মুহাম্মাদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স
আধুনিক কৃষিবিজ্ঞান, প্রকৌশল, প্রযুক্তি ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগে দক্ষ জনশক্তি গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ২০০০ সালের ৮ জুলাই যাত্রা শুরু করে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি)। দেখতে দেখতে এই সবুজ ক্যাম্পাস আজ পার করছে ২১ বছর। ক্যাম্পাসটি নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বাতন্ত্র্য বজায় রেখে প্রযুক্তিনির্ভর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে আজ ৮ জুলাই পদার্পণ করতে যাচ্ছে গৌরবময় সাফল্যের ২২ বছরে।
২০০০ সালে দক্ষিণবঙ্গের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। প্রাথমিকভাবে কৃষি, সিএসই ও বিবিএ তিনটি অনুষদে ছাত্রছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, যা সময়ের পরিক্রমায় আজ ৮টি অনুষদের অধীনে (কৃষি অনুষদ, সিএসই অনুষদ, বিএএম অনুষদ, মাৎস্য বিজ্ঞান অনুষদ, অ্যানিম্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদ, নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড সায়েন্স অনুষদ এবং ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অনুষদ) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই আটটি অনুষদের অধীনে ৯টি ডিগ্রি দেওয়া হচ্ছে। ৮৯.৯৭ একর আয়তনের ওপর প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে ৩৬৯১ জন, স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ৪৫১ জন এবং পিএইচডি পর্যায়ে ২৪ জন ছাত্রছাত্রী অধ্যয়নরত। ২৫৩ জন শিক্ষক, ১৮৩ জন কর্মকর্তা ও ৫২৯ জন কর্মচারী কর্মরত রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সুবিধা প্রদানের জন্য পাঁচটি ছাত্র হল এবং তিনটি ছাত্রী হল রয়েছে।
পটুয়াখালী জেলার দুমকী উপজেলা শহরের দৈনন্দিন খরচ অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় কম। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ব্যয়ও অসচ্ছল পরিবারের সামর্থ্যের মধ্যে রাখা হয়েছে। প্রায় সব শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন ব্যবস্থা চালু আছে। তার পরও বরিশাল বিভাগীয় শহর এবং পটুয়াখালী জেলা শহর থেকে আসা-যাওয়ার জন্য রয়েছে সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা। বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্তের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ক্যাম্পাসটিকে ডিজিটাল করার এবং বর্তমান অনলাইন সুবিধা প্রশংসিত। তিনি লাইব্রেরিটিকে আরও আধুনিক করার জন্য পরিকল্পনা নিয়েছেন। কভিড-১৯ মহামারির কারণে স্থবির শিক্ষা কার্যক্রমকে সচল করার লক্ষ্যে অনলাইনে পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন এবং ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে একটি রিকভারি প্ল্যান তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেণন। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে দুমকীসহ পটুয়াখালী, বরগুনা ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন প্রান্তিক চাষিদের চাষাবাদের ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার, মৎস্যজীবীদের উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মাছ চাষ, মাছের পরিচর্যা ও সংরক্ষণ, গবাদি পশু পালন ও চিকিৎসা সুবিধা প্রদান, খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে সিএসই অনুষদ এবং কৃষি ব্যবসা ও বিপণন ব্যবস্থাপনার জন্য বিএএম অনুষদ একত্রে কাজ করে চলছে। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন সংস্থার অর্থায়নে ৮৪টি গবেষণা প্রকল্প চলমান রয়েছে। এসব গবেষণা প্রকল্প থেকে আহরিত জ্ঞান দেশের উন্নয়নের কাজে লাগানো হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়টির উত্তরোত্তর উন্নয়নের জন্য বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকার ফার্দার ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ও অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে। সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম (ব্লু ইকোনমি) জোরদারকল্পে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় মেরিন সায়েন্স অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি বিষয় না বললেই নয় সেটি হলো, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য। প্রকৃতির অপরূপ শোভা আর দৃষ্টিনন্দন অবকাঠামো যে কোনো মানুষকেই বিমোহিত করে। এ ক্যাম্পাসে রয়েছে সারি সারি নারিকেল গাছসহ হরেক রকমের গাছ-গাছালি, ক্যাম্পাসের ভেতরে রয়েছে কয়েকটি প্রশস্ত লেক, যা ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রশাসনিক ভবনের সামনে স্থাপন করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর্য ও ম্যুরাল, সাত বীরশ্রেষ্ঠের আবক্ষ ভাস্কর্য, ‘জয় বাংলা’ নামে একটি মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য। এ ক্যাম্পাসটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এখানে ভিড় জমান।
দুই দশকের ইতিহাসের ধারা লালন-পালন করে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ভবিষ্যতে আরও নামডাক, খ্যাতি হবে, আরও বিখ্যাত ব্যক্তি বের হবেন এখান থেকে। এগিয়ে যাক শিক্ষার্থীদের প্রাণের এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আমরা আশা করছি, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ, নান্দনিক ও অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আমরা গৌরবের সঙ্গে একে একে রজতজয়ন্তী, সুবর্ণজয়ন্তী ও শতবর্ষ উদযাপন করব। পবিপ্রবির কাছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর অনেক প্রত্যাশা। ছাত্রছাত্রীদের চোখে অনেক স্বপ্ন। সেই প্রত্যাশা পূরণে এবং সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব এর শিক্ষক কর্মকর্তা ও ছাত্রছাত্রীদেরই নিতে হবে। দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততায় দিক্ষিত হোক এই ক্যাম্পাসের সব কার্যক্রম, ধাবিত হোক উন্নয়নের মহাসড়কে- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর এটাই কামনা। দেশের অন্যতম সেরা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে এর সব শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর প্রতি রইল প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন। জয়তু, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
মুহাম্মাদ ইমাদুল হক ফিরদাউছ প্রিন্স: ডেপুটি রেজিস্ট্রার, পবিপ্রবি ইনোভেশন ডিসেমিনেশন সেন্টার, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
Discussion about this post