অনলাইন ডেস্ক
মুঠোফোনে কল দেওয়ার পর নাম ও পরিচয় দিয়ে প্রথমে নিবন্ধন। পরে নির্দিষ্ট শারীরিক সমস্যার জন্য অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। এ সময় চিকিৎসক সেবাপ্রার্থীকে দেখে সরাসরি চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। ওষুধপথ্য দেওয়া হবে ব্যবস্থাপত্রে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর ‘করোনা সাপোর্ট সিলেট’ নামের এই টেলিমেডিসিন চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়েছে সিলেটে।
মুঠোফোনে সরাসরি ফোন দেওয়া ছাড়াও ওয়েবসাইট ও মুঠোফোনের অ্যাপের মাধ্যমে নাম–পরিচয় নিবন্ধ করে সেবাপ্রার্থীরা সরাসরি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে পরামর্শ নিতে পারবেন। মুঠোফোনে অডিও কলের মাধ্যমেও নেওয়া যাবে চিকিৎসা পরামর্শ। সেবামাধ্যমটির সঙ্গে প্রথম ধাপে যুক্ত হয়েছেন দেশের অভিজ্ঞ অর্ধশত চিকিৎসক।
গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় সিলেট নগরের নাইওরপুল এলাকার অভিজাত এক হোটেলের সম্মেলনকক্ষে এই টেলিমেডিসিন চিকিৎসাসেবা মাধ্যমটির উদ্বোধন করা হয়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও টেলিমেডিসিন সেবার সমন্বয়ক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের উদ্যোগে ‘করোনা সাপোর্ট সিলেট’ নামের টেলিমেডিসিন সেবার সহযোগিতা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এস জে ইনোভেশন, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন দ্য অপটিমিস্ট এবং চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বাংলাদেশে ফিজিশিয়ানস। এ ছাড়া সহযোগিতা করছে হেলথ কেয়ার ফার্মা, বেক্সিমকো, ইউরো ফার্মা ও বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি অ্যাকশন অ্যাগেইনস্ট কোভিড-১৯।
‘করোনা সাপোর্ট সিলেট’-এর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, অনেকেই করোনা পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন রোগে ভুগলেও করোনা সংক্রমণের ভয়ে হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলোয় যাচ্ছেন না। অন্যদিকে, চিকিৎসকদের চেম্বারগুলোও বন্ধ। এমন পরিস্থিতিতে সেবাপ্রার্থীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে সেবাপ্রার্থীরা ঘরে বসেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারবেন। সেবাপ্রাপ্তদের দেওয়া হবে ব্যবস্থাপত্র। এ জন্য সকাল ৮টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিনটি মুঠোফোন নম্বর চালু করা হয়েছে। তিনটি মুঠোফোন নম্বরের মধ্যে ০১৭২১০২৮৯১১ নম্বরে সকাল ৮টা থেকে বেলা ১টা, ০১৭২০২৩০৭৬৭ নম্বরে বেলা ১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা এবং ০১৭২১০৭৯৭৮১ নম্বরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চিকিৎসাসেবার জন্য যোগাযোগ করা যাবে।
মুঠোফোন নম্বরগুলোয় যোগযোগের পর প্রথমে নিবন্ধন শেষে সেবাপ্রার্থীদের শারীরিক সমস্যার ধরনভেদে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়া হবে। এর জন্য কোনো ধরনের ফির প্রয়োজন হবে না। করোনা পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে চিকিৎসাসেবা। এ ছাড়া করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের পরিবহনের জন্য ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্সসেবা দেওয়া হবে।
চিকিৎসাসেবা কার্যক্রমটির সঙ্গে যুক্ত থাকা চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ এহসান উজ জামান খান বলেন, ‘বাইরে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, এমন পরিস্থিতিতে ফোনের মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী সেবাপ্রার্থীদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করানোর। “করোনা সাপোর্ট সিলেট” নামের ওয়েবসাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে চিকিৎসক ও সেবাপ্রার্থী সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত করে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হবে। এতে ঘরে বসেই করোনা ঝুঁকিমুক্তভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবেন সেবাপ্রার্থীরা।’
টেলিমেডিসিন সেবার সমন্বয়ক শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সিলেটে বন্ধ রয়েছে চিকিৎসকদের চেম্বার। এমন পরিস্থিতিতে বেকায়দায় পড়েছেন চিকিৎসাসেবা প্রার্থীরা। চিকিৎসক ও সেবাপ্রার্থীদের নিরাপদ রেখে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে বিশেষজ্ঞ অর্ধশত চিকিৎসক আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। আরও অনেক চিকিৎসক যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। এ উদ্যোগ প্রাথমিকভাবে সিলেটে চালু হয়েছে। এটি সফল হলে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে।’
শফিউল আলম চৌধুরী আরও বলেন, চিকিৎসাসেবা প্রার্থী এবং চিকিৎসক শুধু মুঠোফোনে কথা বলে পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারেন না। এ জন্য ওয়েবসাইট ও অ্যাপটি চালু করা হয়েছে। এতে চিকিৎসক এবং সেবাপ্রার্থী সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে সেবা নিতে পারবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সিলেটের চিকিৎসকদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করেন শফিউল আলম চৌধুরী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এস জে ইনোভেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহেদ ইসলাম, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন ও দিলীপ কুমার রায়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন টেলিমেডিসিন সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পাঁচজন চিকিৎসক এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের তিনজন কর্মী।
Discussion about this post