অনলাইন ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে আসছে রমজানকে সামনে রেখে ফ্যামিলি কার্ডে দেশের এক কোটি পরিবারকে টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। রাজধানী ঢাকা ছাড়া আগামী রবিবার (২০ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সরকারি বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি। ইতিমধ্যেই টিসিবি প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে। চূড়ান্ত করা হয়েছে এক কোটি পরিবার- যারা এই সহায়তা পাচ্ছেন।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকায় অনেক ভাসমান মানুষ রয়েছে, তাই তাদের এই ফ্যামিলি কার্ডের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কিন্তু ঢাকার বাইরে করোনার সময় যারা প্রণোদনা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দুই হাজার ৫০০ টাকা পেয়েছেন তারাসহ নিম্নবিত্ত আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার এই কার্ড পাচ্ছেন বলে জানিয়েছে টিসিবি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ‘ফ্যামিলি কার্ড’ কর্মসূচির আওতায় দেশব্যাপী এক কোটি পরিবারের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। করোনাকালে প্রধানমন্ত্রীর নগদ অর্থ সহায়তা বাবদ আড়াই হাজার টাকা করে পেয়েছেন দেশের ৩৮ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এই ৩৮ লাখ ৫০ হাজার পরিবার সবাই পাচ্ছেন টিসিবির ‘ফ্যামিলি কার্ড’। এর সঙ্গে নতুন যুক্ত করা হয়েছে আরও ৬১ লাখ ৫০ হাজার পরিবার। এ কাজে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসন যৌথভাবে কাজ করেছে। সুবিধাভোগী পরিবার নির্বাচিত করতে সরকারের সামাজিক সরকারি বলয়ের আওতায় থাকা নিম্নআয়ের মানুষদের তালিকার বাইরেও নানা বিষয় বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সরকারি এই উদ্যোগের ফলে দেশের ৫ কোটি স্বল্প আয়ের মানুষ সরাসরি উপকৃত হবে বলে সরকার মনে করে।
টিসিবির মাধ্যমে সরকারের এই কার্যক্রম সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, সারাদেশে স্বল্প আয়ের ১ কোটি পরিবারকে টিসিবির মাধ্যমে পণ্য পৌঁছে দিতে ইউনিয়ন পর্যায়ে এ কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। সারাদেশে টিসিবির মাধ্যমে জনগণকে স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করা হবে। টিসিবির এ কার্যক্রমের আওতায় চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও সয়াবিন তেল কেনার বিষয়টিও চূড়ান্ত হয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২০ মার্চ থেকে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মধ্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রয় উপলক্ষে প্রেস কনফারেন্সে করবেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শুক্রবার (১৮ মার্চ) বিকাল চারটায় রাজধানীর কাওরান বাজারে অবস্থিত রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সভাকক্ষে আয়োজিত এই প্রেস কনফারেন্সে সরকারের এই কর্মসূচির বিস্তারিত তুলে ধরেন ।
সরকারের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকারের ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় এসব পণ্য কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মেঘনা সুগার রিফাইন্ড লিমিটেড ও সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছ থেকে মোট ১৪ হাজার টন চিনি কিনবে টিসিবি। ৫৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা কারে এ পণ্যের মোট মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এছাড়াও সেনা কল্যাণ সংস্থা থেকে ১৬ কোটি ২৮ লাখ টাকায় ২ হাজার টন ছোলা ও ব্লু-স্কাই এন্টারপ্রাইজ থেকে ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ৪ হাজার এবং রুবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড থেকে ৩২ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ৪ হাজার টন ছোলা কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
একইসঙ্গে ২১১ কোটি ৫৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায় মোট ১৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন মসুর ডাল কিনছে সরকার। এর মধ্যে শবনম ভেজিটেবল ওয়েল লি, ইজি সার্ভিস লি, পর্ব ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স রয় ট্রেডার্স, প্ল্যান্টাজিক ইনকর্পোরেশন, বসুন্ধরা ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ও বসুমতি ডিস্ট্রিবিউশন লিমিডেটেডের কাছ থেকে এ পণ্য কিনবে টিসিবি।
সেনা এডিবল অয়েল, সুপার অয়েল রিফাইন্ড, মেঘনা এডিবল অয়েলস রিফাইনারি, সিটি এডিবল অয়েল, বসুন্ধরা মাল্টি ফুড প্রোডাক্টস ও সান শাইং এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ২৮৭ কোটি ৫৪ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৬ টাকায় ১ কোটি ৭১ লাখ ১৫ হাজার ৬৫২ লিটার সয়াবিন তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
টিসিবি জানিয়েছে, প্রতিটি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে একসঙ্গে পাঁচ পণ্যের প্যাকেট পাবেন কার্ডধারীরা। প্রতি প্যাকেটে থাকবে দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি পেঁয়াজ। সেখানে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫, মসুর ডাল ৬৫, পেঁয়াজ ৩০ টাকা। ছোলার দাম এখনও নির্ধারণ হয়নি।
জানা গেছে, একজন কার্ডধারী রোজার আগে ও রোজার মধ্যে দুই দফা পণ্য পাবেন। প্রথম কিস্তির পণ্য পাবেন ২০ মার্চ থেকে। দ্বিতীয় কিস্তির পণ্য দেওয়া হবে রোজার মাঝামাঝি সময়ে। এই কর্মসূচির জন্য দুই কোটি লিটার সয়াবিন তেল, ৪০ হাজার মেট্রিক টন চিনি, ৪০ হাজার মেট্রিক টন মসুর ডাল ও ৪০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা এবং ২৫ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ প্রয়োজন হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, এটি সরকারের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রবিবার থেকে এ কার্যক্রম শুরু হচ্ছে।
Discussion about this post