সাঈদ চৌধুরী
১৯৬৮ থেকে বেশ লম্বা পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। শুরুতে প্রকৌশল কলেজ, এরপর বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি এবং সবশেষে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) ও খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এর গল্পটা এমন। বাংলাদেশে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা-গবেষণার অন্যতম শীর্ষে অবস্থান করছে দেশের এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষা বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৯৬৮ সালে প্রকৌশল কলেজ হিসেবে মূলত এদের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। ১৯৮৬ সালে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনার সেই প্রকৌশল কলেজকে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (বিআইটি) করা হয়। এই প্রতিষ্ঠান তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ২০০৩ সালের ১ সেপ্টেম্বর।
গুগল, মাইক্রোসফট, ইন্টেল, অ্যাপল, ফেসবুক, অ্যামাজন কিংবা টেসলারের মতো বড় বড় কোম্পানি থেকে শুরু করে বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে আছে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। বাংলাদেশ থেকে এসব কোম্পানিতে যোগদানকারীদের তালিকা করলে সহজেই পাওয়া যায় এ তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নাম। এছাড়া গবেষণা কাজেও রয়েছে নানা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য।
২০০৩ সালের পর প্রতি বছরে চুয়েট, রুয়েট ও কুয়েটে উদযাপিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। স্ব-স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে দিবসটি বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি নেয়া হয়। এর মধ্যে থাকে আনন্দ র্যালি, পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, ডকুমেন্টারি উপস্থাপন, রক্তদান, বৃক্ষরোপণ, শিক্ষক বনাম শিক্ষার্থী প্রীতি ফুটবল ম্যাচ ও পুরস্কার বিতরণ প্রভৃতি।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)
চ’তে চট্টগ্রাম, চ’তে চুয়েট যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। ‘চুয়েট’ নামক ছোট্ট শব্দটি মুখ ফসকে বের হলেও এরমধ্যে লুকিয়ে আছে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে রাউজান উপজেলার পাহাড়তলি ইউনিয়নের চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের পাশে অবস্থিত চুয়েট।
দক্ষ প্রকৌশলী গড়ার পাশাপাশি গবেষণা কাজে প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে নানা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রতিযোগিতায় সাফল্য। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক সংগঠন আমেরিকান কনক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) কর্তৃক আয়োজিত কনক্রিট প্রজেক্ট শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় গতবছরের ন্যায় এবারও বিজয়ী হয়েছে চুয়েটের একদল শিক্ষার্থী। তারা হলেন, মো. আকরাম হোসেন ও অমিত মল্লিক। উভয়েই চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রোবটিকস চর্চার ক্ষেত্রেও প্রায়ই দেশ–বিদেশ থেকে নিয়ে আসছেন পুরস্কার।
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি গবেষণাকাজে শিক্ষকদেরও রয়েছে নানা অর্জন। সম্প্রতি অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স র্যাংকিং- ২০২২ এ বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন চুয়েটের ২৮ শিক্ষক।
এছাড়া সম্প্রতি ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) স্বর্ণপদকের জন্য মনোনীত হয়েছেন বিভাগের অধ্যাপক রিয়াজ আকতার মল্লিক। বাংলাদেশের তাপমাত্রা এবং বৃষ্টিপাত পরিবর্তন প্রবণতা সংক্রান্ত একটি গবেষণা প্রবন্ধের জন্য এই পদক লাভ করেন তিনি।
চুয়েটে এগিয়ে চলছে নানা আধুনিক স্থাপনাশৈলী তৈরির কাজ। বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান সাধনার ও গবেষণা স্বার্থে প্রতিষ্ঠা করে যাচ্ছে নানা স্থাপনা। তারই ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরির মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে ভূমিকা রাখতে তৈরি করা হয় এটি।
চুয়েটের পুরনো ফটক ভেঙ্গে নতুন আঙ্গিকে তৈরি হচ্ছে আধুনিক স্থাপনাশৈলীর প্রধান ফটক। মূল ফটক পেরিয়ে গেলে চোখে পড়বে আধুনিক চুয়েট মেডিকেল সেন্টারের চলমান নির্মাণকাজ। এর থেকে খানিক এগুলোই চোখে পড়বে রোদের ঝলকানিতে চকচকে রূপে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে চুয়েটের ‘স্বাধীনতা চত্বর’।
তার একটু সামনে গেলেই দেখা মেলে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল ও ১৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের দৃষ্টিনন্দন চুয়েটের টিএসসি ক্যাফেটেরিয়া। লাল ইটের এই ভবনে যেন স্থাপনাশৈলীর পুরো রূপ ফুটে উঠেছে। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হচ্ছে আধুনিক স্পোর্টস কমপ্লেক্স ও জিমনেশিয়াম।
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর মিলিয়ে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য চুয়েটে রয়েছে সাতটি আবাসিক হল। ৫টি ছাত্রহল ও ২টি ছাত্রীহল। এছাড়া তৈরি হচ্ছে নতুন ২টি হল।
চুয়েটে বর্তমানে স্নাতক কোর্সে মোট ৯৩১টি আসনে চারটি অনুষদের অধীনে ১২টি বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত বিভাগসমূহ হচ্ছে, পুরকৌশল বিভাগ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, কম্পিউটার কৌশল বিভাগ, তড়িৎ কৌশল বিভাগ, দূর যোগাযোগ ও তাড়িত কৌশল বিভাগ, খনি ও খনন কৌশল বিভাগ, পানিসম্পদ কৌশল বিভাগ, মেকাট্রনিক্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল কৌশল বিভাগ, স্থাপত্য, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল বিভাগ, ম্যাটেরিয়াল্স সায়েন্স প্রকৌশল বিভাগ এবং নিউক্লিয়ার প্রকৌশল বিভাগ প্রভৃতি।
চুয়েটে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা অন্তত ২০টি। সংগঠনগুলো হলো- সাংবাদিক সংগঠন ‘চুয়েট সাংবাদিক সমিতি’, সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘জয়ধ্বনি’, পরিবেশ সচেতনতামূলক সংগঠন ‘গ্রিন ফর পিস’, চুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, চুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, চুয়েট চলচ্চিত্র সংসদ, ভাষা ও সাহিত্য সংসদ চুয়েট, রোবটিক চর্চা ও গবেষণামূলক সংগঠন ‘রোবো মেকাট্রনিক্স অ্যাসোসিয়েশন’ (আরএমএ), মহাকাশ ও রোবটিক গবেষণা সংস্থা ‘অ্যান্ড্রোমেডা স্পেস অ্যান্ড রোবটিক্স রিসার্চ অরগ্যানাইজেশন’ (আ্যসরো), চুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব, চুয়েট কম্পিউটার ক্লাব, চুয়েট স্পোর্টস ক্লাব, বিশ্বের সর্ববৃহৎ পেশাজীবীদের সংগঠন ‘ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রনিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স’ (আইইইই) স্টুডেন্টস বাঞ্চ, ঢাকা কলেজ এসোসিয়েশন, নটরডেমিয়ান এসোসিয়েশন, ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন। এছাড়া রয়েছে নানান আঞ্চলিক সংগঠন।
রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)
দেশের উত্তর-পশ্চিমের দক্ষ প্রকৌশলী গড়ার আরেক কারিগর রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট)। বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম এবং উত্তরাঞ্চলের একমাত্র প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় এটি। রুয়েট ক্যাম্পাস রাজশাহী শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত। তার পাশেই রয়েছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। রুয়েট ক্যাম্পাসের মোট আয়তন ১৫২ একর।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রুয়েটে বাড়ছে গবেষণা, মিলছে সফলতা। তথ্য-প্রযুক্তিতে উদ্ভাবনী কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে গবেষণায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যাধুনিক বেশকিছু ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু চলমান রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রিক্যাল মেশিন অ্যান্ড পাওয়ার সিস্টেম ল্যাব, হাই কম্পিউটিং ল্যাব, আইওটি ল্যাব, ন্যানো টেকনোলজি ল্যাব, মোবাইল গেমস অ্যান্ড অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট ল্যাব, হাইভোল্টেজ ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রাডার অ্যান্ড স্যাটেলাইট ইঞ্জিনিয়ারিং ল্যাব, রোবোটিক্স ল্যাব ইত্যাদি।
গবেষণা জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে রুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেখাচ্ছেন নতুন নতুন উদ্ভাবন। করোনাকালে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে সাশ্রয়ী মূল্যে রুয়েটে দুটি ভেন্টিলেটর তৈরি করে বেশ সাড়া ফেলেছিল। এর মধ্যে একটি ভেন্টিলেটর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে ১০০ প্রজেক্টের মধ্যে প্রতিযোগিতায় পঞ্চম পুরস্কার অর্জন করে। এছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য তৈরি করা অত্যাধুনিক হুইল চেয়ার, দেশীয় প্রযুক্তি ও উপাদান দিয়ে তৈরি তেল সাশ্রয়ী গাড়ি বেশ নজর কাড়ে। সফটওয়ার, ওয়েবসাইট, মোবাইল অ্যাপ তৈরিসহ প্রোগ্রামিংয়ের নানা ক্ষেত্রে সফলতা দেখাচ্ছেন রুয়েটিয়ানরা।
রুয়েটে বর্তমানে ১ হাজার ২৩৫টি আসনে চারটি পূর্নাঙ্গ অনুষদের অধীনে স্নাতক পর্যায়ে মোট ১৪টি বিভাগের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
বিভাগগুলো হলো শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, গ্লাস ও সিরামিক কৌশল বিভাগ, মেকাট্রোনিক্স বিভাগ, ম্যাটেরিয়াল সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, কেমিক্যাল ও ফুড প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, তড়িৎ এবং ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, তড়িৎ ও কম্পিউটার কৌশল বিভাগ, ইলেক্ট্রনিক ও টেলিকমিউনিকেশন কৌশল বিভাগ, পুরকৌশল বিভাগ, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগ, স্থাপত্য বিভাগ, বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন ম্যানেজমেন্ট বিভাগ।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীদের আবাসিক সুবিধা নিশ্চিত করতে ছাত্রদের জন্য ৬টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১টি আবাসিক হল রয়েছে।
সহ-শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনায় রুয়েটে রয়েছে নানা সংগঠন। টিম অগ্রদূত, টিম ক্র্যাক প্লাটুন,
রুয়েট এনালিটিক্যাল প্রোগ্রামিং ল্যাব, অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট, অনুরণন- কালচারাল ক্লাব অফ রুয়েট, আইইইই, রুয়েট ছাত্র শাখা, রোবোটিক সোসাইটি অফ রুয়েট, ইনোভেশন সোসাইটি অফ রুয়েট, রুয়েট ডিবেটিং ক্লাব (রুয়েট ডিসি), রুয়েট ক্যারিয়ার ফোরাম, সোসাইটি অব কম্পিউটার এইডেড ডিজাইনার, রেডিও রুয়েট, নিরাপদ রক্তের বন্ধন (নিরব), রুয়েট সাহিত্য সংঘ (রুসাস), ম্যাথেমেটিকাল সোসাইটি অফ রুয়েট, ধ্রুবক, রুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব, ফটোগ্রাফিক সোসাইটি অফ রুয়েট, রুয়েট চেস ক্লাব, রুয়েট সকার সোসাইটি, টেলিকমিউনিকেশন ক্লাব, ব্লগারস এসোসিয়েশন অফ রুয়েট, অ্যান্ড্রয়েড ডেভেলপার অফ রুয়েট।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় দেবদারু ঘেরা ১৫২ একরের রুয়েট ক্যাম্পাস। দক্ষ প্রকৌশলী হওয়ার পাশাপাশি এ ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা তাদের নানা উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত ব্যাপক সুনাম বয়ে আনছে।
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
অসাধারণ স্থাপনাশৈলী আর গোছানো বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণের খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা শহর থেকে প্রায় ৮কিমি দূরে ফুলবাড়ি গেটে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত।
প্রকৌশল শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ মানের মৌলিক বিজ্ঞানের উচ্চতর শিক্ষা, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কর্মসূচির জন্য কুয়েট বেশ এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টির গেট দিয়ে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে KUET লেখা এক দারুণ দৃশ্য।
কুয়েটে প্রত্যেক বিভাগের একটি আলাদা চত্বর রয়েছে। এরকম আলাদা কতোগুলো চত্বর মিলে ক্যাম্পাসের মূল একাডেমিক চত্বরটি গঠিত।
রয়েছে একাডেমিক ভবন, অডিটোরিয়াম কমপ্লেক্স, ছাত্রাবাস, গ্রন্থাগার, শিক্ষক ডরমিটরি ভবনসহ নানা আধুনিক স্থাপনা।
গবেষণা ও উদ্ভাবনে সম্প্রতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ সুফল কুড়িয়েছে কুয়েট। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের দল ‘মহাকাশ’। সেই ‘মহাকাশ’ দলের চার সদস্য ছিলেন কুয়েটের। এছাড়া যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা ফর্মুলা কারের আদলে তৈরি করেন ‘কিলোফ্লাইট আলফা’ নামের রেসিং কার। শিক্ষার্থীরা ‘কিলোফ্লাইট’ নামের একটি দল গঠন করে এ গাড়িটি প্রস্তুত করে বেশ সাড়া ফেলেন। এছাড়াও পরিবেশবান্ধব পাট দিয়ে তৈরি হওয়ায় পাটশিল্পকে নতুন উচ্চতায় নেওয়ার সম্ভাবনা জাগছে।
গবেষণা কাজকে আরো এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাস্তবায়নে কুয়েটে নির্মাণ করা হয়েছে শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার।
শিক্ষার্থীদের অর্জনের সঙ্গে সঙ্গে পিছিয়ে নেই কুয়েটের শিক্ষকরাও। বিশ্বসেরা গবেষকদের নিয়ে র্যাংকিং তালিকায় স্থান করেছে কুয়েটের ৩৪জন শিক্ষক। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা এডি সায়েন্টিফিক ইনডেক্স ২০২১ সালের এই তালিকায় স্থান করে নেন তারা।
কুয়েটে ১ হাজার ৬৫টি আসনে তিনটি অনুষদের অধীনে মোট ১৬টি বিভাগে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলো হলো পুরকৌশল বিভাগ, নগর ও আঞ্চলিক পরিকল্পনা বিভাগ, ভবন প্রকৌশল ও নির্মাণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ, স্থাপত্য বিভাগ, তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিভাগ, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ইলেক্ট্রনিক্স ও টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগ, বায়োমেডিকেল প্রকৌশল বিভাগ, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও প্রকৌশল বিভাগ, যন্ত্রকৌশল বিভাগ, শিল্প প্রকৌশল ও ব্যবস্থাপনা বিভাগ, লেদার প্রকৌশল বিভাগ, টেক্সটাইল প্রকৌশল বিভাগ, শক্তি বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, রসায়ন প্রকৌশল বিভাগ, তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল বিভাগ।
কুয়েটে রয়েছে সাতটি আবাসিক হল (১টি ছাত্রীদের ও ৬টি ছাত্রদের)।
সারাবছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণকে প্রাণবন্ত রাখতে রয়েছে নানা ছাত্র সংগঠন। এগুলো হলো কুয়েট বিজনেস অ্যান্ড এন্ট্রারপ্রেনেউরশিপ ক্লাব, ক্যাডারস, সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে কুয়েট থিয়েটার, অ-আবৃত্তি সংগঠন, ধ্রুপদী, কুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি, কুয়েট ডিবেটিং সোসাইটি, কুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব, স্পেক্ট্রাম, প্রতিধ্বনি, কুয়েট গণিত সংঘ, আইইইই স্টুডেন্ট ব্রাঞ্চ, কুয়েট রোবটিক সোসাইটি ইত্যাদি।
কুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল সাদ বলেন, কুয়েটের সাজানো ক্যাম্পাস শুরু থেকেই সুনামের সঙ্গে শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে৷ কুয়েটের শিক্ষার্থীরা দেশে বিদেশে সফলতার স্বাক্ষর রাখছে। কুয়েটের শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবন ও গবেষণার পাশাপাশি বিভিন্ন সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে বরাবরই দেশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সুনাম ধরে রেখেছে।
এভাবেই দেশের প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় সেরাদের মধ্যে অন্যতম স্থান দখল করে নিয়েছে চুয়েট-রুয়েট-কুয়েট।
লেখক-সাঈদ চৌধুরী, চুয়েট
Discussion about this post