নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসার মান উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ৬ দফা দাবিতে চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই ওই মেডিকেল সেন্টারে অনশনে বসেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। অনশনে বসা মহিউদ্দিন রনি বিশ্ববিদ্যালয়টির থিয়েটার অ্যান্ড পারফর্ম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের অধ্যায়নরত ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের ১৭৩ নং রুমের আবাসিক শিক্ষার্থী।
শনিবার (৯ এপ্রিল) নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তাঁর দাবি আগামী ১২ ঘণ্টায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দাবি পূরণের নিশ্চয়তা, এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ শুরু না করলে আমরণ অনশনের হুঁশিয়ারি দেন। এর কয়েকদিন আগে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পায়ের চিকিৎসা নিতে গিয়ে নানা অসুবিধা ও অব্যবস্থাপনার শিকার হন মহিউদ্দিন।
শনিবার (৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় তিনি এই অনশন শুরু করেছেন।
রনি গত ৪ এপ্রিল ভোররাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে একটি বাইক এক্সিডেন্টে আহত হয়ে ৫ এপ্রিল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের তৃতীয় তলায় চিকিৎসাধীন আছেন। এই কয়েকদিনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের নানা অনিয়ম এবং দূরব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেছেন। তাই তিনি ছয় দফা দাবি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি বলেন, আমি গত কয়েকদিন যাবৎ এখানে চিকিৎসার জন্য পড়ে আছি। এখানে নেই কোনো নিয়মিত চিকিৎসা সেবা, নেই কোনো ওয়ার্ডবয়। আমার পায়ের সমস্যার কারণে লো কমোড টয়লেট ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু শতবর্ষের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কোনো হাই কমোড নেই! ভাবা যায় এগুলো!
মহিউদ্দিন বলেন, বাথরুমের জন্য আমার বন্ধুরা এসে টিএসসিতে নিয়ে যায়। আমাকে হাই কমোডের জন্য এত বড় ভোগান্তির শিকার হতে হবে অসুস্থ না হলে জানতামই না। এটা শুধু আমার একার সমস্যা নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ হাজার শিক্ষার্থীর সমস্যা এটা।
মহিউদ্দিন বলেন, গ্রামের দুই হাজার মানুষের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিকেও যেসব সুবিধা, ৫০ হাজার ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারীদের এই কমিউনিটি সার্ভিস সেন্টারে কেন ন্যূনতম সুবিধা থাকবে না? কেন এখানে এলেই শিক্ষার্থীদের হাতে সব রোগের মহৌষধ বলে প্যারাসিটামল দিয়ে দেওয়া হবে?
মহিউদ্দিন রনি বলেন, গতকাল আমার পোস্টকৃত ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে আমার হলের প্রোভোস্ট স্যার, আমার বড় ভাই এবং পরিবারের সবাই আমাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাচ্ছেন। তাদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ।
কিন্ত আজ যদি আমি এখান থেকে চলে যাই তাহলে এই মেডিকেল সেন্টারের পরিবর্তন আর কখনোই আসবে না। আধুনিকায়ন আর কখনোই হবে না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি প্রয়োজনে একটি পা স্যাক্রিফাইস করার জন্য প্রস্তত। তবুও আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের আধুনিকায়ন না দেখে যাবো না।
তিনি আরো জানান, গতকাল এই মেডিকেল সেন্টারের পরিচালক মহোদয় এসেছিলেন এবং তার কাছে সব চাওয়া পাওয়া উপস্থাপন করলে তিনি তার সীমাবদ্ধতা এবং অপ্রতুলতার কথাও স্বীকার করেন। কিন্তু আমি তাদের কথায় কনভিন্স হতে পারছি না। ১০০ বছর বয়স এই বিশ্ববিদ্যালয়ের।
যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেডিকেল ফি জমা না দিয়ে পরীক্ষার হলে বসতে পারে না। ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ৫০ হাজার মানুষের কমিউনিটি মেডিকেল সেন্টার এটা। অথচ এই মেডিকেল সেন্টারের দুরবস্থা।তাই আমার দাবি রমজানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের আগেই আমার ৬ দফা দাবি নিশ্চিত করতে হবে।দাবি গুলো হলো:
১. মেডিকেল সেন্টারের এন্ট্রি পয়েন্টে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করতে হবে।
২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফট, র্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য এক্সেসোরিজ প্রদান করতে হবে।
৩. মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্বর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সকল চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে।
৪. অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বা মেশিন স্থাপন করতে হবে।
৫.অতিদ্রুত মেডিকেল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অতিদ্রুত হাইকমোড, তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করতে হবে।
Discussion about this post