শিক্ষার আলো ডেস্ক
ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষাথী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির দুই শিক্ষিকা ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা হলেন, সিনিয়র শিক্ষিকা লুৎফুন নাহার করিম এবং প্রভাতী শাখার খণ্ডকালীন শিক্ষিকা আফসানা আমাতু রাব্বী। সাক্ষ্যে তারা দুজনই দাবি করেছেন, তারা অরিত্রীর সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেননি।
সোমবার ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. রবিউল আলমের আদালতে সাক্ষ্য দেন তারা।
এ নিয়ে মামলার ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আটজনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। আগামী ৩০ জানুয়ারি মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ঠিক করেছেন আদালত।
মামলায় ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে আটজনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আর বেশি সাক্ষী আদালতে হাজির করা হবে না বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) সালাহউদ্দিন আহমেদ। এর আগে এই মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন অরিত্রীর বাবা দিলীপ অধিকারী ও অরিত্রীর মা বিউটি অধিকারী।
সাক্ষ্যে লুৎফুন নাহার করিম বলেন, ২০১৮ সালের ২ ডিসেম্বর তিনি এবং আফসানা আমাতু রাব্বী ১২৮ নম্বর শ্রেণিকক্ষে পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলেন। স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী, পরীক্ষার কেন্দ্রে কোনোরকম ডিভাইস বা মোবাইল আনা নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও অরিত্রী মোবাইল নিয়ে আসে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আনুমানিক ১০ মিনিট আগে নকল করা অবস্থায় তারা অরিত্রীর কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার করেন। মোবাইলে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করা ছিল। বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল পাওয়ায় তারা পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে নিয়োজিত শিক্ষক জাহানারা শিরিনের কাছে উত্তরপত্র ও ডিভাইস জমা দিয়ে আবার পরীক্ষার হলের ডিউটিতে চলে যান। পরীক্ষা শেষে অরিত্রী মোবাইল চায়নি। ওর সঙ্গে কোনোরকম অশোভন আচরণ করা হয়নি। অরিত্রী শান্ত ছিল। তারপর তারা খাতা ও প্রশ্ন জমা দিয়ে বাসায় চলে যান।
আফসানা আমাতু রাব্বী বলেন, তিনি এবং লুৎফুন নাহার করিম ওই রুমে পরীক্ষার দায়িত্বে ছিলেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে তারা অরিত্রীকে মোবাইল দেখে উত্তর করার সময় তার কাছ থেকে মোবাইল উদ্ধার করেন। মোবাইলে বার্ষিক পরীক্ষার সিলেবাস ডাউনলোড করা ছিল। তারা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণকারী শিক্ষিকার কাছে অরিত্রীর মোবাইল ও উত্তরপত্র জমা দেন। পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই অরিত্রী হল থেকে চলে যায়।
শুনানির সময় সোমবার আদালতে হাজির ছিলেন তারা। মামলার অভিযুক্ত দুই আসামি ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস ও শাখাপ্রধান জিনাত আখতার। তারা দুজন এখন জামিনে আছেন।
এর আগে অরিত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় ২০১৮ সালের ৪ ডিসেম্বর রাজধানীর পল্টন থানায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ-শিক্ষকসহ তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন। আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলায় ২০১৯ সালের ১০ জুলাই দুই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, পরীক্ষা চলাকালে শিক্ষক অরিত্রীর কাছে মোবাইল ফোন পান। মোবাইলে নকল করেছে এমন অভিযোগে অরিত্রীকে তার মা-বাবাকে নিয়ে স্কুলে যেতে বলা হয়। তিনি (দিলীপ অধিকারী) স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে স্কুলে গেলে ভাইস প্রিন্সিপাল তাদের অপমান করে কক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। মেয়ের টিসি (স্কুল থেকে ছাড়পত্র) নিয়ে যেতে বলেন। পরে প্রিন্সিপালের কক্ষে গেলে তিনিও একই রকম আচরণ করেন। এ সময় অরিত্রী দ্রুত প্রিন্সিপালের কক্ষ থেকে বের হয়ে যায়।পরে বাসায় গিয়ে ঐ দিনই আত্মহত্যা করে অরিত্রী!
Discussion about this post