অনলাইন ডেস্ক
ডিএনএ নমুনা দিতে এসে ফুপির কোলে বসে স্বভাবসুলভ খেলছিল ফাইজা রহমান। কখনো সামনে থাকা কলম নিয়ে আঁকা আঁকি করছিল। কখনো ফুপির হাত ধরে হাসছিল। বাবার অন্তিম পরিণতি সম্পর্কে এখনো যে জানার বয়স হয়নি শিশুটির। একটু পরেই নমুনা হিসেবে তার মুখের লালা নেওয়া হয়। এটাতেও মজা পাচ্ছিল সে। পাশে দাঁড়িয়ে তখন চোখের জল ফেলছিলেন ফাইজার মা ইস্ফাহান সুলতানা।
ফাইজার বাবা আবদুস সোবহান সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোতে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। যে ডিপোতে শনিবার রাতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে এখন পর্যন্ত ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জনের মরদেহ শনাক্ত করা গেছে। বাকিরা একটু বেশিই দগ্ধ হওয়ায় তাঁদের শনাক্ত করা যায়নি। তাঁদের মধ্যে আবদুস সোবহানও আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। যাদের এখনো শনাক্ত করা যায়নি তাঁদের স্বজনদের নমুনা নেওয়া হচ্ছ।
আবদুস সোবহানের পরিবারের সদস্যরা জানান, সোবহানের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন পরিবারের সদস্যরা। কিন্তু সেখানে কোনো খোঁজ মেলেনি সোবহানের। এরপর আজ ডিএনএ নমুনা দিতে এসেছেন তাঁরা। ফাইজারের পাশাপাশি নমুনা নেওয়া হয় তার ফুপি উম্মে কুলসুমেরও।
২০১৩ সাল থেকে আইসিডি দপ্তরে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে কাজ করতেন আবদুস সোবহান। আড়াই বছর আগে ইস্ফাহান সুলতানাকে বিয়ে করেন বাঁশখালীর নাপোড়ার সোবহান।
স্বামীর সঙ্গে শেষ কথা বলার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ইস্ফাহান সুলতানা বলেন, ‘শনিবার রাতে ভিডিও কলে সে আগুনের ঘটনা দেখাচ্ছিল আমাকে। আমি তাঁকে বারবার বলছিলাম দূরে সরে যেতে। সে বলছিল নিরাপদ দূরত্বেই আছে। কিন্তু ভিডিওকলে কথা চলতে চলতেই হঠাৎ বিস্ফোরণ ঘটে। এরপর থেমে যায় কথা। বন্ধ হয়ে যায় ফোনও। তারপর আর খোঁজ পাইনি স্বামীর।’
ইস্ফাহান সুলতানা আরও বলেন, ‘স্বামীর কোনো খোঁজ না পেয়ে চমেক হাসপাতালে আসি। সেখানেও তাঁর কোনো খোঁজ পাইনি। এখন নমুনা দিতে এলাম।’
Discussion about this post