নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাস করা মৌলভীবাজারের সেই সন্তোষ চাকরি পেয়েছেন মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে জুনিয়র অফিসার পদে । রোববার থেকে কর্মজীবন শুরু হবে তার। ব্যাংকের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের পক্ষ থেকে সামাজিক দায়বদ্ধতা অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজারের শমশেরনগর কানিহাটি চা-বাগানের শ্রমিক মায়ের ছেলে সন্তোষ। নিয়ম অনুযায়ী লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর সন্তোষের হাতে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। রোববার থেকে এক মাসের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হবে সন্তোষের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র সন্তোষ। কিছুদিন আগে এমবিএ শেষ করেছেন।
সন্তোষ রবি দাস বলেন, প্রতিবেদন প্রকাশের পর অনেকেই যোগাযোগ করেছে। সব কিছু বিবেচনায় এই চাকরিটি উপযোগী বলে মনে হয়েছে। মা কমলি রবিদাস বলেন, ‘তাইনে (স্বামী) মারা যাওয়ার পর কষ্টের শুরু হইছে। ভাবছিলাম, যে পর্যন্ত মাটিতে না যাইব দুঃখ যাইব না। চাকরি লইয়া যেন বাচ্চা সুখী হইতে পারে।’
এর আগে চা–শ্রমিক মাকে নিয়ে আবেগঘন পোস্ট দিয়েছিলেন রবি দাস। সেই পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হলে অনেক প্রতিষ্ঠান তাকে চাকরি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সন্তোষের মায়ের জন্য এক লাখ টাকা উপহার পাঠিয়েছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনিও খোঁজখবর নিয়েছেন। সরকারি খাদ্য সহায়তা নিয়ে গিয়েছিলেন কমলগঞ্জের ইউএনও সিফাত উদ্দিন।
জানা গেছে, মৌলভীবাজারের শমসেরনগরে ফাঁড়ি কানিহাটি চা বাগানের এক শ্রমিক পরিবারে জন্ম সন্তোষ রবিদাস অঞ্জনের। জন্মের মাস ছয়েকের মাথায় বাবাকে হারিয়েছিলেন। মা কমলি রবিদাস চা বাগানের শ্রমিক। তখন মজুরি পেতেন দৈনিক ১৮ টাকা। সেই সময় ছেলেকে অন্যের বাসায় রেখে তিনি চলে যেতেন চা বাগানে।
ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন সন্তোষ। ২০১৩ সালে ভর্তি হন ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজে। সন্তোষের মায়ের মজুরি ছিল তখন ১০২ টাকা। তিনি ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ছেলের ভর্তির টাকা, ইউনিফর্ম আর বই-খাতা কিনে দিয়েছিলেন। ২০১৪ ডিসেম্বরে ছিল সন্তোষের এইচএসসির নিবন্ধন। তাঁর মা কমলি রবি দাস তখন ৫০ টাকার একটি নোট দিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেছিলেন, ‘দেহি, কেউ ধার দেয়নি রে, বাপ। ’
কলেজের এক শিক্ষকের কাছ থেকে ধার নিয়ে সেবার নিবন্ধন ফি দেওয়া হয়। এইচএসসির পর ভর্তি পরীক্ষার কোচিং। কমলি তখন আবার ঋণ নিলেন ব্যাংক থেকে। লোনের কিস্তি পরিশোধে বাসা থেকে অনেক দূরে গিয়ে বালু শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। এভাবে খেয়ে না খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ার সুযোগ পান সন্তোষ।
Discussion about this post