করোনাভাইরাসের সংকট নিয়ন্ত্রণে এলে একদিন অন্যদেশগুলোও চীনের মতো মৃতের সংখ্যা সংশোধন করবে। শুক্রবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এমন মন্তব্য করা হয়েছে। বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকেই ছড়িয়ে পড়ে নভেল করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯। করোনাভাইরাসে চীনে যত মানুষ মারা গেছে তার বেশিরভাগই উহানের। শুক্রবার দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই উহানে মৃতের সংখ্যা ৫০ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। মোট মৃতের সংখ্যার সঙ্গে নতুন করে ১ হাজার ২৯০ জনকে যুক্ত করা হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা হঠাৎ বাড়িয়ে দেখানোর কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, কিছু মৃত্যুর ঘটনা ‘ভুলক্রমে’ বাদ পড়ে গিয়েছিল। সেসব তথ্য বিশ্লেষণ করে উহানে মৃতের সংখ্যা পুনরায় প্রকাশ করা হয়েছে।
এমন এক সময় এ ঘোষণা এলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্ররা করোনাভাইরাসে মৃত ও আক্রান্তের বিষয়ে চীনের দেওয়া হিসাব নিয়ে সন্দিহান। তবে বেইজিং এ অভিযোগ নাকচ করে আসছে বার বার।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ডিসেম্বরে উহানে প্রথম কভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে শহরটি একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সব মৃত ও আক্রান্তের পরিসংখ্যান রাখতে পারেনি।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট লিখেছে, উহানের কর্তৃপক্ষ শুরু থেকেই করোনার প্রাদুর্ভাব ধামাচাপা দিতে চেয়েছে। যে কয়েকজন চিকিৎসক নতুন ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করতে চেয়েছিলেন তাদের হেনস্থা করা হয়। আর উহানে যখন প্রাদুর্ভাব ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন কর্তৃপক্ষের হিসাবের ধরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল।
শুক্রবার জেনেভার সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কভিড-১৯ বিষয়ক কারিগরি প্রধান মারিয়া ভন কেরখোভে বলেন, প্রাদুর্ভাব যখন ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে তখন সবসময় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমি মনে করি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শেষ হওয়ার পর অন্য দেশগুলোও একদিন মৃত ও আক্রান্তের সংখ্যায় সংশোধন আনবে।
ভন কেরখোভে আরও বলেন, উহানের হাসপাতালগুলোতে অনেক সময় নতুন রোগী ভর্তির উপায় ছিল না। অনেকে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিতে গিয়ে মারা গেছেন। বড় কথা হলো, তখন স্বাস্থ্য কর্মীরা মানুষের জীবন বাঁচাতে তৎপর ছিলেন। ফলে সংখ্যা নিয়ে ‘পেপার ওয়ার্কের’ সময় তাদের ততটা ছিল না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এমারজেন্সি ডাইরেক্টর মাইকেল রায়ান বলেছেন, তথ্যের ক্ষেত্রে সব দেশকেই উহানের মতো পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে তথ্য যত তাড়াতাড়ি প্রকাশ করা যায় ততই মঙ্গল।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ‘চীনঘেঁষা’ বলে অভিযোগ করেন। এরপর তিনি সংস্থাটিকে অর্থায়ন বন্ধের ঘোষণা দেন।
Discussion about this post