শিক্ষার আলো ডেস্ক
ট্রাকচাপায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেলের মৃত্যুর প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১ ফেব্রুয়ারী) রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রাকচাপায় এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন,’ এটা দুর্ঘটনা নয়, হত্যাকাণ্ড। এর সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি।’
উপাচার্য বলেন, আমার সন্তানতূল্য ছাত্র মারা গেছে। এটা অনেক কষ্টের। আমি নিহত ছাত্রের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শান্ত হওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
এদিকে গতকাল রাতভর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে আগুন জানিয়ে আন্দোলন করছেন শত শত বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী।
তিনি বুধবার (২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও শিক্ষার্থীরা এ প্রস্তাবে রাজি হননি। উপাচার্য মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. লিয়াকত আলীকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো লিখিতভাবে গ্রহণ করেন। এরপরে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-
নিহতের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ কোটি টাকা দিতে হবে *বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা*প্রক্টর ও প্রক্টরিয়াল বডি অপসারণ*চালকসহ জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করা*ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ বন্ধ করা *ক্যাম্পাসের রাস্তা-ঘাট মেরামত ও পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা।
এরআগে, মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে দুর্ঘটনায় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহবুব হাবিব হিমেল ক্যাম্পাসে ট্রাকচাপায় নিহত হন। তিনি শহীদ শামসুজ্জোহা হলের আবাসিক ছাত্র। এছাড়া তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ড্রামা অ্যাসোসিয়েশনের (রুডা) সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোটের দফতর সম্পাদক ছিলেন।
এ সময় সিরামিক ও ভাস্কর্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান প্রামাণিক আহত হন। তিনি রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ক্যাম্পাসে দু’টি আবাসিক হল ও একটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি হল নির্মাণ হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের সামনে। অন্যটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনের পাশে। শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে একাডেমিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। নির্মাণ কাজে ট্রাকযোগে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী আনা-নেওয়া করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে হিমেল ও রায়হান মোটরসাইকেলযোগে ক্যাম্পাস থেকে হলে ফিরছিলেন। পথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ হবিবুর রহমান হলের সামনে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা নির্মাণ সামগ্রীবাহী একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মাথা পিষ্ট হয়ে হিমেল মারা যান। রায়হানকে আহতাবস্থায় রামেক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা অন্তত ৫টি ট্রাক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করছেন।
ঘটনার প্রতিবাদে ভিসি ভবনের সামনে শতাধিক শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন। পরে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন।
Discussion about this post