শেরপুর প্রতিনিধি , বাংলা ট্রিবিউন
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের ইয়ার আলীর ছেলে নজিমুদ্দিন। বয়স ৮০ বছর। ভিক্ষা করে সংসার চালান তিনি। নিজের বসত ঘর মেরামত করার জন্য দুই বছরে ভিক্ষা করে জমিয়েছেন ১০ হাজার টাকা। কিন্তু এ টাকা দিয়ে তার নিজের ঘর মেরামত না করে ওই টাকা দিলেন ঝিনাইগাতীর কর্মহীনদের খাদ্য সহায়তার জন্য খোলা তহবিলে। মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের বাতিয়াগাঁও এলাকায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে তিনি এ টাকা তুলে দেন ।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে ঘরবন্দি কর্মহীন মানুষের সহায়তায় গঠিত ইউএনওর ত্রাণ তহবিলে দুই বছর ধরে জমানো নগদ ১০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে এখন আলোচনায় শেরপুরের ঝিনাইগাতীর ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিন (৮০)। অনুদান দেওয়া ভিক্ষুক নাজিমুদ্দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরকারি জমিতে একটি পাকা ঘর, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে একটি দোকান ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ও পরিবারের ভরণপোষণ ও চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে।
বুধবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে নাজিমুদ্দিনকে সংবর্ধনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। এ সময় জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে উত্তরীয় পরিয়ে দেন এবং নগদ ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। এর আগে ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ নিজ গাড়িতে করে পাশে বসিয়ে তাকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
জেলা প্রশাসক জানান, ‘নাজিমুদ্দিনের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে তাকে জমিসহ ঘর তৈরি করে দেওয়া হবে। তার কর্মসংস্থানের জন্য একটি দোকান করে দেওয়াসহ তাকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যখন হতাশ হয়ে যাই, তখনই এধরনের লোকগুলো আমাদের সাহস দেন।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নাজিমুদ্দিন বলেন, ‘কোনোকিছু পাওয়ার আশায় আমি দান করিনি। আমার মনে হয়েছে, দেশের মানুষের এখন খুব বিপদ। আমার ঘর পরে হলেও চলবে। তাই আমি আমার জমানো সব টাকা ইউএনও’র তহবিলে দিয়েছি। আমি এতে খুব তৃপ্ত।’
নাজিমুদ্দিন জানান, তার তিন ছেলে ও তিন মেয়ে রয়েছে। ভিক্ষা করে সংসার চালিয়ে গত দুই বছরে তিনি ১০ হাজার টাকা জমান। ঘর মেরামতের জন্য এই টাকা জমিয়েছিলেন তিনি। এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আজ যেভাবে আমাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে এজন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকের প্রতি খুব খুশি।’
এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এহছানুল হক মামুন, ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবেল মাহমুদ, শেরপুর প্রেস ক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মেরাজ উদ্দিন, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সাবিহা জামান শাপলা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২১ এপ্রিল) দুপুরে ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধিগাঁও গ্রামের মৃত ইয়ার আলীর ছেলে নাজিমুদ্দিন তার জমানো ১০ হাজার টাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুবেল মাহমুদের হাতে তুলে দেন। বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসে। পরে প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব কথা বলেন শেরপুরের জেলা ও ঝিনাইগাতী উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। এসময় তিনি ওই নাজিমুদ্দিনকে ঘর তৈরি করে দেওয়াসহ সার্বিক সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন।
Discussion about this post