শিক্ষার আলো ডেস্ক
‘ভাইকে যেখানেই দেখবি, সালাম দিবি’ কিংবা ‘হ্যান্ডশেকের সময় ভাইয়ের হাতে চাপ দেওয়া যাবে না’—যাঁরা ভাবছেন কোনো নাটক বা চলচ্চিত্রের সংলাপের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা ভুল করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের আবাসিক হলগুলোর অতিথিকক্ষে (গেস্টরুম) নিয়মিত কর্মসূচির ‘শিক্ষা’ এসব। এই শিক্ষার মধ্যে আরও আছে ‘ভাইদের কাছ থেকে ছুটি নিবি’। পরীক্ষা, অসুস্থতা বা জরুরি কোনো কাজ থাকলে ‘বড়’ ভাইদের কাছ থেকে ছুটি নিতে হবে।
বাধ্যতামূলক এই ‘শিক্ষার’ মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন হলের গণরুমে ওঠা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের। এক যুগ ধরে নবীন শিক্ষার্থীদের গেস্টরুমে নির্যাতন করার অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হলগুলো ‘গেস্টরুম নির্যাতনের’ সংস্কৃতি বন্ধের দাবি উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদে। ওই দাবির সঙ্গে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলসহ সব ছাত্রসংগঠনই একাত্মতা জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন সামনে রেখে সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চ্যুয়াল শ্রেণিকক্ষে পরিবেশ পরিষদের সভা হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালসহ ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতারা অংশ নেন। এতে গেস্টরুম নির্যাতনসহ মোট ৫ এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা হয়।
সভা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, সভায় গণরুম-গেস্টরুম নিয়ে অনেকেই কথা বলেছেন। আমরা বলেছি, আবাসন সংকটের কারণে গণরুম-পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে ছাত্ররাজনীতিতেও অনেক নেতিবাচক উপাদান তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যেন হলে শিক্ষার্থী হিসেবেই থাকতে পারেন, পছন্দ অনুযায়ী ছাত্রসংগঠন বেছে নিতে পারেন, শিক্ষার্থী হিসেবে হলে সব রকম সুযোগ-সুবিধা ও সামাজিক-রাজনৈতিক অধিকার পান, এসব বিষয়ে প্রশাসনকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি৷
সভায় অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ পরিষদের সভায় আমরা হলগুলোতে চলা গেস্টরুম প্রথা বিলুপ্ত করার দাবি জানিয়েছি। সভায় সব সংগঠনই এ ক্ষেত্রে একমত হয়েছে। গেস্টরুমে নির্যাতন কোনো সভ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি হতে পারে না। উপাচার্য বলেছেন, তিনিও এই দাবির সঙ্গে একমত।
ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে প্রশাসনের সাথে আলোচনা করেছি। এর মধ্যে গণরুম-গেস্টরুম নির্যাতন নিয়ে আমরা কথা বলেছি। নির্যাতনের শাস্তির ব্যবস্থা হিসেবে আইন প্রণয়ন করার কথা বলেছি। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে ছাত্র সংগঠনগুলোকে যেন যুক্ত করা হয় সে কথাও আমরা প্রশাসনকে বলেছি। প্রশাসন আমাদের কথা শুনেছে। তারা বলছেন সামনে আরো ছাত্রসংগঠন গুলোর সাথে বসবেন।
পরিবেশ পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে প্রশাসনের মিথস্ক্রিয়ার আনুষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম। বিভিন্ন সময়ে নানা বিষয়ে সভা ডেকে পরিবেশ পরিষদে ছাত্রনেতাদের বক্তব্য শোনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
Discussion about this post