বাইরে থেকে ঘরে ফিরে মোবাইল সেটটি ঠিকমতো পরিষ্কার করছেন তো! যদি না করে থাকেন তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বড়ো ঝুঁকিতে রয়েছেন আপনি এবং আপনার পরিবার। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ জানান, ‘কিছুক্ষণ পর পর হাত ধোয়া যেমন জরুরি তেমনি বাসায় ফিরে নিজেকে জীবাণুমুক্ত করাও খুব জরুরি।
তিনি বলছেন, এই রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। তাই যদি বাইরে বের হয়ে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে কেউ এসে থাকেন তাহলে তার মাধ্যমেই এই ভাইরাসটি ছড়াতে থাকবে। তাই হাত ধোয়ার কথা বলা হচ্ছে। তবে হাত ধোয়ার সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল সেট, ফোনের কভার, চশমা, মানিব্যাগ, ঘড়ির ব্যান্ড, চশমা রাখার খাপ এবং হাতের আংটির মাধ্যমেও সংক্রমণ ঘটতে পারে। তাই এগুলোও ভালোভাবে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। সাবধানতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।’
ইতালিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার জন্য প্রধান মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে জুতাকে। জুতার তলায় এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে বলে সে দেশের বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন। তাই বাইরে বের হলে জুতার তলা থেকে শুরু করে পরনের কাপড় থেকে শুরু করে প্রতিটি জিনিসই জীবাণুমুক্ত করবার পরামর্শ দিচ্ছেন ডা. আবদুল্লাহ।
মানুষকে ঘরে রাখতে সাধারণ ছুটি আগামী ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে তবে তা যেন বেশি খারাপের দিকে না যায় সেজন্য লকডাউন করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করছে সরকার। এ পরিস্থিতিতে সামান্য অসাবধানতার জন্য কোভিড ১৯ ভাইরাসটি যেন আপনার ঘরে ঢুকতে না পারে সেজন্য সচেতনতার বিকল্প নেই।
লকডাউনের মধ্যেও বাজার করা, ওষুধ কেনা এমন কিছু না কিছু প্রয়োজনে বাড়ির প্রধান ব্যক্তিকে বাইরে বের হতে হচ্ছেই। বাইরে বের হলে হাতঘড়ি, মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ, চশমা আমাদের নিতেই হয়। আর অভ্যাসবশত এসব ডেস্কে রাখা হয়। সেই সঙ্গে এসব কিছুই বাতাসের সংস্পর্শে আসছে। যার মাধ্যমে ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকেরা।
ডা. আবদুল্লাহ আরো জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে বাড়িতে ফিরে দুটি হাত খুব ভালোভাবে ধুয়ে নেওয়ার পাশাপাশি চশমা, মোবাইল ফোন, চশমার খাপ, মানিব্যাগ, বেল্ট খুব ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে সাবান পানি বা স্যানিটাইজার দিয়ে। বিশেষ করে শুকনো কাপড়ে স্যানিটাইজার লাগিয়ে সেই কাপড় দিয়ে চশমার ডাঁটি, ফ্রেম, চশমার খাপ, মোবাইল ফোন, তার কভার, মানিব্যাগ, বেল্ট খুব ভালোভাবে মুছে নিতে হবে। না হলে, এদের মাধ্যমে নিজেদের তো বটেই, বাড়ির লোকজনেরও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
করোনা ভাইরাসের কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি খুব বেশি। এই ব্যাপারে সকলের সচেতন হওয়া উচিত। বাজার দোকান অথবা কাজের শেষে বাসায় ঢোকার আগে জুতার তলায় কীটনাশক ছিটাতে হবে। বাড়িতে ঢুকে সোজা বাথরুমে গিয়ে পোশাক পরিবর্তন করে হাত-মুখ সাবান দিয়ে পরিষ্কার তো করতে হবেই। এর পাশাপাশি বাইরে থেকে আসা পোশাকও সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে ফোন, চশমা, হাতঘড়িসহ সবকিছুই স্যানিটাইজার দিয়ে মুছে ফেলতে হবে।
আরো খেয়াল রাখুন: বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর অন্য কিছু ধরবেন। কারণ এই হাত দিয়ে যা কিছু ধরা হবে সেখানেই ভাইরাস থেকে যেতে পারে। টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, কিবোর্ডে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে।
খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া উচিত। ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। অনেকের গৃহপালিত পশু-পাখি থাকে। কোনো পশু-পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা রোগাক্রান্ত মনে হলে সেটিকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই প্রাণীকে কেউ স্পর্শ করলে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কুশল বিনিময়ের ক্ষেত্রে করমর্দন, কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। জনসমাগম এড়িয়ে চলুন। যথাসম্ভব ঘরে বা বাড়িতে থাকুন, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের না হওয়াই ভালো।
Discussion about this post