নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) গুণগত মান বৃদ্ধি করতে হলে যুগোপযোগী শিক্ষা পদ্ধতি চালু, শিক্ষকদের মূল্যায়ন, পাঠদান পদ্ধতির পরিবর্তন ও শিক্ষার্থীদের পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলার বিকল্প নেই বলে মনে করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
শনিবার যুক্তরাজ্যে বসবাসরত ঢাবি অ্যালামনাইদের সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে আয়োজিত ভার্চুয়াল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বাড়াতে অ্যালামনাইদের এগিয়ে আসতে হবে। পৃথিবীর যেসব বিশ্ববিদ্যালয়গুলো র্যাংকিংয়ে ভালো করছে তাদের গবেষণা বরাদ্দ অনেক বেশি। উন্নত বিশ্বের অক্সফোর্ড, ক্যামব্রিজ বা হার্ভাডের বিলিয়ন পাউন্ডের এনডাউনমেন্ট ফান্ডের যোগানদাতা সেইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় বরাদ্দ বাড়াতে হলে এনডাউনমেন্ট ফান্ডের কোনো বিকল্প নেই।
নওফেল বলেন, আমি ঢাবির এক অ্যালামনাইকে এনডাউনমেন্ট ফান্ডের কথা বলেছিলাম যার ৭টা জাহাজ আছে। তিনি আমাকে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ সহায়তা দেবে সরকার। তার এই বক্তব্যে আমি হতাশ হয়েছিলাম।
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন নওফেল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান, সরকার স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক সহায়তা করলেও ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। সরকারের অর্থের বাইরে অতিরিক্ত গবেষণার বরাদ্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আয় থেকে সংগ্রহের তাগিদ দেন মন্ত্রী।
সেমিনারের বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ঢাবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের কাছে প্রশ্ন ছিল শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পর শিক্ষার্থীদের দ্বারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মূল্যায়ন পদ্ধতি কবে চালু করবে? জবাবে তিনি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে এই পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন বলে আশ্বাস দেন। ঢাবি নিজস্ব অর্থায়নে পিএইডি ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপ-উপাচার্য।
তবে গবেষকদের চার বছরের মধ্যে পিএইডি সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হবে। সেই সঙ্গে কিউ-১, কিউ-২ ও কিউ-৩ জার্নালে কমপক্ষে দুইটি লেখা প্রকাশ করার বিধান চালু করলে র্যাংকিং পেতে সহজ হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসম্মত গবেষণা ও প্লেজারিজম ঠেকাতে কঠোর উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানান উপ-উপাচার্য।
অনুষ্ঠানের চেয়ার থার্ড সেক্টর কনসালটেন্ট বিধান গোস্বামী সমাজে বৈষম্য দূর করতে হলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকে একটি সমন্বিত শিক্ষা পদ্ধতি চালুর ব্যাপারে উপমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে শিক্ষকদের ওপর হামলা বন্ধে প্রয়োজনে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি জানান তিনি।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডায় কর্মরত শিক্ষক ও পেশাজীবী অ্যলামনাইদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খন্ডকালীন কাজের সুযোগ দিয়ে আন্তর্জাতিক মান বাড়াতে ঢাবিকে প্রস্তাব দিয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকে। সেই প্রস্তাব কার্যকর করায় প্রফেসর মাকসুদ কামালকে ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের মডারেটর সাংবাদিক তানভীর আহমেদ।
‘অক্সফোর্ড দ্য ইস্ট ও ওয়েস্ট শিরোনামে ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব ইউকের উপদেষ্টা ও সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক লেকচারার ড. আবদুল হান্নান, মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোজাম্মেল আলী, ব্যারিস্টার চৌধুরী হাফিজুর রহমান, ইউনিভার্সিটি অব লিংকনের সহযোগী অধ্যাপক ড. মাহফুজ রহমান, প্রধানমন্ত্রী স্কলারশিপে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজানুর রহমান, নাদিরা নাজনিন রাখী, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অক্সফোর্ড স্কলার অমৃতা পন্ডিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর সৈয়দ মাসুদ রেজা, মিডলসেক্স ইউনির্ভসিটির লেকচারার ড. মানজিদা আহাম্মেদ। অনুষ্ঠানের অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ মাসুদ কামাল।
প্রশ্নোত্তর পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অপ্রয়োজনীয় বিষয় বাদ দিয়ে যুগোপযুগী বিষয় অন্তর্ভুক্তি, মেধার মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভর্তি পদ্ধতির সংশোধন, বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ গ্রহণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া, অনলাইনে ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে কোর্স নম্বরের পাশাপাশি বিষয়ের নাম উল্লেখ করা, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য লাইব্রেরিতে কম্পিউটার ব্যবহার নিশ্চিত করে নিজস্ব ই-মেইল আইডি প্রদান করা, লাইব্রেরিকে শুধুমাত্র বিসিএসের প্রস্তুতির জন্য ব্যবহার না করে প্রকৃত জ্ঞান চর্চার স্থান হিসেবে গড়ে তোলা ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষার সঙ্গে কর্মক্ষেত্রের যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর জোর দেন আলোচকরা।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবের ম্যানেজমেন্ট সদস্যদের মধ্যে ব্যারিস্টার কাজী আশিকুর রহমান, পলি জাহান, মহসিন উদ্দীনসহ সিনিয়র অ্যালামনাইরা।
ভার্চুয়াল আলোচনায় আগামী ১০ সেপ্টেম্বর ঐতিহাসিক অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ উদযাপনের ঘোষণা দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুক্তরাজ্যের অ্যালামনাইদের সঙ্গে এ উৎসবে যোগ দেবেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
Discussion about this post