সৈয়দ বায়েজিদ ইমন ও মিনহাজুল ইসলাম
অনেক টানাপড়েন, চড়াই উৎরাই পেরিয়ে টানা ১৩ বছরের আওয়ামী লীগ সরকার। ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ২০০৯ সালের যাত্রা শুরু করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার।
২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে চট্টগ্রামকে প্রকৃত অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জয়ের পর বিভিন্ন মেগা প্রকল্প গ্রহণ করে রেখেছেন সেই প্রতিশ্রুতি।
এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, বঙ্গবন্ধু টানেল, কোরিয়ান ইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোন, মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল ও গভীর সমুদ্রবন্দর, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথ চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প, চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ফ্লাইওভার এবং চট্টগ্রাম বন্দর বে-টার্মিনাল প্রকল্প।
বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর:
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রায় ৭ হাজার একর এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর। যা দেশের বৃহত্তম ইকোনোমিক জোন। প্রায় ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে এই ইকোনমিক জোনে। বিনিয়োগকারী রয়েছেন ১৩৩ জন। নির্মাণাধীন রয়েছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। ধারণা করা হচ্ছে, এ শিল্প নগরে ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। প্রতিবছর প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি হবে এ ইকোনোমিক জোন থেকে।
কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল:
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত হয়েছে উপমহাদেশের প্রথম টানেল। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার, যার সঙ্গে আনোয়ারা ও পতেঙ্গা প্রান্তে আরও ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের কাজ চলমান রয়েছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ও চীনের এক্সিম ব্যাংকের সহযোগিতায় প্রায় ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। কর্ণফুলী টানেল বন্দর নগরীর দক্ষিণাঞ্চলকে যেমন একটি ব্যবসায়িক কেন্দ্রে পরিণত করবে, তেমনি ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে কমাবে দূরত্ব ।
চট্টগ্রাম বন্দর:
বিশ্ব নৌ-বানিজ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে ৮৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ বছর মেয়াদি একটি প্রকল্প প্রণয়ণ করেছে সরকার। বন্দরের ক্যাপাসিটি বৃদ্ধিসহ সার্বিক দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষে ১১ হাজার ৮৯০ কোটি ৩৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে চিটাগাং পোর্ট ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন প্রজেক্ট সম্পন্ন করা হয়েছে। বন্দরের জন্য আরও ৪ হাজার ৬১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ভেসেল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশান সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।
বে-টার্মিনাল:
জোয়ারের সময় শুধুমাত্র ৮ থেকে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারে চট্টগ্রাম বন্দরে। এতে বছরে ৩০ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হয়। বন্দরের চেয়ে ৫-৬ গুণ বড় বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২৪ ঘণ্টায় ১৪ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়তে পারবে এবং বছরে ৪৫ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা যাবে। এর মাধ্যমে বছরে ৪০০ কোটি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প:
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।
বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ:
চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে কর্ণফুলী নদীর তীর ঘেঁষে শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত চার লেনের একটি মেরিন ড্রাইভ বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ করতে যাচ্ছে সরকার। চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেরিন ড্রাইভ নির্মাণ প্রকল্প শীঘ্র শুরু হচ্ছে।
এলিডেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেল:
লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নির্মিত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফ্লাইওভার। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকায় ৫৪ কিলোমিটার দীর্ঘ তিনটি মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে।
ওয়াসার স্যুয়ারেজ ও পানি শোধনাগার প্রকল্প:
চট্টগ্রামের নদীগুলো রক্ষায় প্রত্যেক শিল্প কারখানায় অবশ্যই সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলে নদী দূষণমুক্ত রাখতে সরকার কাজ করছে। রাঙ্গুনিয়ার পোমরা এলাকায় স্থাপিত ওয়াসার ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২’ প্রকল্পে কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে দিনে ১৪ কোটি ৩০ লাখ লিটার সুপেয় পানি সরবরাহ করার সক্ষমতা রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরে ১৬৫ একর জায়গায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চাট্টগ্রাম ওয়াসার স্যুয়ারেজ প্রকল্প চালু হচ্ছে। অপরদিকে কর্ণফুলীর তীরে বোয়ালখালীতে দিনে ৬ কোটি লিটার ধারণক্ষমতার ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প :
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ৫ হাজার ৬১৬ কোটি ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১৭ সালের শুরু করা এ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হলে নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন হবে। এছাড়া নগরীকে জলাবদ্ধতামুক্ত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার কাজ শুরু করছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের সেবা করার ব্রত নিয়ে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বদ্ধ পরিকর। গত ১৩ বছরে চট্টগ্রামে প্রতি সেক্টেরে উন্নয়ন করেছেন। চট্টগ্রামে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছে এবং সেইগুলো ব্যস্তবায়ন করা হয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চট্টগ্রামের সার্বিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব সময় গুরুত্ব দিয়ে এসেছেন। ফলে চট্টগ্রামে এতগুলো মেগাপ্রকল্পের কাজ হয়েছে, হচ্ছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রামের চিত্র পাল্টে যাবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিসহ সব ধরনের উন্নয়নের কথা আগামীকাল ভাষণে প্রধানমন্ত্রী তুলে ধরবেন।সৌজন্যে- বাংলানিউজ
Discussion about this post