শিক্ষার আলো ডেস্ক
ছাত্র রাজনীতিকে নিজস্ব ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে বেশ কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। সম্প্রতি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকে ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হওয়ায় এই ঘোষণা দেয় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
এআইইউবি, ইস্ট ওয়েস্ট , ব্র্যাক ও ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের অবস্থানের কথা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রকাশ করেছে।
এআইইউবি’র (আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ) ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানিয়ে দিয়েছে , ক্যাম্পাসে যেকোনো রকম দলীয় সংগঠন চর্চা বা কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে যেকোনো ধরনের সংগঠন গঠনের জন্য ব্যবস্থাপনার পূর্বানুমতি প্রয়োজন।
এআইইউবি ব্যবস্থাপনার অনুমতি ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বা বাইরে যেকোন কার্যকলাপ/প্রোগ্রামে এআইইউবি-এর নাম, লোগো বা অন্য কোনো প্রতীক ব্যবহার নিষিদ্ধ।নোটিশে আরও বলা হয়, আচরণবিধি লঙ্ঘন একটি বড় অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হবে। এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থগিত বা বরখাস্ত করা হতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ক্যাম্পাসে রাজনীতির চর্চা শুরু হলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে ভাবছেন বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা। তাই এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছেন অনেকেই। মূলত এর প্রেক্ষিতেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় তাদের অবস্থান স্পষ্ট জানিয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ই-মেইলের মাধ্যমে জানিয়েছে, ‘আমরা অনেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে আমাদের অবস্থান তুলে ধরার অনুরোধ পেয়েছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় একটি রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান এবং কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা অবশ্যই, বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের ক্লাব বা সংস্থার সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত পছন্দের অধিভুক্তি বা সংগঠনগুলো অনুসরণ করতে পারার স্বাধীনতা আছে। ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির লোগো যোগাযোগ বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনও সাংগঠনিক অধিভুক্তি বা অন্য কোনও কার্যক্রম প্রচারের জন্য ব্যবহার করা যাবে না।’
রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি উন্মুক্ততা, অন্তর্ভুক্তি, উৎসাহ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার মূল্যবোধের জন্য নিবেদিত। আমরা সবাই জানি যে নেতৃত্বের গুণমান বিকাশের জন্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত করার জন্য আমাদের অনেকগুলো ক্লাব রয়েছে। একই সময়ে, বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না।’
‘বিশেষত, বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি সরকার অনুমোদিত ট্রাস্টি বোর্ড দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে নিবন্ধের স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংগঠনের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের সঙ্গে কোনও কার্যক্রম করা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যরা অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মূল্যবোধ অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা বা সমিতির ব্যক্তিগত স্বার্থ অনুসরণ করতে স্বাধীন।’ ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির লোগো কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমোদন ছাড়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞার কথাও জানানো হয় নোটিশে।
একটি বেসরকরী বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করছে অসাধু ও স্বার্থপর কিছু রাজনীতিবিদ। রাজনীতির সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে সন্ত্রাস-নির্ভর রাজনীতিবিদরা ছাত্রদের ব্যবহার করছে। যার পরিণতিতে, আজকের ছাত্র সমাজের একটি বড় অংশ মাদকাসক্ত, অস্ত্রবাজ, চাঁদাবাজ, ইভটিজার। তবে এখনও আদর্শবান আছে কিছু অংশ।হ্যাঁ- যদি কেউ রাজনীতি করতেই চায়, তবে লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে নিজেকে নিয়োজিত করুক। কিন্তু বর্তমানে ছাত্র রাজনীতির এমন কোন ভাল দিক নেই যে, এটাকে চালু রাখতে হবে।
Discussion about this post