শিক্ষার আলো ডেস্ক
এ বছর এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া যশোরের ঝিকরগাছার প্রতিবন্ধী তামান্না আক্তার নুরার সাথে ৪ মিনিট ফোনে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৬ মিনিটে তামান্নার মোবাইলে কল করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ফোন করার বিষয়ে তামান্না নুরা বলেন, আমার চিঠি পেয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কল দিয়েছিলেন। এইচএসসির ফলাফল শুনে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তুমি এগিয়ে যাও, আমি তোমার সাথে আছি। আমি তোমাকে যাবতীয় সহযোগিতা করব। তোমার সাফল্যে আমি আনন্দিত।
তামান্না নূরা এবার বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজ থেকে পরীক্ষা দিয়ে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে; যার একটি পা নেই; নেই কোনো হাতও। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় (পিইসি), জুনিয়ার স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং সেকেন্ডারি স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষাও (এসএসসি) তামান্না জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
তামান্নার গ্রামের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়া ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামে। তামান্নার বাবার নাম রওশন আলী। ময়ের নাম খাদিজা পারভীন শিল্পী। বাবা স্থানীয় ছোট পোদাউলিয়া দাখিল মাদরাসার (নন এমপিও) বিএসসির শিক্ষক। মা গৃহিণী। তিন সন্তানের মধ্যে তামান্না সবার বড়।
তামান্না নিজের স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা ও দেখা করতে চেয়ে চিঠি লেখেন। তামান্নার বাঁ পায়ে লেখা সে চিঠি তাঁর বাবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহবুবুল হকের কাছে জমা দেন। সে চিঠি জেলা প্রশাসকের হাত ঘুরে পৌঁছে যায় প্রধানমন্ত্রীর হাতে।।
তামান্না আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে একটি আবেদন করতে বলেছেন।এইচএসসি’র ফলাফলে খুশি তামান্না জানায়, সে এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণাধর্মী কোনো বিষয়ে পড়াশোনা করার ইচ্ছা তার।
তামান্নার মনোবল তাকে সাফল্যের সিঁড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। দুই হাত ও এক পা নেই তামান্না নুরার। শরীরে মশা-মাছি বসলে তাড়ানোর সক্ষমতাও নেই তার। টেবিলের ওপর বসে এক পা দিয়ে খাতায় লেখেন তামান্না। সে লেখাও দৃষ্টিনন্দন। শুধু বাঁ পা নিয়ে জন্ম নেওয়া তামান্না শারীরিক প্রতিবন্ধিতাকে জয় করেছেন। তার এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়।
তামান্না নূরা বলে, আমার ২টি হাত ও একটি পা নেই। কিন্তু তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার সুস্থ ব্রেন দিয়ে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। আমি সুস্থ আছি। এই জন্য আলহামদুলিল্লাহ।
বাঁকড়া ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সামছুর রহমান বলেন, ‘তামান্না আমাদের কলেজের শিক্ষার্থী। তার মেধার প্রশংসা আমাদের কলেজ শিক্ষকরা প্রায় করে। তামান্না জন্মপ্রতিবন্ধী হয়েও নানান প্রতিবন্ধকতা জয় করেছে, দেখিয়ে দিয়েছে সমাজকে। শুধু পড়াশোনা না, তামান্না ভালো ছবিও আঁকেন। এমনকি কম্পিউটার প্রযুক্তিতেও সে দক্ষ। জন্ম থেকেই তার দুটি হাত ও একটা পা নেই। অথচ একটা পা দিয়েই তামান্নার যুদ্ধ থেমে নেই। আমি আশারাখি সে ভবিষ্যতে অনেক ভালো কিছু করবে।তবে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার সরকারের সহযোগিতা।
Discussion about this post