শিক্ষার আলো ডেস্ক
ঘরের কোণে একটা একটা করে হাজারো বই জমা করেছেন ফারুক প্রধান। দিনে দিনে তার সংগ্রহশালা হতে থাকে সমৃদ্ধ। বছরের পর বছর বইয়ে ভরাট হতে থাকে আলমিরা। শেষ পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬ হাজার। অনেক দুর্লভ ও মূল্যবান বইয়ের সংগ্রাহক তিনি। কিন্তু ভাঙা ঘরে দীর্ঘদিন জমানো বইয়ে বাসা বেঁধেছে ছারপোকা। কিছু কিছু বই নষ্ট হবার উপক্রম। এমন পরিস্থিতিতে সংগ্রহশালা থেকে ৫ হাজার বই রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামে দিয়েছেন বইপ্রেমী কবি ফারুক প্রধান।
বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় নগরীর ধাপ এলাকায় নিজ বাসভবনে বই প্রদানের ঘরোয়া আয়োজন করা হয়। নিজ হাতে প্রায় ৫০ বছর ধরে জমানো বইয়ের সম্ভার থেকে ৫ হাজার মূল্যবান বই রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামকে হস্তান্তর করেন। মূল্যবান এ উপহার গ্রহণ করেন মিউজিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা সংগঠক, সাহিত্য ও সংবাদকর্মী জাকির আহমদ। এ সময় ফারুক প্রধানকে রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা সনদ প্রদান করা হয়।
ফারুক প্রধান পরিচয়ে একজন কবি। তিনি কবিতা লেখেন, আবৃত্তি করেন এবং বই সংগ্রহ করেন, এই তিন পরিচয়েই পরিচিত। তার সংসার নেই, সন্তানও নেই। আছে অসংখ্য ভক্ত, বইপ্রেমী-গুণগ্রাহী ও শুভান্যুধায়ী। কবি ফারুক প্রধান নিজে ছড়া-কবিতা লেখায় যেমন পটু, তেমনি তিনি বইপোকা। অন্তত আড়াই হাজার বই পড়েছেন তিনি।
কবি ফারুক প্রধান জানান, রংপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় বই সংগ্রহের নেশা জাগে তার। এরপর শুরু করেন বই সংগ্রহ। যখনই ভালো বই চোখে পড়েছে, তখনি তা কিনেছেন। নিজে পড়ে অন্যকেও বই দিতেন। দিনে দিনে তার বাড়তে থাকে সংগ্রহশালা, যা এখনো থামেনি।
ষাটোর্ধ্ব এই বইপ্রেমীর কাছে বাংলা সাহিত্যের গুরুত্বপূর্ণ অনেক বই রয়েছে। তিনি দেশ ও বিদেশের বহু গুণী লেখকের বই সংগ্রহ করেছেন। বিশেষ করে বিদেশি লেখকদের বিভিন্ন বই তার কাছে রয়েছে। বাংলায় অনুবাদ করা বিভিন্ন লেখকের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সাহিত্য নির্ভর বইগুলোকে তিনি আগামী প্রজন্মের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সংগ্রহ মনে করতেন। তাই কখনো পছন্দের বই কিনতে পিছপা হননি।
কবি ফারুক প্রধান রংপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মেট্রিক পাস করে রংপুর সরকারি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ইন্টারমেডিয়েট শেষ করে এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে তিনি কোনো চাকরি করেননি। গুণী এই কবির বিশ্বাস তার সংগ্রহশালা থেকে রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামে হস্তান্তর করা বইগুলো আগামী প্রজন্মের জন্য অনেক বেশি গুরুত্ববহন করবে।
সন্ধ্যায় আলমিরা থেকে একটা একটা করে প্রায় পাঁচ হাজার বই সাজানো হয়। পরে সেগুলো বাঁধাই করে একটি ছোট্ট পিকআপ ভ্যানে নিয়ে যাওয়া হয়। পঞ্চাশ বছরের জমানো সংগ্রহশালা থেকে একসঙ্গে পাঁচ হাজার বই হস্তান্তরের সময় অনেকটা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েছিলেন কবি ফারুক প্রধান। তার এই মহতি উদ্যোগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে মিউজিয়ামের পক্ষে কৃতজ্ঞতা সনদ প্রদান করেন বিশিষ্ট কবি ও কথাসাহিত্যিক রানা মাসুদ।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির মানিক, ছড়াকার শরিফুল আলম অপু, কবি ফারুক প্রধানের ভাই গোলাম রব্বানী প্রধান, গোলাম সাদিক প্রধান, গোলাম সাব্বির প্রধান, পাতা প্রকাশের কর্মকর্তা শাহরিয়ার শয়ন, তাফসিরুল ইসলাম, সৌখিন বাবু প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের মার্চে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক মতিউর রহমান বসনীয়া কিছু বই প্রদানের মাধ্যমে রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামের যাত্রা শুরু হয়। বই সংগ্রহ কার্যক্রম এখনো চলমান। যে কেউ চাইলে এই মিউজিয়ামে বই প্রদান করতে পারবেন। রঙ্গপুর বুক মিউজিয়ামটি রংপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মমিনপুরের লস্করবাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হবে।সৌজন্যে-ঢাকাপোষ্ট
Discussion about this post