নিজস্ব প্রতিবেদক
বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জ অঞ্চলের ১ লাখ ২ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থীর বই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন পাঠ্যবই পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। আজ রোববার (১৭ জুলাই) দুপুরে সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কিছু এলাকায় বন্যার পানিতে শিক্ষার্থীদের বই-পুস্তক নষ্ট হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে তাদের সংখ্যা নিরূপণ করা হয়ে গেছে। আশা করছি, আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন বই বিতরণ করতে পারব।
তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীর মধ্যে এসএসসি ও দাখিল মিলিয়ে সিলেটে ৬৮২ সেট, আর সুনামগঞ্জে ১০ হাজার ৫৮৬ সেট সহ মোট ১১ হাজার ২৬৮ সেট বই দেওয়া হবে। এছাড়া অন্যান্য শ্রেণির বইও দিতে হবে। মাধ্যমিক স্তরের ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম এবং ১০ম শ্রেণি ও ভোকেশনাল স্তরে সিলেটে ১৪ হাজার ৭৭৯ সেট ও সুনামগঞ্জে ৪২ হাজার ৭৫৫ সেট সহ মোট ৫৭ হাজার ৫৩৪ সেট বই লাগবে। ইবতেদায়ি ও দাখিল ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম এবং ১০ম শ্রেণি ও ভোকেশনাল স্তরে সিলেটে ১০ হাজার ১৪০ সেট ও সুনামগঞ্জে ২৩ হাজার ৫৫৮ সেট সহ মোট ৩৩ হাজার ৬৯৮ সেট বই লাগবে। সব মিলিয়ে সিলেটে ২৫ হাজার ৬০১ এবং সুনামগঞ্জে ৭৬ হাজার ৮৯৯ সেট বই দিতে হবে। কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চল এবং নরসিংদী জেলার উদ্বৃত্ত থেকে এসব বই দিয়ে দিতে পারব আশা করছি। এরপরও চাহিদা থাকলে এনসিটিবির বাফার স্টক থেকে দিয়ে দেব।
মন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির পরে বিশ্বজুড়ে অসহিষ্ণুতা বেড়েছে। করোনাকালীন মানুষ অনেক ধরনের টেনশন ও ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। সে কারণে মনোবিজ্ঞানিরাও বলছেন, করোনা পরবর্তী সময়ে মানুষ অসহিষ্ণু আচরণ করছে। বয়:সন্ধিকালে মানুষের মাঝে আচরণগত সমস্যা তৈরি হয়ে যায়। এই বয়সে যারা করোনাকালীন ট্রমায় পড়েছে, তাদের মধ্যে অসহিষ্ণুতা থেকেই যাচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, এ ঘটনাগুলো না ঘটে। কিছু কিছু ঘটনা তাও ঘটে যাচ্ছে। আমরা চাইনা শিক্ষকের মর্যাদা ভুলুণ্ঠিত হোক। যেখানেই এমন ঘটনা ঘটছে, সেখানেই তদন্ত হচ্ছে, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ সব জায়গাতেই বাড়ছে। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা রেখেই করোনা মোকাবিলা করার চেষ্টা করব। ৫-১১ বছর বয়সীদের রেজিস্ট্রেশনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এ কার্যক্রম শেষ করে আমরা টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করব।
শিক্ষা আইনের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষা আইন ক্যাবিনেটে গেছে, তারা এটি কবে ক্যাবিনেটে তুলবেন, সেটা তাদের বিষয়। এ বিষয়ে আমরা এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না।
নতুন কারিকুলামে কোচিং সেন্টার থাকবে কি না প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোচিং বিষয়টা সারা পৃথিবীতে আছে। নানান বিষয়ে কোচিং আছে। কোচিং খারাপ কিছু নয়। সব শিক্ষার্থীর মেধা একই রকম নয়, তাদের সবার ক্লাসে পড়া আত্মস্থ করার সক্ষমতাও সমান নয়, আবার সব শিক্ষার্থীর বাড়িতে দক্ষ, শিক্ষিত বাবা-মা আছেন বা তাদের সময় আছে, সেটাও সবার ক্ষেত্রে সমান নয়। তাই কিছু শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়তেই পারে, তার একটু সহযোগিতার প্রয়োজন হতেই পারে। আমরা চেষ্টা করব যতদূর সম্ভব প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। শিক্ষকরাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে রেমিডিয়াল ক্লাস, এক্সট্রা ক্লাস নেবেন। অভিভাবকদের সম্মতিতে একটা ছোট্ট ফি নিয়ে সেই ক্লাসগুলো পরিচালনা করা হবে।
তিনি বলেন, এর বাইরে কোনো শিক্ষক যদি প্রাইভেটলি কোচিং করাতে চান, সেটি তিনি করতে পারবেন। তবে, কোচিংয়ে পড়লে নম্বর বেশি দেবেন, পরীক্ষায় পাস করাবেন, না পড়লে পাস করাবেন না; এমনটা অনৈতিক। সেজন্যই বলেছি, কোনো শিক্ষক তার নিজের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে কোচিং করাতে পারবেন না।
এটা মনিটরিং কে করবে জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক, ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবকরা এটা মনিটরিং করবেন। সঙ্গে সবার সচেতন প্রয়াস থাকতে হবে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: আবু বকর ছিদ্দীক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরি প্রমুখ।
Discussion about this post