শিক্ষার আলো ডেস্ক
বাংলাদেশের প্রধান ফসলগুলোর অন্যতম ‘চা’। দেশের চা শিল্পের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস।
তবে বর্তমান প্রজন্মের চায়ের থেকে পানীয় জাতীয় পণ্যের প্রতি আগ্রহ বেশি। তাই চা নিয়ে গবেষণা করে দেশে প্রথমবারের মতো পানীয় হিসেবে টি-কোলা (পানীয়) উদ্ভাবন করলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) গবেষকরা।
বুধবার (৯ মার্চ) সকালে বাংলানিউজের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনলজি (এফইটি) বিভাগের অধ্যাপক ও টি-কোলা গবেষক দলের প্রধান অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ।
তিন সদস্য বিশিষ্ট এ গবেষণা দলের অন্যরা হলেন, এফইটি বিভাগের এম. ইঞ্জিনিয়ারিং থিসিসে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী নাবিল নওরোজ বৈশাখ এবং একই বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী মো. আল ইমরান জাকারিয়া।
চা থেকে টি-কোলা উদ্ভাবন নিয়ে গবেষক অধ্যাপক ড. ইফতেখার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ‘চা প্রদর্শনী-১৮’ তে চায়ের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘চা থেকে চা ছাড়াও বিভিন্ন ফ্লেভারযুক্ত প্রসাধনী সামগ্রী বিশেষ করে সাবান, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, টি-কোলা, চায়ের আচার প্রভৃতি উৎপাদন করা সম্ভব। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়ে চা থেকে কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (টি কোলা) তৈরি করতে ২০১৯ সাল থেকে আমরা গবেষণা শুরু করি। প্রায় তিন বছর গবেষণা শেষে এবছর আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি।
শাবিপ্রবির এ গবেষক আরও বলেন, আমাদের দেশে শিশু-কিশোরদের মধ্যে চায়ের প্রতি কিছুটা অনীহা কাজ করলেও কার্বোনেটেড বেভারেজের প্রতি তাদের আগ্রহ অনেক বেশি। এছাড়া গরমের দিনে চা থেকেও ড্রিঙ্কসের (পানীয়) প্রতি বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে মানুষরা। তবে এ ড্রিঙ্কসগুলো আমাদের শরীরে তেমন উপকার সাধন করে না, অনেক ক্ষেত্রে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই এমন একটি কার্বোনেটেড ড্রিঙ্কস (পানীয়) তৈরির পরিকল্পনা করি যাতে চা এর সব গুণাগুণ বিদ্যমান থাকে। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের জন্য দরকার ছিল পর্যাপ্ত অর্থায়ন। সেলক্ষ্যে একটি গবেষণা প্রস্তাব ( রিসার্স প্রপোজাল) তৈরি করে ‘সাস্ট রিসার্চ সেন্টার’ এ প্রেরণ করি। পরবর্তীতে প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে আমরা কাজ শুরু করি।
গবেষক নাবিল নওরোজ বৈশাখ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গবেষণাটি শেষ করেছি তাতে একটি মানসম্পন্ন, স্বাস্থ্যকর এবং আকর্ষণীয় ‘টি কোলা’ প্রস্তুত করতে সক্ষম হই। এতে আমরা দুই ধরনের ‘ব্ল্যাক টি’ এবং ‘গ্রিন টি’ উভয় নিয়ে টি-কোলা তৈরি করি। তিনি বলেন, আমাদের তৈরি ড্রিঙ্কসগুলোতে কেমিক্যাল অ্যানালাইসিস করে চায়ের উপকারী উপাদান পলিফেনল, ক্যাফেইন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাদ্যগুণ ইত্যাদি বিদ্যমান রয়েছে। এছাড়া ভোক্তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা যাচাইয়ের জন্য আমরা সেনসরি অ্যানালাইসিস টেস্ট করেছি। সেখানেও আমরা আশানুরূপ ফলাফল পেয়েছি। আশা করি, সামনে আমরা একটি স্বাস্থ্যকর বেভারেজ পাবো।
আরেক গবেষক আল ইমরান জাকারিয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমরা যে ড্রিঙ্কসগুলো তৈরি করেছি তার মেয়াদ তিনমাস পর্যন্ত থাকবে। তবে এ মেয়াদ আরও বাড়ানো নিয়ে আমরা কাজ করছি। এছাড়াও আমরা সুগারের পাশাপাশি এর সমগুণ সম্পন্ন নন-সুগার প্রোডাক্ট ডেভেলপ করেছি যাতে করে ডায়াবেটিক্স রোগীরাও টি-কোলা গ্রহণ করতে পারবেন।
সার্বিক বিষয়ে ড. ইফতেখার আহমেদ বলেন, এই টি-কোলা তৈরি করতে যেসব কাঁচামাল প্রয়োজন তার অধিকাংশ আমাদের দেশেই রয়েছে। এতে পণ্যটি তৈরি করতে অন্যান্য বেভারেজের (পানীয়) চেয়ে কম খরচ হবে। তাই এর দাম ও সীমিত থাকবে। এখন গবেষণাটি পাবলিকেশন এর জন্য কাজ চলছে।
তিনি বলেন, গবেষণা সংশ্লিষ্ট পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতির অভাবে আমরা নিজেদের গবেষণাগারে কিছু টেস্ট সম্পন্ন করতে পারিনি। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমরা আমাদের এই গবেষণাটি আরো বৃহৎ পরিসরে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি। এতে এ উদ্ভাবনটি আমাদের দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছি।সৌজন্যে-বাংলানিউজ
Discussion about this post