অনলাইন ডেস্ক
শিশুদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ, সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) বিকেলে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপন উপলক্ষে ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই—যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ/ প্রাণপণে পৃথিবীর সরাবো জঞ্জাল/ এ বিশ্বকে শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো আমি/ নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের সেই কর্ণদ্বার। আমাদের যে লক্ষ্য ২০৪১, ২০৭১ আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ আমরা উদযাপন করবো। সেই সাথে ২১০০ সাল পর্যন্ত কীভাবে উন্নত হবে সেই পরিকল্পনাও আমি প্রণয়ন করে সেটা দিয়ে গেছি। কাজেই শিশুদের ভবিষ্যৎ যাতে উজ্জ্বল হয়, সুন্দর হয়, সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের সকল কর্মপরিকল্পনা।
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর গভীর ভালোবাসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন। আমার ছেলে জয়ের সৌভাগ্য হয়েছে আমার বাবার কোলে চড়ে খেলা করার। তিনি যখন খেলতেন বাচ্চাদের সঙ্গে মনে হতো তিনি নিজেই যেন একটা শিশু হয়ে যেতেন। এটাই ছিল তার চরিত্রের সবচেয়ে বড় দিক, তার সরলতা।
জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে আসেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, স্বজনহারা বেদনা নিয়ে শরণার্থীর মতো বিদেশে সময় কাটাতে হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমি ফিরে এসেছিলাম। এমন একটি অবস্থায় ফিরে এসেছি, যেখানে ঘাতক, যুদ্ধাপরাধী, আলবদর, রাজাকারদের রাজত্ব ছিল।
তিনি বলেন, তবু আমি ফিরে এসেছিলাম, আমার বাবার স্বপ্নপূরণ করবার জন্য; এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। এ দেশের শিশুদের যেন আগামী দিনে আমাদের স্বজনহারা বেদনা নিয়ে বাঁচতে না হয়; তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, উন্নত জীবন পায়।
অনুষ্ঠান থেকে মুজিববর্ষ লোকজ মেলার উদ্বোধন ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুভ জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে জাতির পিতার সমাধিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি আগামী ২১ থেকে ২৬ মার্চ সরকারি শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ মাঠে মুজিববর্ষ লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জানান, আমাদের গ্রামবাংলা নানা বৈচিত্র্যে ভরা। কাজে এই বৈচিত্র্যময় বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে এই মেলায় ঐতিহ্যবাহী লোকজ পণ্যের প্রদর্শনীসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে নানা ধরনের আয়োজন থাকবে। মেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশ বিষয়ক বই, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত এবং মুজিববর্ষের থিম সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। ‘টুঙ্গিপাড়া: হৃদয়ে পিতৃভূমি’ শীর্ষক একটি তথ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, শিশু প্রতিনিধি শেখ মুনিয়া ইসলাম।
আরও উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই দৌহিত্র—প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় এবং শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এছাড়াও অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা, বঙ্গবন্ধুর আত্মীয়-স্বজনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আয়োজনের দ্বিতীয় অংশে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের ইতিহাস তুলে ধরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করা হয়।
Discussion about this post