তৌহিদুজ্জামান তন্ময়
গান-বাজনাসহ শব্দ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এর প্রমাণ মিলছে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর তিন বছরের কলের সংখ্যা থেকে। ২০১৯ সালে উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ৯৯৯ ফোন করেন ৫ হাজার ১৭ জন, ২০২০ সালে ফোন করেন ৭ হাজার ৯৫২ ও ২০২১ সালে ফোন করেন ৯ হাজার ২৩৮ জন। এরপর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ফোন করেন ৮ হাজার ২৮৭ জন।
গত তিন বছরের বেশি সময়ে মোট কল করেছেন ৩০ হাজার ৪৯৪ জন। গান-বাজনাসহ শব্দ যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে এই সময়ে গড়ে প্রতিদিন ২২ জনের বেশি কল করছেন জাতীয় জরুরি সেবায়।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর পরিদর্শক (মিডিয়া) আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, শব্দদূষণের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে থার্টিফার্স্ট নাইটে। এরপর বিয়ে, গায়ে হলুদ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানেরও অভিযোগ আসছে প্রতিনিয়তই। পুরান ঢাকার সাকরাইন উৎসবে ডিজে পার্টি ও উচ্চইঃস্বরে সাউন্ডবক্স বাজানোর অভিযোগও আসে। জাতীয় দিবসগুলোতেও কোনো না কোনো এলাকা থেকে অভিযোগ আসে সারারাত উচ্চশব্দে গান বাজানো হয়। এছাড়া নির্মাণকাজের শব্দের বিষয়েও অভিযোগ আসে গভীর রাতে।
তিনি বলেন, বিকেলের দিকে গায়ে হলুদে গান বাজতেই পারে। তবে তা যদি গভীর রাত পর্যন্ত চলে আর আমাদের কাছে অভিযোগ আসে সেক্ষেত্রে আমরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানাই। এক্ষেত্রে যদিও আইন প্রয়োগের কথা রয়েছে তবে বিয়ের কারণে অনেক সময় আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের বুঝিয়ে উচ্চইঃস্বরে গান বন্ধ করতে বলা হয়।
আনোয়ার সাত্তার আরও বলেন, ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন ওয়াজ মাহফিলের ক্ষেত্রে যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকে সেক্ষেত্রে আইনগতভাবে পুলিশের করার কিছু থাকে না। সামাজিক অনুষ্ঠানে সামাজিকতার বিষয় আছে। ৯৯৯-কে জানালে ৯৯৯ সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে জানায়। ভবন নির্মাণকাজের সময় প্রায় ফোন আসে শব্দদূষণের জন্য। আইনেও রয়েছে সন্ধ্যা ৭টার পর কোনো নির্মাণকাজ করা যাবে না। তবে সম্পূর্ণভাবে ব্যবস্থা নিয়ে শব্দদূষণ সমাধান করা সম্ভব হবে না, যদি সমাজের সবাই এক্ষেত্রে এগিয়ে না আসে।
৯৯৯ এ যত ফোনকল
চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন লালমনিরহাট সদরে রাস্তার ওপর পড়েছিল মাত্র একদিন বয়সী নবজাতক মেয়েশিশু। শিশুটিকে দেখতে পেয়ে তৎক্ষণাৎ জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, ঠান্ডায় শিশুটির শরীর নীল হয়ে গেলেও শিশুটি বেঁচে আছে। পরে পুলিশ ওই নবজাতককে উদ্ধার করে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।
১৯ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পাশের বাড়ির দোকানির দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় সাত বছর বয়সী এক শিশু। ধর্ষণের পর ভুক্তভোগী শিশুটি লজ্জায় বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। পরে শিশুটির পরিবার জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন করে বিষয়টি জানায়। ৯৯৯-এর ফোনে তাৎক্ষণিক ওই দোকানিকে গ্রেফতার ও শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে এক সদ্যজাত সন্তানের ভ্যানচালক বাবা ফোন করেন। তার দাবি, হাসপাতাল বেশি বিল করেছে। বিল পরিশোধ করতে না পারায় হাসপাতাল থেকে স্ত্রীর মরদেহ ও সদ্যজাত সন্তানকে নিয়ে যেতে পারছেন না। অবশেষে অসহায় বাবা সহায়তায় জন্য ফোন করেন ৯৯৯ এ, এগিয়ে আসে কলাবাগান থানা পুলিশ।
২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর চালু হওয়া জরুরি এই সেবার প্রতি সারাদেশের মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টা দেশের যেকোনো প্রান্তে বিপদগ্রস্ত মানুষ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলেই ছুটে আসছেন পুলিশ সদস্যরা। সহায়তা পাচ্ছেন সবাই। সন্ত্রাস, দুর্ঘটনা, বাল্যবিয়ে ঠেকানো, ধর্ষণ, অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো বিপদের একটাই ভরসা ৯৯৯। তিনটি জরুরি সেবা- অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা দিতেই পথচলা ৯৯৯-এর। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিপদাপন্ন মানুষ প্রয়োজনীয় সহায়তা পাচ্ছে সেখানে সরাসরি ফোন করে। একই সময়ে ৯০ জন সেবাপ্রত্যাশী নিতে পারেন সেবা। কাজ হয় তিন শিফটে। সমাজে বিভিন্ন অপরাধে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার, গৃহকর্মী নির্যাতন রোধ, পারিবারিক নির্যাতন বন্ধ ইত্যাদিতে ৯৯৯ প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছে। ৯৯৯-এ ফোন করে ঝামেলা এড়িয়ে সহজে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসসহ বিভিন্ন জরুরি সেবা পাচ্ছে মানুষ।
৯৯৯-এর ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের গত এপ্রিল পর্যন্ত ফোন এসেছে তিন কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৩টি। এর মধ্যে দুই কোটি ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৮টিই অপ্রয়োজনীয় ফোনকল; শতাংশ হিসাবে যা দাঁড়ায় ৬৭ দশমিক শূন্য ৪।
সেবামূলক এ সংস্থার প্রধান হিসেবে রয়েছেন একজন অতিরিক্ত ডিআইজি। এছাড়া আছেন একজন পুলিশ সুপার, তিনজন সহকারী পুলিশ সুপার, ৩৫ জন পরিদর্শক, ২৬ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই), ৩৪ জন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এবং ৩২৩ জন কনস্টেবল। এর মধ্যে ৬৩ জন নারী। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের আটজন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ছয়জন কর্মরত রয়েছে ৯৯৯-এ।
অকারণেও বহু মানুষ ফোন করে ৯৯৯-এ। ভূতুড়ে ফোনও (কল করে কথা বলে না) করেন অনেকে। কেউ কেউ ফোন করে বলেন, তার বাচ্চা খেতে চাইছে না, এটার সমাধান কী? এছাড়া ফোন করে সেবা না চেয়ে নারী কণ্ঠ পেলে উদ্ভট কথাবার্তা বলেন কেউ কেউ। মিসড কল দেওয়া ব্যক্তির সংখ্যাও কম নয়। একই নম্বর থেকে একাধিকবার ব্লাঙ্ক কলও দেওয়া হয়। এসব ফোন নম্বরে ৯৯৯ থেকে সতর্ক করে পাঠানো হয় মেসেজ। এরপরও বারবার ফোন করে বিরক্ত করলে সেই নম্বর ব্লক লিস্ট করে রাখা হয়। যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে টেলিফোন করে বিরক্ত করলে তার শাস্তির বিধান রয়েছে আইনে। এ ধরনের অপরাধে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়ার কথা বলা আছে। তবে তা কার্যকর করার মতো উদাহরণ এখনও দেখা যায়নি। এ আইন বাস্তবায়ন করা গেলে ভূতুড়ে ফোনের উৎপাত অনেকটাই কমানো সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ভীমরুলের চাকে কেউ ঢিল মারছে। এরপর ভীমরুল বের হয়েছে। ভীমরুল যাতে মানুষকে না কামড়ায় তা ৯৯৯ কীভাবে ঠেকাবে? এমন একটি ঘটনায় একটি অনলাইন পোর্টাল নিউজ করেছে ‘ভীমরুলের চাকে ঢিল, ৯৯৯ বললো এ বিষয়ে কিছু করার নেই।’
৯৯৯-এ সেবা নেওয়া গত তিন বছরে ফোনকল পর্যালোচনে করে দেখা গেছে, মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন করে সেবা পান ৯৮ হাজার ৩৮৬ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফোনকল দেওয়া হয় জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ৮৩ হাজার ৩০২। অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে তৃতীয় সর্বোচ্চ ফোনকল আসে ৯৯৯-এ ৫৩ হাজার ৫৩২টি। এরপর রয়েছে- দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ৪০ হাজার ৬৭২ জন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৩০ হাজার ৬৩৮ জন, পারিবারিক সহিংসতা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২৫ হাজার ৩১৯ এবং উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২২ হাজার ২০৭ জন।
৯৯৯-এ কল আসা গত তিন বছরের বেশি সময়ে সেবা গ্রহীতার চিত্র
২০১৯ সাল
তথ্যচিত্রে ৯৯৯ এ আসা ফোনকল-ছবি জাগো নিউজ
২০২০ সাল
জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ৩২ হাজার ৮৩৬ জন, অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১৭ হাজার ৫২৯, মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৩৪ হাজার ৯৩২, পারিবারিক সহিংসতা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৯ হাজার ৪১, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১২ হাজার ৬৮৭, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারণে ফোন করেন ১১ হাজার ৬০৭, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৭ হাজার ৯৫২, জুয়া খেলা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৭ হাজার ৫২৬, জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৬ হাজার ৩৩৮ ও করোনা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১৮ হাজার ৭০০ জন।
২০২১ সাল
জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ৩৩ হাজার ৯১০ জন, অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২০ হাজার ২৮৫, মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৪৮ হাজার ৪৩০, পারিবারিক সহিংসতা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১২ হাজার ৯২, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১৮ হাজার ১৩৩, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কারণে ফোন করেন ১৩ হাজার ৯২, উচ্চইঃস্বরে গানবাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দ দূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৯২ হাজার ৩৮, জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১৩ হাজার ৪০ ও নারী, শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১১ হাজার ২১১ এবং চুরি সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৮ হাজার ৫৮৩ জন।
৯৯৯- এ অর্ধেকের বেশি মানুষের অযথা ফোন
৯৯৯-এর ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের গত এপ্রিল পর্যন্ত ফোন এসেছে তিন কোটি ৬৭ লাখ ৩০ হাজার ৮৩৩টি। এর মধ্যে দুই কোটি ৪৬ লাখ ২৩ হাজার ৪৯৮টিই অপ্রয়োজনীয় ফোনকল; শতাংশ হিসাবে যা দাঁড়ায় ৬৭ দশমিক শূন্য ৪। যার মধ্যে এক কোটি ৬১ লাখ ২৯ হাজার ৫৩৯টি ভূতুড়ে কল করে কোনো কথা না বলে চুপ থাকে ফোনদাতা। ২১ লাখ ৮৩ হাজার ৯৯৫ জন ফোন করে সেবা চাওয়ার বদলে উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলে। মিসড কলের সংখ্যা ৩৭ লাখ ২১ হাজার ১২৭টি। ৯৯৯ কি না তা যাচাই করতে ফোন আসে ২৫ লাখ ৮৮ হাজার ৮৩৭টি।
চলতি বছরের গত চার মাসে ৯৯৯-এ কল আসা সেবা গ্রহীতার চিত্র
জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশি মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৪ হাজার ৬৬৭ জন। এরপর রয়েছে উচ্চইঃস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ৬৮৭ জন। নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ১০৯ জন, অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৮৭৭, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৭৫২, জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ৩৫৯ ও জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৪৯১ জন।
৯৯৯ অফিসের ভেতরের দৃশ্য
ফেব্রুয়ারি মাসে ৯৯৯ থেকে সবচেয়ে বেশি ফোনকল আসে মারামারি সংক্রান্ত কারণে ৪ হাজার ৯৮১ জন। এরপর উচ্চইঃস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৩ হাজার ২২৪ জন। জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ৩৭৮ জন, অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ৩৩৫, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৭৬৫, জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৪৯১ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ২১৭ জন।
মার্চ মাসেও সবচেয়ে বেশি কল আসে মারামারি সংক্রান্ত কারণে। এ কারণে ফোন করেন ৫ হাজার ১০৪ জন। এরপরেই রয়েছে- অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৩ হাজার ১৩৯ জন, উচ্চস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ১১১, জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৯২২, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৭৬৫, জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৭২১ এবং ও নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ২৪১ জন।
গত মাসে (এপ্রিল) সবচেয়ে বেশি কল আসে। মারামারি সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ৬ হাজার ৪৭৪ জন। অগ্নিকাণ্ড সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২ হাজার ৯২ জন, জরুরি চিকিৎসাসেবাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৯৮৫, দুর্ঘটনাজনিত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৮৩৫, নারী ও শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৭২১, জমিজমা সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ১ হাজার ৬৪৭ ও উচ্চইঃস্বরে গান-বাজনা ও মাইকিংসহ বিভিন্ন শব্দদূষণ সংক্রান্ত কারণে ফোন করেন ২৬৫ জন।
জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এর পরিদর্শক (মিডিয়া) আনোয়ার সাত্তার জাগো নিউজকে বলেন, ইউরোপের দেশগুলোতে যেমন সেবা দেওয়া হয় সেই তুলনায় বাংলাদেশের আর্থসামাজিকতার ওপর চিন্তা করলে রাজনৈতিক অবস্থা, শিক্ষার হার, সমাজের ভালো-খারাপ ও অন্যান্য চিত্র দেখলে ৯৯৯ সবার উপরে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ৯৯৯ এর কাজ হলো মাধ্যম হিসেবে কাজ করা। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে ৯৯৯ সংশ্লিষ্ট থানার সঙ্গে সংযুক্ত করে দেবে এবং সমস্যা সমাধানের আপডেট নেবে। তবে সমাধানের ক্ষেত্রে থানার যদি গাফিলতি থাকে সেটি ৯৯৯ এর দেখার বিষয় নয়। থানার গাফিলতি দেখার জন্য আলাদা কর্তৃপক্ষ রয়েছে।
৯৯৯ অফিসে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ছবি
তিনি বলেন, ৯৯৯-এর কারও যদি গাফিলতি থেকে থাকে সঙ্গে সঙ্গে সেটি আমরা শনাক্ত করি। আমাদের প্রতিটি কল রেকর্ড থাকে। যদি কারও গাফিলতি থাকে তাহলে পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এছাড়া ট্রেনিং ও মোটিভেশন দিয়েই একজন পুলিশ সদস্যকে ৯৯৯-এ আনা হয়।
জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ৯৯৯ এর কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা নিজেরা তা সমাধান ও সংশোধনের চেষ্টা করে যাচ্ছি। শুরুর দিকে সেবা প্রদান করতে যে ভুলগুলো হতো তা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হয়েছে। ৯৯৯ এর এখনও জনবল পাস হয়নি। যেখানে যারা কাজ করেন তারা পুলিশের অন্য ইউনিটের। পুলিশের অন্য ইউনিটের নিজস্ব বাজেট থাকলেও ৯৯৯ এর নিজস্ব কোনো বাজেট নেই। তবে আগের চাইতে সার্ভিস তুলনামূলক অনেক উন্নত হয়েছে। সেবার মানও বাড়ানো হয়েছে।
তিনি বলেন, ৯৯৯ এ যারা অযথা কল করছে তাদের নম্বর নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ব্লক লিস্টে রাখা হচ্ছে। প্রকাশিত গেজেট অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে। তবে আমরা চাই পরিশুদ্ধভাবে এগোতে। সবাই সচেতন হলে আমাদের সেবা দেওয়াও সহজ হবে।সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post