অনলাইন ডেস্ক
মীরসরাইয়ে রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কায় ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের কাছে খৈয়াছড়া ঝরনা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, রেললাইন পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাসকে ধাক্কা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতী ট্রেন প্রায় এক কিলোমিটার সামনে নিয়ে যায়। মাইক্রোবাসের যাত্রীরা খৈয়াছড়া ঝরনা দেখতে আসছিলেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী জানান, ট্রেনটি বড়তাকিয়া স্টেশন পার হওয়ার সময় লেবেল ক্রসিংয়ের বাঁশ ঠেলে রেললাইনে উঠে যায় মাইক্রোবাস। এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
মিরসরাই থানার উপপরিদর্শক সৈয়দ আহমেদ বলেন, ‘ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা মহানগর প্রভাতীর ধাক্কায় মাইক্রোবাসের ১১ যাত্রী নিহত হয়েছেন। ৪ জনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
কিন্তু কীভাবে ঘটনা এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা? ঘটনায় দায়ী কে-কারা? একাধিক সূত্রের দাবি, উপজেলার বড়তাকিয়া রেলস্টেশনের এক কিলোমিটার উত্তরে যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কোনো লাইনম্যান ছিলেন না। সড়কের ওপর লেভেল ক্রসিংয়ে ছিল না সিগন্যাল। এ কারণে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই রেললাইনের ওপর উঠে যায় মাইক্রোবাসটি।
ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ট্রেনটিতে যাত্রী হিসেবে ছিলেন মো. কলিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বৃষ্টি পড়ছিল। মাইক্রোবাসটিও মহাসড়কের দিকে যাচ্ছিল। তার দেখামতে, সড়কের লেভেল ক্রসিংয়ে সিগন্যাল বা প্রতিবন্ধক ছিল না। লাইনম্যানও ছিলেন না। ফলে কোনো বাধা ছাড়াই মাইক্রোবাসটি রেললাইনের ওপর উঠে যায়। তখন মাইক্রোবাসে ট্রেনের ধাক্কা লাগে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আনসার আলী জানান, মহানগর প্রভাতী ট্রেনটি বড়তাকিয়া ক্রস করার সময় লাইনে ওঠে যায় মাইক্রোবাস। এ সময় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাসটি অনেক দূর চলে যায়। তার বক্তব্য, লেভেলক্রসিংয়ের বাঁশ ঠেলে মাইক্রোবাস লাইনে উঠলে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
রেলক্রসিংটির সামনে কথা হয় রেল পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার (জি এম) জাহাঙ্গীর হোসেন সঙ্গে। তিনি বলেন, ক্রসিং এলাকার এক দোকানি জানিয়েছেন দুর্ঘটনার সময় গেটম্যান সাদ্দাম দোকানে বসে ভাত খাচ্ছিলেন। এ ঘটনা সত্য নাকি মিথ্যা এটা যাচাই করার জন্য ইতোমধ্যে তাকে আটক করা হয়েছে। দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গেটম্যান সাদ্দাম জানিয়েছেন ট্রেনের আপ লাইন আসার পর তিনি গেট নামান, এর কিছুক্ষণ পরেই চলে আসে ডাউন লাইন। মাইক্রোবাসের চালক নিজে গিয়ে গেট তুলে দিয়ে লাইনে প্রবেশ করেন। তিনি ভেবেছিলেন আপ লাইন এসেছে, ডাউন লাইন হয়তো আর আসবে না। এটা ভেবে লাইনে ঢোকার কারণে দুর্ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের কেউ কেউ বলছেন, মাইক্রোবাস চালকের অবহেলায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। নামানো গেট তুলে তিনি প্রবেশ করেছেন। আবার অন্যরা বলছেন, ঘটনার সময় গেটম্যান ছিলেন না। থাকলে এমন ঘটনা ঘটতো না। সাইফুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, গেটম্যান ছিলেন না, থাকলে গেট নামানো থাকতো।
মাইক্রোবাসে থাকাদের মধ্যে জিসান, সজিব, রাকিব ও রিদওয়ান কোচিং সেন্টারের শিক্ষক। ৫ জন জোগিরহাট জিয়াউর রহমান কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী, ৬ জন নজুমিয়া হাইস্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাকি ২ চালক ও হেলপার। মিরসরাই ফায়ার সার্ভিস অফিস সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১ জনেরই মৃত্যু হয়েছে।
Discussion about this post