শিক্ষার আলো ডেস্ক
আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর, বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সাহিত্যিক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ৮৪তম জন্মদিন আজ। ১৯৪০ সালের ২৫ জুলাই তিনি কলকাতার পার্ক সার্কাসে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৮ সালে অধ্যাপক সায়ীদ প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের হাজার হাজার স্কুলপড়ুয়াকে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সাহায্য করছেন তিনি।
অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের কচুয়া থানার কামারগাতি গ্রামে। তার বাবা আযীমউদ্দিন আহমদ ছিলেন একজন স্বনামধন্য শিক্ষক। মায়ের নাম করিমুন্নেসা। বাবার শিক্ষকতা হিসেবে অসামান্য সাফল্য ও জনপ্রিয়তা শৈশবেই তাঁকে এ পেশার প্রতি আকৃষ্ট করে।
তিনি ১৯৬১ সালে শিক্ষকতা দিয়েই কর্মজীবন শুরু করেন। মুন্সীগঞ্জ হরগঙ্গা কলেজে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর সিলেট মহিলা কলেজ, রাজশাহী কলেজ ও ঢাকায় ইন্টারমিডিয়েট টেকনিক্যাল কলেজে (বর্তমানে ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ) শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি ঢাকা কলেজে যোগদান করেন। এখানেই তিনি শিক্ষকতা জীবনের স্বর্ণযুগ অতিবাহিত করেন।
আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের ব্যক্তিত্বের প্রায় সব দিক সমন্বিত হয়েছে তাঁর সংগঠক সত্তায়। ‘আলোকিত মানুষ চাই’- এ মন্ত্রে সারাদেশে বই পড়া আন্দোলনের অগ্রযাত্রী হিসেবে প্রায় তিন দশক ধরে তিনি রয়েছেন সংগ্রামশীল। ষাটের দশকে বাংলাদেশে যে নতুন ধারার সাহিত্য আন্দোলন হয়, তিনি ছিলেন তাঁর নেতৃত্বে।
বাংলাদেশে টেলিভিশনের সূচনালগ্ন থেকে মনস্বী ও রুচিবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হন আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ। টেলিভিশনের বিনোদন ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় তিনি পথিকৃৎ ও অন্যতম সফল ব্যক্তিত্ব। নানা ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সাহিত্য চর্চায় নিবিষ্ট। কবিতা, প্রবন্ধ, ছোট গল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে তাঁর গ্রন্থভাণ্ডার যথেষ্ট সমৃদ্ধ। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ২৭টি।
সামাজিক আন্দোলনে উদ্যোগী ভূমিকার জন্য তিনি দেশব্যাপী অভিনন্দিত। ডেঙ্গু প্রতিরোধ আন্দোলন, পরিবেশ দূষণবিরোধী আন্দোলনসহ নানা সামাজিক আন্দোলন তাঁর নেতৃত্বে প্রাণ পেয়েছে।
কর্মময় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে একুশে পদক, র্যামন ম্যাগস্যাসে, জাতীয় টেলিভিশন, বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কারসহ নানা পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের শিক্ষা বিস্তারে অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০৫ সালে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। প্রবন্ধে অবদানের জন্য তিনি ২০১২ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এ ছাড়া জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার সহ অসংখ্য পুরস্কার রয়েছে তার ঝুঁলিতে। লিখেছেন কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে ৫৭টি গ্রন্থ।
পুরস্কার: জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার (১৯৭৭), মাহবুব উল্লাহ ট্রাস্ট পুরস্কার (১৯৯৮), রোটারি সিড পুরস্কার (১৯৯৯), বাংলাদেশ বুক ক্লাব পুরস্কার (২০০০), এম এ হক ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক (২০০১), রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (২০০৪), একুশে পদক (২০০৫), ডা. ইব্রাহীম স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০০৬), শেল্টেক্ পদক (২০০৬), পরিবেশ পদক (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, ২০০৯), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৯), চ্যানেল আই আনন্দ আলো পুরস্কার (২০১০), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক পুরস্কার (২০১১), কাজী আজাহার আলী স্মৃতি স্বর্ণপদক (২০১১), বাংলা একাডেমী পদক (২০১১)।
প্রকাশনা : অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আব সায়ীদ কবিতা, প্রবন্ধ, ছোটগল্প, নাটক, অনুবাদ, জার্নাল, জীবনীমূলক বই ইত্যাদি মিলিয়ে ৫৭টি গ্রন্থ লিখেছেন। সেগুলো হলো- দ্যাগ হ্যামারশোল্ড (অনুবাদ) নওরোজ কিতাবিস্তান (১৯৬৯), দুর্বলতায় রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য প্রবন্ধ মুক্তধারা (১৯৭৬), শৃঙ্খলিত প্রমিথিউস বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৮২), মৃত্যুময় ও চিরহরিৎ ঋদ্ধি (১৯৮৮)/মাওলা ব্রাদার্স (২০০৮), উত্তর প্রজন্ম শিল্পতরঙ্গ (১৯৯২) প্রকাশনী/মাওলা ব্রাদার্স (২০০৮), বিস্রস্ত জর্নাল সাহিত্য প্রকাশ (১৯৯৩)/সময় প্রকাশন (২০১৪), বিদায়, অবন্তী, পার্ল পাবলিকেশন (১৯৯৫), রোদনরূপসী বর্ণায়ন (১৯৯৬)/সময় প্রকাশন (২০০৮), যুদ্ধযাত্রা কৃষ্টি প্রকাশনী (১৯৯৭), খরযৌবনের বন্দী পার্ল পাবলিকেশন (১৯৯৮), নিষ্ফলা মাঠের কৃষক মাওলা ব্রাদার্স (১৯৯৯), রস্ট্রাম থেকে (১ম খন্ড) মাওলা ব্রাদাসর্ (২০০০), বন্ধ দরজায় ধাক্কা মাওলা ব্রাদার্স (২০০০), নিউইয়র্কের আড্ডায় সুবর্ণ প্রকাশন (২০০১), মুখোমুখি মাওলা ব্রাদার্স (২০০২), ভালবাসার সাম্পান মাওলা ব্রাদার্স (২০০২), রস্ট্র্রাম থেকে (২য় খন্ড) দিব্যপ্রকাশ (২০০৩), সংগঠন ও বাঙালি দিব্য (২০০৩)/মাওলা ব্রাদার্স (২০১৩), বহে জলবতী ধারা (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০০৩), আমার উপস্থাপক জীবন সময় প্রকাশন (২০০৫), নদী ও চাষীর গল্প সময় প্রকাশন (২০০৬), ব্রাহ্মণের বাড়ির কাকাতুয়া অনন্যা (২০০৭), বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ও আমি মাওলা ব্রাদার্স (২০০৭), অপ্রস্তুত কলাম সময় প্রকাশন (২০০৮), কথোপকথন অন্য প্রকাশ (২০০৯), গণতন্ত্র ও নিরঙ্কুশ ক্ষমতা মাওলা ব্রাদার্স (২০০৯), ওড়াউড়ির দিন (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১০), বহে জলবতী ধারা (২য় খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১১), অন্তরঙ্গ আলাপ সময় প্রকাশন (২০১২), স্বপ্নের সমান বড় সময় প্রকাশন (২০১২), গল্পসল্প সময় প্রকাশন (২০১৪), স্বনির্বাচিত প্রবন্ধ ও রচনা অনন্যা (২০০১), গল্প সংগ্রহ অনন্যা (২০০৩), সেরা লেখা (১ম খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০০৭), সেরা লেখা (২য় খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০০৮), কিশোর সমগ্র শব্দশৈলী (২০০৯), রৌদ্র ও প্রকৃতির কাব্য মাওলা ব্রাদার্স (২০০৯), রৌদ্র ও প্রকৃতির কাব্য মাওলা ব্রাদার্স (২০০৯), আমার বোকা শৈশব সময় প্রকাশন (২০১১), বক্তৃতা সংগ্রহ (১ম খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১৩), বক্তৃতা সংগ্রহ (২য় খন্ড) সময় প্রকাশন (২০১৩), সাক্ষাৎকার সংগ্রহ (১ম খন্ড) মাওলা ব্রাদার্স (২০১৩), রচনা সমগ্র (১ম খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০০৬), রচনা সমগ্র (২য় খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০০৮), রচনা সমগ্র (৩য় খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০০৮), রচনা সমগ্র (৪র্থ খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০১০), রচনা সমগ্র (৫ম খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০১১), রচনা সমগ (৬ষ্ঠ খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০১১), রচনা সমগ্র (৭ম খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০১৩), রচনা সমগ (৮ম খন্ড) অন্য প্রকাশ (২০১৪), সাম্প্রতিক ধারার গল্প সিটি লাইব্রেরী (১৯৬৪)/বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (২০০৭), এক দশকের কবিতা নলেজ হোম (১৯৭৫), সাম্প্রতিক ধারার প্রবন্ধ মুক্তধারা (১৯৭৬), কবিতা ও অন্যান্য: খান মোহাম্মদ ফারাবী (সম্পাদনা) জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী (১৯৭৬), মধ্যযুগের শ্রেষ্ঠ বাংলা কবিতা (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯০), শ্রেষ্ঠ কবিতা: হেমচন্দ্র বন্দোপাধ্যায় (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯১), সুকান্তের শ্রেষ্ঠ কবিতা (সম্পাদনা) বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র (১৯৯৫)।
টেলিভিশন অনুষ্ঠান: ১৯৬৫ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ টেলিভিশনে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উচ্চ প্রশংসিত বেশ কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: হারজিত (বিনোদনমূলক) ১৯৭৩-৭৪, সপ্তবর্ণা (বিনোদনমূলক) ১৯৭৫-৭৬, আনন্দমেলা (বিনোদনমূলক) ১৯৭৮-৭৯, চতুরঙ্গ (বিনোদনমূলক) ১৯৭৯-৮০, মানচিত্র (শিক্ষামূলক) ১৯৮১-৮২, চারুপাঠ (শিক্ষামূলক) ১৯৯৪-৯৫, সোনালী দরোজা (শিক্ষামূলক) ১৯৯৯-২০০০।
Discussion about this post