শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) বিভিন্ন পদে নিয়োগে উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। রবিবার (২০ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির ১৫তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য আফছারুল আমীন বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আব্দুল কুদ্দুস, এম এ মতিনসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যরা এ সময় উপস্থিতি ছিলেন।
বৈঠকে একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়া রুয়েটের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কমিটির সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে রুয়েটে উপাচার্যের ভাই-বোন, শ্যালক ও গৃহকর্মী চাকরি পাওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে বিশদ তদন্তের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বৈঠক শেষে কমিটির সিনিয়র সদস্য ও রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, রুয়েটের বিভিন্ন পদে নিয়োগে উপাচার্যের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর সংসদীয় কমিটি এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে, রুয়েটের বিভিন্ন পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জাতীয় কয়েকটি গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, যোগ্য ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে নিজের শ্যালক, দুই ভাই, স্ত্রীর ফুফাতো ভাই, চাচাতো বোন, গৃহকর্মী ও তার স্বামীকে কর্মকর্তা-কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রুয়েটের উপাচার্য রফিকুল ইসলাম সেখ।
এছাড়া নিয়োগের নীতিমালার লঙ্ঘন করে পদের চেয়ে বেশি জনবল নিয়োগ দিয়েছেন বলেও সংবাদে উল্লেখ করা হয়।
রুয়েটের রেজিস্ট্রার দফতর জানায়, ২০১৯ সালে তিনটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে রুয়েটে বিভিন্ন পদে ১৩৫ জনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত বছরের ৪ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২তম সিন্ডিকেট সভায় ওই নিয়োগ পাস হয়। কিন্তু এখনও নিয়োগের রেজ্যুলেশন করা হয়নি। এদিকে চলতি বছরের জুলাইয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
উপাচার্যের শ্যালক সোহেল আহমেদকে ‘পিএ টু ডিরেক্টর’ পদে, আপন দুই ভাই মুকুল হোসেন ‘সেকশন অফিসার’ ও লেবারুল ইসলাম ‘জুনিয়র সেকশন অফিসার’ পদে, গৃহকর্মী লাভলী আরাকে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট কুক’ পদে নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ‘উপসহকারী প্রকৌশলী’ পদের যোগ্যতা হিসেবে অনুমোদিত কারিগরি শিক্ষা বোর্ড বা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকৌশলে ডিপ্লোমা ডিগ্রি চাওয়া হয়। কিন্তু সেই পদে একজন বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে রুয়েট শাখার ডিপ্লোমা প্রকৌশল সমিতি গত ২২ জানুয়ারি উপাচার্যকে লিখিতভাবে আপত্তি জানায়। ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও আপত্তি জানানো হয়। অন্যদিকে রায়হান ইসলাম নামের সংক্ষুব্ধ একজন চাকরিপ্রার্থী হাইকোর্টে এ বিষয়ে একটি রিট আবেদন করেছেন। রায়হান বলেন, ‘হাইকোর্ট এ বিষয়ে একটি আদেশ দিয়েছেন। সেটি এখনও রুয়েট কর্তৃপক্ষের হাতে এসে পৌঁছায়নি।’
রবিবার এসব বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সেখের দফতরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। রুয়েটের জনসংযোগ দফতরের কর্মকর্তারা জানান, উপাচার্য ক্যাম্পাসে নেই, উনার ঢাকায় যাওয়ার কথা।
তবে উপাচার্যের দফতরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘উপাচার্য ক্যাম্পাসে আছেন। তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চান না।’
পরে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত উপাচার্যের মোাবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post