অনলাইন ডেস্ক
পণ্য রফতানিতে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। চলতি জুলাইয়ে রফতানিতে আয় হয়েছে ৩৯৮ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ এবং লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) মঙ্গলবার (২ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
অপরদিকে গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্সও এসেছে জুলাইতে। এ মাসে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী যা প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা। গত সোমবার রেমিট্যান্সের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে জানা গেলো এ তথ্য।বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, একক মাস হিসেবে ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ডলারের এই অঙ্ক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের মে’তে ২১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।
করোনার অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থির পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশের রফতানিতে এই সাফল্য দেশের অর্থনীতির জন্য আশা জাগানিয়া লক্ষণ হিসেবে মনে করছেন রফতানিকারকরা।
মাঝে কোরবানির ঈদের ছুটির কারণে আট-দশ দিন পোশাক কারখানাসহ অন্য সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার পরও অর্থনীতির এই সূচকের সাফল্যকে ইতিবাচক লক্ষণ হিসেবে দেখছেন তারা।
ইপিবির তথ্যমতে, বাংলাদেশ জুলাই মাসে প্রধান রফতানি খাত তৈরি পোশাকে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া, প্লাস্টিক পণ্যে ৪৪ দশমিক ৩২ শতাংশ, ম্যানুফ্যাকচার্ড কমোডিটিজে ১৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ, চামড়াজাত পণ্যে ৯ দশমিক ৮২ শতাংশ, তৈরি পোশাকে ১৬ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং পাটজাত পণ্যে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
নিট ও ওভেন মিলিয়ে ৩৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে জুলাইয়ে। যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
যদিও কৃষি, হস্তশিল্প ও কেমিক্যাল পণ্য রফতানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় কমেছে।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানি আয়ের লক্ষ্য ধরেছে সরকার।
ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ১০ হাজার ডলার। এ খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে পাট খাত থেকে রফতানি আয় তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩ শতাংশ কম এসেছিল।
এ বছর অন্যান্য খাতের মধ্যে জুলাইয়ে ৬ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ৯ কোটি ৫৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের হোম টেক্সটাইল, ৯ কোটি ৯৪ লাখ ১০ হাজার ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে।
হিমায়িত মাছ রফতানি থেকে আয় হয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ওষুধ রফতানি থেকে আয় হয়েছে ১ কোটি ৩১ লাখ ৭০ হাজার ডলার।
স্পেশালাইজড টেক্সটাইল রফতানি থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ ৩০ হাজার ডলার, বাইসাইকেল থেকে ১ কোটি ১৭ লাখ ২০ হাজার ডলার, ক্যাপ ও টুপি থেকে ৩ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার, প্লাস্টিক পণ্য ১ কোটি ৪৬ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং কুটিরশিল্প রফতানি থেকে ২৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ।
অপরদিকে গত জুনের তুলনায় এ বছরের জুলাইয়ে প্রায় ২৬ কোটি ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। জুনে এসেছিল ১৮৩ কোটি ৭২ লাখ ডলার। মে’তে ১৮৮ কোটি ৫৩ লাখ ডলার।
এছাড়া চলতি বছরের জুলাইয়ে আগের বছরের জুলাইয়ের তুলনায় ২২ কোটি ৫৪ লাখ ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে।
গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসীরা পাঠিয়েছিলেন ১৮৭ কোটি ১৫ লাখ ডলার।
তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ (২১ দশমিক ৩ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন। যা আগের ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ১১ শতাংশ কম।
২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছিল দুই হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ (২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন) ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, প্রবাসীরা এখন ডলারের রেট বেশি পাচ্ছেন। এছাড়া ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ করেছে। এ কারণে রেমিট্যান্স বেড়েছে। আশা করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।
দেশের রফতানিকারকরা বলছেন, বিদ্যমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সমগ্র বিশ্বে যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। এতে সেসব দেশের মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বেড়েছে। যার কারণে তারা নিত্যপণ্যের বাইরে অন্য পণ্যের ক্রয় কমিয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বড় বাজারই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো। সেখানে বিক্রি কমলে প্রভাব তৈরি পোশাকের রফতানিতে পড়বেই।
তারপরও চলতি জুলাইয়ে নিট ও ওভেন মিলিয়ে ৩৩৭ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৬ দশমিক ৬১ শতাংশ বেশি।
গত বছরের জুলাইয়ে ২৮৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি হয়েছিল। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে পোশাক খাতে রফতানি প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় সাড়ে ৩৫ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের নিট পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম জানিয়েছেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, এটা আশপাশের দেশগুলোর জন্যও সুসংবাদ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে প্রতিটি দেশই যখন রফতানি আয় এবং প্রবাসী আয়ে ধস সামলাচ্ছে, তখন দুটি সূচকেই বাংলাদেশের সাফল্য আমাদের সাহসী করেছে। ভবিষ্যতে আর পেছনে তাকাতে হবে না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জানিয়েছেন, আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশের রফতানি আয় বাড়বে বলেই মনে হচ্ছে। যুদ্ধের উত্তেজনাও কমতে শুরু করেছে বলে শুনছি। আমেরিকান ক্রেতারা নাকি বাংলাদেশে আসছেন। ভিয়েতনাম থেকেও অর্ডার আসছে। এটি শুভ লক্ষণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জি এইচ হাবিব জানিয়েছেন, বিশ্বের এই সংকটময় মুহূর্তে বাংলাদেশ রফতানি আয় ও প্রবাসী আয়ে যে সাফল্য দেখিয়েছে তা অর্থনীতিকে আরও চাঙ্গা করবে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের রফতানি খুব একটা কমবে না। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি বাড়লেও অর্থনীতিতে সংকট নেই। তবে যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে ইউরোপ। সুসংবাদ হচ্ছে, যুদ্ধ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। সেটা হলে বাংলাদেশের দুঃশ্চিন্তার কারণ নাই। সৌজন্যে-বাংলা ট্রিবিউন
Discussion about this post