অনলাইন ডেস্ক
চিনের একটি ছোট্ট শহর। উহানের নামটার সঙ্গে হয়ত অনেকেই পরিচিত ছিলেন না। কিন্তু করোনা ভাইরাসের উৎস হিসেবে আজ সেই নাম যথেষ্ট পরিচিত। এরই মধ্যেই উহানের একটি ল্যাবরেটরির নাম বারবার উঠে আসছে আন্তর্জাতিক মহলে। চিনের ল্যাবরেটরি থেকে লিক হয়ে বেরিয়ে গিয়েছে ভাইরাস। এই দাবি বারবার করছে আমেরিকা। এরই মধ্যে প্রকাশ্যে এল উহানের সেই গবেষণাগারের একটি চাঞ্চল্যকর ছবি।
উহানের ‘ইনস্টিটিউট অফ ভাইরোলজি’-র একটি ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, সংরক্ষণের জায়গাটির ‘সিল’ ভাঙা। ওই উহানের গবেষণাগারেই ১৫০০ রকমের ভাইরাসের নমুনা আছে বলে জানা যায়। চিনের সংবাদমাধ্যম ‘চায়না ডেলি’-তে প্রথম এই ছবি প্রকাশিত হয়। ২০১৮-তে প্রকাশিত সেই ছবি সম্প্রতি ট্যুইটারে পোস্ট করা হয়। পরে সেই ছবি ডিলিট করে দিয়েছে ‘চায়না ডেলি।’ সেই ছবির তলায় একজন কমেন্ট করেছেন, ‘এর থেকে তো আমার বাড়ির ফ্রিজেরও ভালো সিল আছে।’
আমেরিকার দাবি, উহানের ওই ল্যাবরেটরি থেকেই লিক হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে ভাইরাস। উহানের মাছের বাজারের সঙ্গে ভাইরাসের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মনে করছে বহু বিশেষজ্ঞ। আমেরিকা এই বিষয়ে রীতিমত তদন্ত শুরু করেছে। মার্কিন সচিব মাইক পম্পেও জানিয়েছেন, কীভাবে গোটা বিশ্বে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ল তার নিখুঁত তদন্ত করবে আমেরিকা।
কী এই ‘ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’?
চিনের ভাইরাস কালচার কালেকশনের কেন্দ্র এই গবেষণাগার। বলা যেতে পারে এটাই্ এশিয়ার বৃহত্তম ভাইরাস ব্যাংক। যেখানে ১৫০০ ধরনের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরিক্ষা চলছে। এবোলার মত ভাইরাস নিয়েও গবেষণা করে এরা। যেসব ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়াতে পারে, সেরকম ভাইরাস রয়েছে এই গবেষণাগারে।
৪২ মিলিয়ন ডলারে তৈরি করা হয় এই ল্যাবরেটরি। ২০১৫ সালে ল্যাব তৈরির কাজ শেষ হয়। ২০১৮ থেকে এখানে গবেষণার কাজ শুরু হয়। এখানে অবশ্য একটি ল্যাবরেটরি রয়েছে, যা ২০১২ থেকে কাজ শুরু করেছে।
এই গবেষণাগার অবস্থিত জঙ্গলে ঘেরা একটি পাহাড়ের তলায়। পাশেই রয়েছে জলাশয়। লোকালয় থেকে দূরে এই গবেষণাগার ৩২০০০ স্কোয়্যার ফুট জায়গা জুড়ে রয়েছে। বিল্ডিং-এর বাইরে একটি সতর্কবার্তা লেখা রয়েছে। সেখানে লেখা আছে, “Strong Prevention and Control, Don’t Panic, Listen to Official Announcements, Believe in Science, Don’t Spread Rumours”.
কী বলছে আমেরিকা?
করোনা ভাইরাস উহানের ল্যাব থেকেই ছড়িয়েছিল কিনা শুক্রবার সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, “আমরা এটার দিকে নজর রেখেছি, আরও বহুলোক এর দিকে নজর রেখেছে। এটা ক্রমেই বোঝা যাচ্ছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, “তাঁরা(চিন) একটি নির্দিষ্ট ধরণের বাদুড়ের কথা বলেছেন, কিন্তু ওই বাদুড় ওই এলাকায় ছিলই না।” তিনি বলেন, ওই এলাকায় বাদুড় বিক্রি হয়নি, সেটা বিক্রি হয়েছিল ৪০ মাইল দূরে।
এর আগের দিনই ফক্স নিউজ জানিয়েছিল, মারাত্মক ভাইরাসটি উহানের একটি ল্যাব থেকে ‘পালিয়েছে’ কিনা সে সম্পর্কে আমেরিকা পুরো জোর দিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পরীক্ষাগারগুলি ও রোগের প্রকোপ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছে।
ভাইরাসের উৎস প্রসঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “অনেক অদ্ভুত জিনিস ঘটছে, কিন্তু অনেক তদন্তের কাজও চলছে এবং আমরা এটা খুঁজে বার করছি।” ট্রাম্প বলেন, “আমি শুধু এটুকু বলতে পারি, এটা যেখান থেকেই, যে রূপেই আসুক না কেন, তা চিন থেকে এসেছে। আর যার কারণে, বিশ্বের ১৮৪ টি দেশ এর ফল ভুগছে।” পাশাপাশি ট্রাম্প জানিয়েছেন, উহানে অনুদান দেওয়া বন্ধ করবে আমেরিকা। ট্রাম্প বলেন, “ওবামা সরকার তাঁদেরকে ৩.৭ মিলিয়ন ডলার অর্থ অনুদান দিয়েছিল। আমরা সেটা খুব শিগগিরি বন্ধ করে দেব।”
Discussion about this post