অনলাইন ডেস্ক
১৪৪৩ হিজরি পবিত্র হজ আজ। দুই বছর বিরতির পর সারাবিশ্ব থেকে ১০ লাখ হজযাত্রী অবস্থান নিয়েছে ঐতিহাসিক আরাফায়। প্রতি হিজরি বছরের ৯ জিলহজ মুসলিম উম্মাহকে হজ পালনে ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হতে হয়। নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল-হাজ্জু আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হওয়াই হজ। এ দিন মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি মানুষকে ক্ষমা করেন। ক্ষমার আশায় সারাবিশ্ব থেকে আগত হজযাত্রীর আরাফায় তাকবির, তালবিয়া, ক্ষমা প্রার্থনা ও কান্না-রোনাজারিতে ব্যস্ত। বিশ্ব মুসলিমের মহাসম্মিলন স্থল বা মিলনমেলা এ আরাফার ময়দান। আরাফায় অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে হজের ভাষণ দেবেন শায়খ ড. মোহাম্মদ বিন আবদুল করিম আল ঈসা।
কণ্ঠে তাদের সমস্বরে উচ্চারণ হচ্ছে- লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্নি’মাতা লাকা ওয়ালমুক। অর্থাৎ- আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সম্রাজ্যও তোমার।
করোনা মহামারির কারণে দুই বছর সীমিত পরিসরে হজপালনের পর এবার ১০ লাখ মুসলিম সমবেত হবেন আরাফার মাঠে। এখানেই হজের খুতবা প্রদান করা হবে। এই সেই আরাফাতের ময়দান, যেখানে দাঁড়িয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বিদায় হজের ভাষণ দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি বুকে ধারণ করে মুসলিমরা সমবেত হচ্ছেন এই মরুর প্রান্তরে।
বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ার পর এই হজ নিয়ে দারুণ খুশি হজযাত্রীরা। পবিত্র কাবাঘরকে তাওয়াফ করে বুধবার থেকে হজযাত্রীরা মিনায় সমবেত হতে শুরু করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার মক্কায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই প্রখর রোদে হজযাত্রীরা অবস্থান করেন মিনায়।
আজ ফজরের পর থেকেই হাজিগণ মিনা থেকে আরাফার ময়দানে উপস্থিত হবেন। এখানে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সুর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে হবে। আরাফার ময়দানে অবস্থান তথা উ’কুফে আরাফা হজের একটি ফরজ আমল। তবে দুপুরে সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে যাওয়ার পর থেকে সুর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করা ওয়াজিব। কেউ যদি সূর্যাস্তের পূর্বে আরাফার সীমা অতিক্রম (ত্যাগ) করে তাহলে তাকে অবশ্যই দম (অতিরিক্ত পশু কোরবানি করা) দিতে হবে। মাগরিবের আজান পরে হাজিগণ মুজদালিফার উদ্দেশে রওয়ানা করবেন। মুজদালিফায় পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করে বিশ্রাম নেবেন।
তারপর পাথর সংগ্রহ করবেন জামারায় প্রতীকী শয়তানকে নিক্ষেপের জন্য। এদিন রাতে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করবেন তারা। তারপর শনিবার সকালে সূর্যোদয়ের পর পাথর নিক্ষেপ করবেন হজযাত্রীরা। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পশু কোরবানি করবেন। কোরবানি করে মাথা মুণ্ডন করবেন। এহরাম খুলে পরবেন সাধারণ পোশাক। আবার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সাফা-মারওয়ায় সাতবার চক্কর দেবেন। এরপর আবার ফিরে যাবেন মিনায়।
বিদেশি হজযাত্রীদের জন্য করোনা মহামারির ২ বছর পর সীমান্ত খুলে দেওয়া সৌদি সরকার অবশ্য বিগত যে কোনো বছরের তুলনায় এবার হাজিদের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ। কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সৌদি দৈনিক আরব নিউজ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছর হজযাত্রীদের জন্য ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দুই শহর মক্কা ও মদিনায় ২৩টি হাসাপাতাল ও ১৪৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
তাছাড়া মিনা শহরেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৪টি হাসপাতাল ও ২৬টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র। হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ১ হাজারেরও বেশি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে, আর এসব শয্যার মধ্যে ২০০টিরও বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের জন্য।
মক্কা, মদিনা ও মিনায় হজযাত্রীদের জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে নিয়োগ করা হয়েছে হাজার হাজার ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী। কেবল মিনাতেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ২৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে।
করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছর পবিত্র হজে ছিল নানা বাধ্যবাধকতা। তবে এবার অনেকটা মুক্ত অবস্থায় পালিত হচ্ছে হজ। তাই হজযাত্রীদের মধ্যে অন্যরকম এক আবেগ কাজ করছে। তারা মুখে মাস্ক ছাড়াই হজ করতে পারছেন। করোনা ভাইরাসের অনুমোদিত টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নিয়েছেন- এমন ১০ লাখ হজযাত্রী হজ পালন করছেন। এর মধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার হজযাত্রী বিদেশি। বাকিরা সৌদি আরবের নাগরিক।
Discussion about this post