শফিকুল ইসলাম
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের কাঙ্ক্ষিত রেললাইনটি কবে নাগাদ চালু হবে তা নিয়ে চলছে নানান জল্পনা-কল্পনা। রেললাইনটি ঠিক কবে চালু হবে তা সুনির্দিষ্ট করে জানা না গেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি চালু হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালের জুনে প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একবছর সময় বাড়িয়ে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়।
জানা গেছে, ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিলোমিটার এবং রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক পরিবহন ছাড়াও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্যাদি পরিবহন করা যাবে।
সূত্র জানায়, ১২৮ কিলোমিটার রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি। এগুলো হলো—সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাঁও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুমধুম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হচ্ছে তিনটি বড় সেতু।
এ ছাড়া এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার, রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের জুনে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চলবে বলে প্রত্যাশা করছে সরকার। প্রকল্প কাজ ইতোমধ্যে ৬৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। করোনার প্রভাবে কাজের গতি মন্থর হলেও তা কাটিয়ে এখন কাজ চলছে পুরোদমে।
যদিও প্রকল্পের মেয়াদ একবছর বাড়ানো হয়েছে, তারপরেও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের নির্ধারিত মেয়াদ অর্থাৎ ২০২৩ সালের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। বাড়তি একবছর সময় রাখা হয়েছে লাইনটি রেল চলাচলের জন্য উপযোগী হয়েছে কিনা তা ট্রায়াল দেওয়ার জন্য। পুরো একবছরই পরীক্ষামূলকভাবে রেল চলবে। এই সময় দেখা হবে নির্মিত লাইনে কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি আছে কিনা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার যেতে প্রায় ১০২ কিলোমিটার রেলপথ তৈরি হচ্ছে। কক্সবাজারে তৈরি হচ্ছে অত্যাধুনিক মানের আইকনিক রেলস্টেশন। চকরিয়া, রামু, ঈদগাঁও, নাপিতখালী—এসব জায়গায় পৃথকভাবে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন ইতোমধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। গত মার্চ পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ৬৯ শতাংশ কাজও শেষ হয়েছে। বর্তমানে মাটিকাটা, ব্রিজ নির্মাণ, রেললাইন তৈরি, বিদ্যুৎ লাইনসহ নানা কর্মযজ্ঞ চলছে রাত-দিন। প্রকল্পের কাজ শেষ হলেই দেশের অর্থনীতির গতির পাশাপাশি সড়কপথে পাঁচ-ছয় ঘণ্টার দূরত্ব রেলপথে অর্ধেকে নেমে আসবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
রেললাইনটি চালু হলে এ অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। দোহাজারি-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতি, ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতা, বিদ্যুৎ লাইন, নির্মাণ ত্রুটিসহ নানান কারণে ২০২২ সালের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারছেন না প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। ফলে বাকি কাজ সম্পন্ন করতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময় বাড়লেও ব্যয় বাড়বে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মফিজুর রহমান।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে শুরু হয়ে ২০২১ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৬২ শতাংশ। ২০২২ সালের চলমান প্রকল্পের মেয়াদ শেষে কাজ সম্পন্ন হবে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে শতভাগ কাজ শেষ হতে লাগতে পারে আরও ছয় মাস। এ ছাড়া নির্মাণ শেষে রক্ষণাবেক্ষণ ও নানা ত্রুটি দেখা গেলে তা সংশোধনের জন্য নিয়মানুযায়ী সময়ের মেয়াদ ধরা হয়েছে আরও দেড় বছর।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘প্রকল্পটি খুবই গুরত্বপূর্ণ। করোনা আমাদের সব প্রকল্পের কাজেই গতি কমিয়ে দিয়েছে। নানান কারণেই প্রকল্পের কাজ তেমন এগোয়নি। তবে করোনার পর সেই ঘাটতি মেটাতে কাজের গতি বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়েই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রেল চলাচল করলে সমুদ্র সৈকতে পর্যটক বাড়বে। সময়-অর্থ দুটোই সাশ্রয় হবে বলে এর আশেপাশের পর্যটনকেন্দ্রগুলোর গুরুত্বও বাড়বে। এতে অর্থনীতিতে ইতবাচক প্রভাব ফেলবে। বদলে যাবে এখানকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা।’সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post