রকাশিত হয় অনন্ত অন্বেষা, রাজারবাগ শালিমারবাগ, মন এক শ্বেতকপোতী, ফেরারী সূর্য, অনেকজনের একজন, জীবনের আরেক নাম, দিবস রজনী, সেই এক বসন্তে, মোহর আলী, নীল নিশীথ, বায়ান্ন গলির এক গলি, পাখি সব করে রব প্রভৃতি।
তার উল্লেখযোগ্য গল্পগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- মধ্যরাতে সাত মাইল, লালচিঠি, মুক্তিযুদ্ধের গল্পসমগ্র ও তোমার কাছে যাবো বলে। কথাশিল্পী রাবেয়া খাতুনের সাহিত্যকীর্তির আরেক উজ্জ্বল নিদর্শন ভ্রমণসাহিত্য। হে বিদেশি ভোর, মোহময়ী ব্যাংকক, টেমস থেকে নায়াগ্রা, কুমারী মাটির দেশে, হিমালয় থেকে আরব সাগরসহ বহু ভ্রমণকাহিনী রচনা করেছেন তিনি।
রাবেয়া খাতুন রচিত মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মেঘের পর মেঘ’ অবলম্বনে বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার চাষী নজরুল ইসলাম ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন চলচ্চিত্র ‘মেঘের পরে মেঘ’ এবং ২০১১ সালে তার আরেকটি জনপ্রিয় উপন্যাস ‘মধুমতী’ অবলম্বনে পরিচালক শাহজাহান চৌধুরী একই শিরোনামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এছাড়াও অভিনেত্রী মৌসুমী ২০০৩ সালে তার লেখা ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ অবলম্বনে একই নামে নির্মাণ করেন একটি চলচ্চিত্র।
সাহিত্যচর্চার জন্য পুরস্কার হিসেবে পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৯৩), বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৩), নাসিরুদ্দিন স্বর্ণ পদক (১৯৯৫), হুমায়ূন স্মৃতি পুরস্কার (১৯৮৯), কমর মুশতারী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৪), বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কার (১৯৯৪), শের-ই-বাংলা স্বর্ণ পদক (১৯৯৬), ঋষিজ সাহিত্য পদক (১৯৯৮), লায়লা সামাদ পুরস্কার (১৯৯৯) ও অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৯)।
ছোট গল্পের জন্য পেয়েছেন নাট্যসভা পুরস্কার (১৯৯৮)। সায়েন্স ফিকশন ও কিশোর উপন্যাসের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন শাপলা দোয়েল পুরস্কার (১৯৯৬), অতীশ দীপঙ্কর পুরস্কার (১৯৯৮), ইউরো শিশু সাহিত্য পুরস্কার (২০০৩)। ছোটগল্প ও উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ হয়েছে প্রেসিডেন্ট (১৯৬৬), কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি (২০০৩), মেঘের পরে মেঘ (২০০৪), ধ্রুবতারা ও মধুমতী (২০১০)।
টিভি নাটকের জন্য পেয়েছেন টেনাশিনাস পুরস্কার (১৯৯৭), বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার, বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টাস অ্যাসোসিয়েশন মিলেনিয়াম অ্যাওয়ার্ড (২০০০), টেলিভিশন রিপোর্টাস অ্যাওয়ার্ড (২০০০)সহ তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করেছেন।
রাবেয়া খাতুন ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারি মৃত্যু বরণ করেন। তার জন্মদিন উপলক্ষে ‘রাবেয়া খাতুন স্মৃতি পরিষদ’-এর উদ্যোগে দুস্থ ও শিশুদের মাঝে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হবে।
Discussion about this post