শিক্ষার আলো ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সজীব মন্ডল। সম্প্রতি তিনি লাভ করেছেন অস্ট্রেলিয়া সরকারের মর্যাদাপূর্ণ স্কলারশিপ ‘প্রেসিডেন্ট স্কলারশিপ’। এই স্কলারশিপের অধীনে তিনি সম্পূর্ণ অস্ট্রেলিয়া সরকারের অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি সিডনিতে (ইউটিএস) উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবেন।
সজীব মন্ডল জানান, ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন মূলত অনার্সের শুরু থেকেই। আমার ইচ্ছা ছিলো যুক্তরাষ্ট্র বা অষ্ট্রেলিয়া থেকে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করা। তখন থেকেই ভালো ফলাফলের চেষ্টা ও রিসার্চে মনোনিবেশ করা। যখন যা প্রয়োজন হয়েছে, নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছি। মাস্টার্সে থাকাকালীন আমার চারটার মতো পাবলিকেশন্স ভালো জার্নালে পাবলিশ হয়েছে, একটি কনফারেন্স প্রসেডিং ও একটি বুক চ্যাপ্টার বের হয়েছে।’
এসবের পিছনে ছিলেন আমার সুপারভাইজার গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম ও কো-সুপারভাইজার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হায়দার আলী বিশ্বাস স্যার। তারা আমাকে অনেক বেশি সহযোগিতা করেছেন। এছাড়াও অনার্সের শুরু থেকেই আমার ছোটমামা শোভন দাস সকল বিষয়ে কখন কি করা উচিত বা করবো দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। আর পরিবার থেকেও সবসময় সাপোর্ট পেয়েছি।পরিবারের এই স্বপ্নকে মন থেকে ধারণ করেছিলেন সজীব মন্ডলও। স্নাতকে ভর্তির পর থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি মনোযোগ দেন রিসার্চে।
নিজের রিসার্চের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘একটা আর্টিকেল জার্নালে প্রকাশ হতে ছয়মাস থেকে প্রায় দুই বছর প্রয়োজন হয়। বার বার রিভিই করতে হয়। রিসার্চের কাজ সম্পন্ন করতে গিয়ে এমন অনেক রাত গিয়েছে যে ঘুমানোর সুযোগ পর্যন্ত পাইনি। তবে প্রশান্তির বিষয় এটাই যে, এই দীর্ঘ পরিশ্রমে এখন পর্যন্ত আমার ১৪ টি আর্টিকেল প্রকাশিত হয়েছে এবং নিজের ও পরিবারের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি।’
সজীব আরও বলেন, ‘আমাদের ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালেঞ্জ আমরা ল্যাব না থাকায় প্রাইমারি ডাটা নিয়ে কাজ করার সুযোগ পাই না, আমাদের কাজ করতে হয় সেকেন্ডারি ডাটা নিয়ে। জার্নালগুলো সাধারণত আর্টিকেল প্রকাশের ক্ষেত্রে যারা প্রাইমারি ডাটা নিয়ে কাজ করে তাদের গুরুত্ব দিয়ে থাকে এবং আমরা যারা সেকেন্ডারি ডাটা নিয়ে কাজ করি তাদের কম গুরুত্ব দেয়। এছাড়া আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রিসার্চে জড়িত শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধাও কম। নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রমে অন্যন্যদের মত একই সময় দিয়ে রিসার্চে সময় দেয়া কষ্টসাধ্য। আবার আর্থিক একটি বিষয়ও থাকে, কারণ রিসার্চ করতে ফান্ডিংয়ের প্রয়োজন হয়।’
সজীব মন্ডলের মতে রিসার্চের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নিজেদের ইচ্ছাশক্তিই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়েরও যদি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের গবেষণা কাজে প্রয়োজনীয় উপকরণ এবং আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে তাহলে গবেষণাকাজে তাদের আগ্রহ আরও বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া,গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে শিক্ষকদেরও। শিক্ষার্থীদের জানাতে হবে গবেষণা কি, কেনো গবেষণা প্রয়োজন এবং গবেষণা কিভাবে একজন শিক্ষার্থীর জীবনকে সাফল্যময় করে তুলতে পারে।
গবেষণায় আগ্রহী শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে সজীব মন্ডল বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, লক্ষ্য স্থির করে সঠিক ভাবে পরিশ্রম করলে সফলতা অবশ্যই আসবে। গবেষণাকাজ সবাই করতে পারে, এখানে সিজিপিএর কোন ব্যাপার নাই, ইচ্ছা শক্তিই বড় ব্যাপার। বিশেষ করে যারা গবেষণা কাজ করছে তাদের উদ্দেশ্যে বলব – গবেষণার কাজে গভীর মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং ভালো পাবলিকেশন এর মাধ্যমে কাজের স্বীকৃতি অর্জন করা উচিত। তবে পাবলিকেশন এর ক্ষেত্রে – নর্মাল জার্নালে অনেকগুলো প্রকাশনা না করে ভালো জার্নালের একটা প্রকাশনা অধিক গুরুত্ব বহন করে
তবে গবেষণার ক্ষেত্রে সিজিপিএ গুরুত্বপূর্ণ না হলেও উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে ভালো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে অধ্যায়নের সুযোগ পেতে ইংরেজিতে ভালো দক্ষতা অর্জন এবং ভালো সিজিপিএ অর্জনেটর প্রতিও গুরুত্বারোপ করার পরামর্শ দেন এই শিক্ষার্থী। এক্ষেত্রে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয়ক্ষেত্রেই নূনতম সিজিপিএ ৩.৫০ রাখার পরামর্শ তার।
গবেষণাকার্যে সাফল্যের অবদান রাখা এই শিক্ষার্থীর লক্ষ্য তিনি অস্ট্রেলিয়া থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করার পরে পোস্ট ডক্টরেট সম্পন্ন করবেন এবং দেশে ফিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে যোগদান করে নিজের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দেবেন শিক্ষার্থীদের মাঝে, অবদান রাখবেন দেশের উন্নয়নে।
সজীব মন্ডলের এই সাফল্যের প্রসঙ্গে বশেমুরবিপ্রবির গণিত বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং সজীব মন্ডলের থিসিস সুপারভাইজার মো: সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘সজীব মন্ডল অত্যন্ত পরিশ্রমী এবং ডেডিকেটেড একটা ছেলে, গত তিন বছরে সে গবেষণায় যে পরিমাণ শ্রম দিয়েছে তাতে এটা তার প্রাপ্যই ছিল।’
এই শিক্ষক আরও বলেন, ‘আমাদের বিভাগের আরো অনেক ছাত্রই এখন ইউরোপে পিএইচডি করছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় এখন পর্যন্ত কোনো ছাত্রকে শিক্ষক হিসাবে নিজ বিভাগে নিয়োগ দিতে না পারায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণা কাজে ছাত্রদের ফান্ড না দেয়ায় আমরা খুব বেশি সংখ্যক ছাত্রদেরকে গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করতে পারছি না। শিক্ষার্থীদের গবেষণার ক্ষেত্রে আগ্রহী করে তুলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিৎ এসকল বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা।’
Discussion about this post