নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতক পর্যায়ে আসন কমানো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ সংক্রান্ত একটি সুপারিশও জমা দিয়েছে ডিনস কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদার কথা বিবেচনা করে দক্ষ জনবল তৈরি করতেই এ উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।
সুপারিশ অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি আসন কমছে কলা অনুষদে। আর বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে আসন বাড়ানো হচ্ছে। সুপারিশ আমলে নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন কমবে ১ হাজার ১৫টি।
ডিনস কমিটির প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কলা অনুষদের বেশির ভাগ বিভাগেই আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। কলা অনুষদে বিভাগ রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে ১৬টিতেই আসন কমানোর সুপারিশ করেছে ডিনস কমিটি। একটি বিভাগে আসন বাড়ছে ৭টি।
আসন কমছে বাংলা বিভাগে। বিভাগটিতে ১৩২ থেকে ১২০টি, ইংরেজিতে ১৫০ থেকে ১২০টি, আরবিতে ১৫০ থেকে ১০০টি, ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে ১০০ থেকে ৭৫টি, উর্দুতে ১১০ থেকে ৭০টি, পালি ও বুড্ডিস্ট স্টাডিজে ৯০ থেকে ৫০টি, ইতিহাসে ১৩০ থেকে ১১০টি, দর্শনে ১৭০ থেকে ১২০টি, ইসলামিক স্টাডিজে ১৮৫ থেকে ১০০টি, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগে ১৬০ থেকে ১১০টি, তথ্যবিজ্ঞান ও প্রন্থাগার ব্যবস্থাপনায় ৭৫ থেকে ৬৫টি, ভাষাবিজ্ঞানে ৯০ থেকে ৭০টি, সংগীতে ৮০ থেকে ৬০টি, বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতিতে ১০০ থেকে ৬০টি ও নৃত্যকলায় ৩৫ থেকে ৩০টি আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ৭টি আসন বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজে। বিভাগটিতে আগে আসন ছিলো ১৮টি। ডিনস কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন হলে কলা অনুষদে আসন কমবে ৫১৫টি। কলা অনুষদে আসন ছিলো ১ হাজার ৮৭৫টি।
ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে বর্তমানে আসন রয়েছে ১২৫০টি। অনুষদটিতে ২০০ আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, মার্কেটিং, ফাইন্যান্স ও ম্যানেজমেন্টে ৩০টি করে আসন কমানোর কথা বলা হয়েছে। বিভাগগুলোতে আসন ছিলো ১৮০ করে। ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগে ১৫০ থেকে ১০০টি, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে ১১৫ তেকে ১০০টি, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেসেও ১১৫ থেকে ১০০টি এবং ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্টে ১১৫ থেকে ১০০টি আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। এই অনুষদের একটি মাত্র বিভাগে ১৫টি আসন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে ডিনস কমিটি। অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগে ৩৫ থেকে আসন বাড়িয়ে ৫০টি করা হচ্ছে।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদেও কমছে আসন। অনুষদটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ২০০ থেকে ১৫০টি, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ১০০ থেকে ৮০টি, সমাজবিজ্ঞানে ১৮৫ থেকে ১৫০টি, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৬৬ থেকে ৬০টি, লোকপ্রশাসনে ১১০ থেকে ৯০টি, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়নে ৬০ থেকে ৪০টি, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগে ৪৫ থেকে ৪০টি, ক্রিমিনোলজিতে ৬০ থেকে ৫০টি, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারসে ৪০ থেকে ৩০টি ও জাপানিজ স্টাডিজে ৬০ থেকে ৫০টি আসন কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে। আসন বাড়ছে তিনটি বিভাগে। অর্থনীতি বিভাগে ১২৮ থেকে ১৩০টি, পপুলেশন সায়েন্সেসে ২৫ থেকে ৪০টি ও ডেভেলেপমেন্ট স্টাডিজে ২৮ থেকে ৪০টি আসনে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে। বাকী বিভাগগুলো নৃবিজ্ঞান, টেলিভিশন-ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন স্টাডিজে আসন অপরিবর্তিত রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।
আইন অনুষদে আসন ১৩০ থেকে আসন সংখ্যা কমিয়ে ১১০ করার সুপারিশ করা হয়েছে। চারুকলা অনুষদের শুধু অংকন ও চিত্রায়ণ বিভাগে শিক্ষার্থী আসন সংখ্যা ৩০ থেকে কমিয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাকী বিভাগগুলোতে আসন সংখ্যা অপরবির্তিত থাকবে।
কলা, সামাজিক বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদে আসন কমানোর সুপারিশ করলেও বিজ্ঞান অনুষদগুলোতে আসন বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে ডিনস কমিটি। বিজ্ঞান অনুষদে বাড়ছে ২টি আসন। এই অনুষদের চারটি বিভাগেই আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও পরিসংখ্যার বিভাগে আসন ৮৮ থেকে বাড়িয়ে ৯০ করার কথা বলা হয়েছে।
জীববিজ্ঞান অনুষদের জিন প্রকৌশল ও জীব প্রযুক্তি বিভাগে আসন সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করার সুপারিশ করা হয়েছে। এই অনুষদের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে ১০০টি, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগে ৭৫ থেকে ৭০টি, প্রাণিবিদ্যায় ১০০ থেকে ৮০টি ও মনোবিজ্ঞানে ১৩০ থেকে আসন কমিয়ে ৮০টি করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে। বাকী তিনটি বিভাগে (প্রাণরাসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, অণুজীব বিজ্ঞান ও মৎস্য বিজ্ঞান বিভাগে আসন সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকবে।
আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেস অনুষদের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগে ২৫ থেকে ৪০টি, দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনায় ৩০ থেকে ৪০টি, আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগে ২০ থেকে ২৫টি আসন বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ভুগোল ও পরিবেশ বিভাগে ১২০ থেকে কমিয়ে ৮০টি এবং ভূতত্ত্ব বিভাগে আসন অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে। ফার্মেসি অনুষদে ৬৫ থেকে আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ৭৫ করা হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ২৫ থেকে বাড়িয়ে ৩০, রোবোটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে আসন সংখ্যা ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ করার কথা বলা হয়েছে। বাকি বিভাগগুলোতে আসন অপরিবর্তিত থাকবে।
১০টি ইনস্টিটিউটের মধ্যে পাঁচটিতে আসন অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে। কমানো হচ্ছে তিনটি ইনস্টিটিউটে আর বাড়ানো হচ্ছে দুইটিতে। আসন কমছে শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে। সেখানে ১৬০ থেকে কমিয়ে আসন ১২০ করা হচ্ছে। সমাজকল্যাণ ও গবেষণায় ১০৫ থেকে কমিয়ে ১০০ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটে ১৬০ থেকে কমিয়ে আসন ১৪০ করা হবে। আসন বাড়ছে পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে। ইনস্টিটিউট দুইটিতে আসন বাড়ছে যথাক্রমে ৫টি ও ২০টি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, আসন পুনর্নির্ধারনের বিষয়টি যৌক্তিক কারণেই করা হচ্ছে। যেসব বিভাগগুলোতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাহিদা বেশি সেগুলোতে বাড়ানো হয়েছে আসন। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করা এবং মানসম্পন্ন ও দক্ষ জনবল তৈরির লক্ষ্যে এই পরিবর্তন আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি। সুপারিশটি পরবর্তীতে আলোচনার জন্য ভর্তি কমিটি, একাডেমিক কাউন্সিলে উঠবে। পরে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সুপারিশটি চূড়ান্ত হবে।
Discussion about this post