শিক্ষার আলো ডেস্ক
চলতি ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে ডিপ্লোমায় ভর্তির ক্ষেত্রে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা অর্জনে রিমিডিয়্যাল কোর্স বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এই কোর্স শেষে পরীক্ষা হবে। আর এতে উত্তীর্ণ হতে পারলেও ডিপ্লোমায় ভর্তি হওয়া যাবে। তবে এ সিদ্ধান্তের ফলে কারিগরিতে শিক্ষার্থী বাড়ার পরিবর্তে উল্লেখযোগ্য হারে কমবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
আগে এসএসসির (ভোকেশনাল) পাশাপাশি এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক তিন বিভাগ থেকেই ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি আবেদনের সুযোগ ছিল। কিন্তু চলতি শিক্ষাবর্ষ হতে শুধু ভোকেশনাল ও বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের সরাসরি আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। আর ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ভর্তি আবেদনের যোগ্যতা অর্জনে তিন সপ্তাহের রিমিডিয়্যাল কোর্স সম্পন্ন করে বোর্ড কর্তৃক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এরপর তাদেরকে জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষার পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে কারিগরিতে ভর্তি হয়। কিন্তু এখন রিমিডিয়্যাল ক্লাসে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মনে শুরুতেই এই শিক্ষায় অনাগ্রহ তৈরি করবে। এতে অনেক শিক্ষার্থীই কারিগরি শিক্ষার প্রতি মুখ ফিরিয়ে নেবে। অনেকেই রিমিডিয়্যাল কোর্সে উত্তীর্ণ হতে না পেরে আবেদনেরই সুযোগ পাবে না। আর নিম্নবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থীরা ভর্তি আবেদনের আগে এ ধরনের কোর্স করতে আগ্রহী হবে না। ফলে পিছিয়ে পড়বে কারিগরি শিক্ষা।
টেকনিক্যাল এডুকেশন কনসোর্টিয়াম অব বাংলাদেশ (টেকবিডি)-এর সভাপতি প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজীজ বলেন, প্রথম সেমিস্টারে ভর্তির আগে ছাত্রছাত্রীদের এই বিষয়গুলো নতুন করে পড়ানোর যৌক্তিকতা নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, রিমিডিয়্যাল কোর্সে যে বিষয়গুলো রাখা হয়েছে তা কারিগরির বিদ্যমান কোর্সেই রয়েছে। বরং ভর্তির পরে রিমিডিয়্যাল ক্লাসের ব্যবস্থা করলে উল্লেখিত বিষয়গুলো আয়ত্ত করে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করতে পারবে।
টেকবিডির সাধারণ সম্পাদক ড. মো. ইমরান চৌধুরী বলেন, আমরা ইতোমধ্যে সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বিষয়টি জানিয়েছি। প্রয়োজন হলে একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তির পর রিমিডিয়্যাল কোর্স করানো যেতে পারে বলে আমরা প্রস্তাব দিয়েছি।
রিমিডিয়্যাল কোর্স কী?
সাধারণত শ্রেণিকক্ষের পড়াশোনায় দুর্বল প্রকৃতির শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে সব কিছুর জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। তাই তাদের আলাদাভাবে শিখনের জন্য যে শিক্ষাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় তাকে বলে রিমিডিয়্যাল কোর্স (Remedial Course) বলে।
পলিটেকনিক ভর্তির জন্য রিমিডিয়্যাল কোর্স যাদের হবে?
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড (বাকাশিবো) কর্তৃক পরিচালিত ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষাক্রমে ১ম পর্বে ভর্তি ইচ্ছুক শিক্ষার্থী যারা সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড হতে যথাক্রমে বিজ্ঞান ও দাখিল (বিজ্ঞান) ও এসএসসি (ভোকেশনাল) বা দাখিল (ভোকেশনাল) ব্যাতীত অন্যান্য বিভাগ হতে ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় পাস করেছে সেসকল শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান ও গণিতে শিখনস্বল্পতা (Learning Gap) দূরীকরণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক সক্ষমতা বৃদ্ধিমূলক কোর্স বা রিমিডিয়্যাল কোর্স প্রণয়ন করা হয়েছে।
এই কোর্সের উদ্দেশ্য কি?
১) বিজ্ঞান ব্যতীত এসএসসি পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চতর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণার বিকাশ ঘটানো।
২) শিক্ষার্থীদের মৌলিক বিজ্ঞানের পটভূমি গড়ে তোলার জন্য অর্থাৎ প্রযুক্তিগত বিষয় বোঝার জন্য পদার্থবিজ্ঞান প্রয়োজন।
৩) একটি মৌলিক জ্ঞান এবং সাধারণ প্রকৌশল ও শিল্প উপকরণের ভৌত বৈশিষ্ট্যের ধারণার বিকাশ ঘটানো।
এই কোর্সের ভর্তির যোগ্যতা
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড হতে মানবিক, বাণিজ্য বিভাগে ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে দাখিল (বিজ্ঞান) ব্যতীত অন্যান্য বিভাগ হতে এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে কমপক্ষে জিপিএ ২.০০ প্রাপ্ত যে কোন সালে এসএসসি/সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে।
Discussion about this post