বিশেষ প্রতিবেদক
গত শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নিতে বলা হয়। এরপর থেকে একে একে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে সরাসরি ক্লাস বন্ধের ঘোষণা আসতে থাকে।
ফলে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ধকল কিছুটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ফের বড় ধরনের সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা। ১৩২ দিন খোলা রাখার পর করোনার ছোবলে আবার বন্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান । তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে চলমান পরীক্ষা স্থগিত করায় বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ শিক্ষার্থী। বেশি সমস্যায় পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, তাদের অধিভুক্ত কলেজগুলোতে বর্তমানে অনার্স পার্ট-৪-এর আর তিনটি পরীক্ষা বাকি রয়েছে। এতে পরীক্ষার্থী দুই লাখ ৩৬ হাজার। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে অনার্স পার্ট-২-এর পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল। এতে পরীক্ষার্থী চার লাখ ৩৫ হাজার। এ ছাড়া আগামী মাসের শুরুতেই এলএলবি পার্ট-২-এর মৌখিক, বিএড ও এমএডের মৌখিক পরীক্ষা, বিবিএ পঞ্চম ও সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা, সিএসই দুই বর্ষের পরীক্ষা শুরুর কথা ছিল।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর শুরু হয় ২০১৬-১৭ সেশনের স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা। এরই মধ্যে ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছে। বাকি তিনটি বিষয়ের পরীক্ষা ২৩, ২৭ ও ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। অর্থাৎ তিন বছর অপেক্ষা শেষে এই মাসেই শেষ হতো তাঁদের স্নাতক পরীক্ষা। কিন্তু এই পরীক্ষাসহ অন্যান্য পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় প্রায় ১০ লাখ শিক্ষার্থীর অপেক্ষার প্রহর আরো দীর্ঘ হলো।
জানা গেছে, রাজধানীর সাত কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ২০১৮ সালে। করোনার কারণে দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় গত বছরের শেষের দিকে পরীক্ষা শুরু হয়। গতকাল ছিল তাঁদের শেষ পরীক্ষা। কিন্তু এই একটি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় হাজার হাজার শিক্ষার্থীর স্বপ্ন আটকে গেল।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী মাসুম খন্দকার বলেন, ‘ডিগ্রির একটি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিলো!। কিছু বর্ষের কিছু মৌখিক পরীক্ষাও চলছিল। এগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে কি নেয়া যেতনা ? যেখানে কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা স্থগিত করেনি, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা বন্ধ করে দিল কেন? ্স্বআমাদের অধিকাংশেরই টিকা দেয়া আছে।তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলমান পরীক্ষাগুলো অবিলম্বে শুরু করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে আকুল আবেদন করছি।
অপর শিক্ষার্থী ফাহমিদা তুরিন বলেন, আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে অনার্স চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা শেষ না হলে আমরা বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে না। এতে আমাদের ক্যারিয়ার মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে চাই এতে অন্তত যাই হোক আমাদের পরীক্ষাটা অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সাত সরকারি কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থীরা জনান, ২০১৮ সালে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা ২০২২ সালে শেষ হচ্ছে। গত ২১ নভেম্বর পরীক্ষা শুরু হয়ে ২২ জানুয়ারি শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা স্থগিত করা হয়েছে । একটি মাত্র পরীক্ষার জন্য আমরা আবার পিছিয়ে গেলাম!
এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বলেন, ‘ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালে আমরা অনেকবার সরাসরি পরীক্ষা নিয়েছি। কারণ তখন করোনা সংক্রমণ কম ছিল।কিন্তু এখন যে হারে ওমিক্রনের ঊর্ধ্বগতি চলছে, এ অবস্থায় পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীদের ঝুঁকি বাড়বে। তবে আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সংক্রমণ কমে এলে আমরা অন্তত পরীক্ষাটা নেয়ার চেষ্টা করব। এখন আমাদের সুবিধা হলো, শিক্ষকরা শতভাগ ও শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশ টিকা নেওয়া। ’’
Discussion about this post